বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সহ-সভাপতি সুলতানা কামাল বলেছেন, আজকে যারা ক্ষমতায় আছেন তাঁর যৌক্তিভাবে নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের দল বলে দাবি করেন। সেই দলের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক ভবণ ভেঙে হাসপাতাল নির্মাণের মত অবিবেচক সিদ্ধান্ত মেনে নেয়া যায় না। আমরা কেউই হাসপাতাল তৈরির বিপক্ষে নই। আমরা হাসপাতাল বা সরকার কারো বিরোধীতা করতে আসিনি। আমরা চাই ঐতিহ্য রক্ষা করে উপযুক্ত স্থানে হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক। ছাত্রবাস ভবণ রক্ষার লড়াইটি নিজেদের অস্তিত্ব টিকানোর লড়াই।’
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের সুলেমান হলে বাপার উদ্যোগে আয়োজিত ‘সিলেটের বিপন্ন স্থাপত্য ঐতিহ্য ও আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন: নাগরিক উদ্বেগ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
উক্ত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। তার মাধ্যমেই সরকারের কাছে এই ঐতিহ্যবাহী ভবণের গুরুত্ব ও হাসপাতালবান্ধব স্থানে নবনির্মিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল স্থানান্তর করার বিষয়টি পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন সেমিনারের আয়োজকরা। বিষয়টি উল্লেখ করে সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে সুলতানা কামাল বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী আবু সিনা ছাত্রবাস ভবন রক্ষার্থে দীর্ঘদিন যাবত সিলেটের নাগরিক সমাজ আন্দোলন করছে। আমরা চেয়েছিলাম মন্ত্রীর মাধ্যমে সরকার পর্যন্ত আমাদের যৌক্তিক দাবি উপস্থাপন করা। তবে অনিবার্যকারণবশত মন্ত্রী আসেননি। আমরা মনে করি সরকারের উচিত জনগণের কথা শুনা। জনগণের নির্বাচিত সরকার জনগণের কথা শুনতে ভয় পায় তখন বুঝতে হবে সরকার ও জনগণের সম্পর্কের অবস্থার অবনতি হয়েছে।’
বাপার কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিলের পরিচালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আব্দুল মুবিন, বাংলাদেশ হেরিটেজ সোসাইটির সভাপতি সোহেল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ স্থপতি ইনিস্টিটিউট সিলেট শাখার সভাপতি স্থপতি সৈয়দা জেরিনা হোসেন, জাসদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাকির আহমদ, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, ব্যারিষ্টার আরশ আলী, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি সিএম তোফায়েল সামি, সিলেট মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাপার সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম ও ধারণাপত্র পাঠ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কৌশিক সাহা।
সেমিনারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর পক্ষ ছয় দফা দাবি জানানো হয়েছে। এতিহ্যবাহী ছাত্রাবাস ভবন ভাঙার কাজ বন্ধ করতে হবে ও ভবনটি সংস্কার-সংরক্ষণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, ঐতিহ্য সমীক্ষার মাধ্যমে সিলেটের সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক নিদর্শনগুলোর তালিকা তৈরি করে ডকুমেন্টেশন তৈরি করতে হবে তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রতœতাত্ত্বিক ও ঐতিহ্যসমূহ প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকভুক্তি করার ব্যবস্থা নিতে হবে, সিলেটে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের বিভাগীয় অফিস স্থাপন করে গুরুত্বপূর্ণ প্রতœতত্ত্ব ও স্থাপত্য ঐতিহ্যসমূহ পর্যায়ক্রমে সংরক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে, সিলেট নগরের ঐতিহ্য সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে পরবর্তী সময়ে মহাপরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে, সিটি করপোরেশনের ঐতিহ্য সেল গঠনের মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও দেখাশুনার ব্যবস্থা করতে হবে এবং সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও তদারকির জন্য বিভিন্ন পেশাজীবী, গবেষক, সাংস্কৃতি কর্মী ও পরিবেশকর্মী, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ে নাগরিক কমিটি গঠন করতে হবে। বিজ্ঞপ্তি