কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট ঝিংগাবাড়ী ইউনিয়নের আগতালুক গ্রামে যে কোন সময় গোষ্ঠী প্রথার আধিপত্যের জের ধরে প্রাণহানীর মতো রক্তক্ষীয় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে স্থানীয় এলাকাবাসী জানিয়েছেন। গোষ্ঠী প্রথার জের ধরে সম্প্রতি সময়ে গ্রামের ২ পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলায় কয়েক জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে উভয় গোষ্ঠীর লোকজন গ্রামে আধিপত্য ধরে রাখার জন্য প্রচুর দেশীয় ধারালো অস্ত্র সস্ত্র সহ লাঠি সোটা, সেল, সুলফি নিয়ে মহড়া অব্যাহত রাখায় এলাকার মানুষ শংকিত হয়ে পড়েছে। থানা পুলিশ কয়েকবার দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার এবং এসব হামলার সাথে জড়িতদের আটকের জন্য অভিযান করলেও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্র সরিয়ে ফেলে গ্রাম থেকে অনেকে আত্ম গোপনে চলে যান বলে এলাকার লোকজন জানান। এলাকার সচেতন মহল বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এড়াতে এ ব্যাপারে দ্রুত এগিয়ে আসার জন্য সিলেটের বিজ্ঞ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পুলিশ প্রশাসন এগিয়ে না আসলে বর্তমানে ২ গোষ্ঠীর মধ্যে যে সংঘাত শুরু হয়েছে তা নিরসন হবে না বলে বৃহত্তর ডাকনাইল ও গাছবাড়ী এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গ জানিয়েছেন। কারন উভয় পক্ষের লোকজন এলাকার কোন ধরনের শালিস বিচারে সাড়া দিচ্ছে না। সরেজমিনে আগতালুক গ্রামে গিয়ে আশপাশ এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে আগতালুক গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য হারুন রশিদ ও মাওলানা জসিম উদ্দিন গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে জমিজমা সহ নানা বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। ২০১৮ সালে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তির্বগ ও মুরব্বীয়ানদের উদ্যোগে শালিসে বসে এ ২ গোষ্ঠীর লোকজনদের মধ্যে চলা দ্বন্দ্ব সামাজিক ভাবে নিষ্পত্তি করে দেন। দু এক বছর ২ গোষ্ঠীর লোকদের মধ্যে কোন ধরনের অপ্রতিকর ঘটনা না ঘটলেও প্রায় বছর দিন থেকে পুরানো দ্বন্দ্ব আবারো ২ গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠে। জমি জমা সহ নানা ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু অপ্রতিকর ঘটনা ঘটে ২ গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে। এতে বেশ কয়েকজন মারাত্মক ভাবে পাল্টাপাল্টি হামলায় আহত হন। আশপাশ এলাকার গ্রামের লোকজন জানান আগতালুক গ্রামে আধিপত্য ধরে রাখার জন্য হারুন রশিদ ও মাওলানা জসিম উদ্দিন তাদের গোষ্ঠীর পরিধি বাড়ানোর জন্য গ্রামের অন্যান্য গোষ্ঠীর লোকজনদের তাদের গোষ্ঠীতে বিড়াচ্ছে। স্থানীয়রা জানান হারুন রশিদ ও জসিম উদ্দিন পক্ষের লোক জনের মধ্যে মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠার পুরোনো দ্বন্দ্ব নতুন করে শুরু হয়েছে। উভয় পক্ষ গ্রামে শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য দেশীয় অস্ত্রের মজুদ করে রেখেছে। থানা পুলিশ বারবার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। উভয় পক্ষের লোকজনদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য থানার ওসি তাজুল ইসলাম পিপিএম চেষ্টা করে গেলেও কোন সমাধান হচ্ছে না। হারুন রশিদ গোষ্ঠীর পক্ষের লোকজনের অভিযোগ বর্তমানে গ্রামে যে অপ্রতিকর ঘটনা ঘটছে এ জন্য সম্পূর্ণ দায়ী মাওলানা জসিম উদ্দিন পক্ষের লোকজন। কয়েক মাস আগে জসিম উদ্দিন গংরা হারুন রশিদ পক্ষের কবির উদ্দিনের ক্ষেতের বেশ কিছু ফসলী জমি জোর পূর্বক ভাবে দখল ও কয়েকটি গাছপালা কেটে নিয়ে যায়। জমির মালিক কবির উদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজন এতে বাধা দিলে জসিম উদ্দিন পক্ষের লোকজন তাদের মারধর করে। এ নিয়ে কয়েকদিন পূর্বে হামলায় আহত হন মাওলানা জসিম উদ্দিনের চাচাতো ভাই কামাল উদ্দিন। এ ঘটনায় কানাইঘাট থানায় হারুন রশিদ সহ অন্তত ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন মাওলানা জসিম উদ্দিনের চাচাতো ভাই হেলাল উদ্দিন। এ মামলায় অনেককে আসামী করা হয়েছে যারা হামলার সাথে জড়িত ছিলেন না বলে স্থানীয়রা জানান। হামলা ও মামলার জের ধরে গ্রামে ২ গোষ্ঠীর মধ্যে শুরু হয় চুরাগুপ্ত হামলা সহ দেশীয় অস্ত্রের মহড়া। যার কারণে বর্তমানে প্রাণের ভয়ে অনেকে বাড়ী থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না। গত শনিবার বিকেলের দিকে মাওলানা জসিম উদ্দিন পক্ষের অর্ধশতাধিক লোকজন একত্রিত হয়ে দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠি সোটা নিয়ে স্থানীয় সীমার বাজারের আশপাশে অবস্থান নেন। এসময় সীমার বাজারে অবস্থানরত হারুন রশিদ গোষ্ঠীর লোকজন হামলার ভয়ে আতংকিত হয়ে পড়লে পাল্টা এ গোষ্ঠীর বেশ কিছু লোকজন দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও লাঠি সোটা নিয়ে সীমার বাজারে যাবার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজন বাজারের পশ্চিম পাশের পাকা রাস্তায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে মাওলানা জসিম উদ্দিনের চাচাতো ভাই হেলাল উদ্দিন এবং হারুন রশিদ পক্ষের আব্দুল্লাহ, নজরুল ইসলাম, কবির উদ্দিন সহ কয়েকজন আহত হন। এ হামলার ঘটনায় জসিম উদ্দিন পক্ষের লোকজন থানায় ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। অপর দিকে হারুন রশিদ পক্ষের একজন কয়েকদিন পূর্বে হামলায় আহত হলে জসিম উদ্দিন পক্ষের কয়েক জনকে আসামী করা হয়। হারুন রশিদ পক্ষের লোকজনের অভিযোগ মাওলানা জসিম উদ্দিন মাদ্রাসার একজন শিক্ষক হয়ে তার গোষ্ঠীর লোকজনদের নিয়ে নানা ধরনের উস্কানী মূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছেন। অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ভাবে তাদের পক্ষের লোকজনদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো হচ্ছে। প্রচুর ধারালো অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে জসিম উদ্দিন পক্ষের লোকজন গ্রামে মহড়া দিচ্ছে পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা করে তাদের লোকজনদের বাড়ী ছাড়া করছে। ভয়ে বেশির ভাগ তাদের লোকজন বাড়ী ঘর ছাড়া এমনকি তাদের অনেকের বাড়ীতে হামলা করা হচ্ছে। থানায় জসিম উদ্দিন পক্ষের লোকজন যারা হামলার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ দিলেও তা রেকর্ড করা হচ্ছে না। যার কারণে জসিম উদ্দিন পক্ষের লোকজন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অপরদিকে মাওলানা জসিম উদ্দিন পক্ষের লোকজনের অভিযোগ আগতালুক গ্রামে বর্তমানে যা হচ্ছে তার জন্য দায়ী হারুন রশিদ পক্ষের লোকজন। তারা গ্রামে ত্রাসের রাজত¦ কায়েম করেছে। পাল্টাপাল্টি হামলা করে তাদের পক্ষের লোকদের আহত করছে বর্তমানে কামাল উদ্দিন ও তার ভাই হেলাল উদ্দিন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ভয়ে তাদরে পক্ষের লোকজন বাজার ঘাটে যেতে পারছেন না। একপক্ষ অপর পক্ষকে কোন ধরনের ছাড় না দিয়ে এভাবে দায়ী করে আসছে যার কারনে ২ পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘাত থামছে না। ২ পক্ষের মধ্যে চলা বিরোধ নিরসনের জন্য বৃহত্তর ডাকনাইল ১৪ পরগনার মুরব্বীয়ানরা উদ্যোগ নিলেও মাওলানা জসিম উদ্দিন পক্ষের লোকজন এতে সাড়া দিচ্ছে না বলে অনেকে জানিয়েছেন। ২ গোষ্ঠীর মধ্যে চলা সংঘাত সংঘর্ষ নিরসনে সিলেটের পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল। থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ তাজুল ইসলাম পিপিএম জানিয়েছেন আমরা আধুনিক সামজে বসবাস করছি। সম্প্রীতির মাধ্যমে সবাই একসাথে গ্রামে বাস করব এখানে গোষ্ঠী প্রথার ভিত্ত থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। আগতালুক গ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। কেউ গোষ্ঠী প্রথার দোহাই দিয়ে এলাকায় বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে আমরা কাউকে ছাড় দেব না। বর্তমানে ২ গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে তা নিরসনের জন্য এলাকার জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে আমি কথা বলেছি।