কাজিরবাজার ডেস্ক :
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সুসংবাদবাহী মাহে রমজানের দ্বিতীয় দশকে আমরা উপনীত হয়েছি। আজ ১২তম রমজানুল মুবারাক। রমজান আত্মসংযম ও আত্মগঠনের। নীতি-নৈতিকতার দিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। পবিত্র মাহে রমজানে ইবাদত বন্দেগী ও ক্ষমার খোশবু ছড়ানো সময়ে অন্তত দু’একটি খারাপ ও ভয়াবহ চরিত্র থেকে আমরা ফিরে আসতে পারি তাহলেই সিয়াম সাধনার সার্থকতা। যেমন ইদানীং ঘুষ-বখশিশের ব্যাপারটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। দেশে দেশে ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি বহুল আলোচিত মামলাও পরিচালিত হচ্ছে। কিছু নির্দিষ্ট সরকারী দফতর আছে- যেখানে ঘুষ, উৎকোচ কিংবা বখশিশ আপনি যে নামেই ব্যবহার করেন না কেন- এর প্রয়োগ না হলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। ঘুষ আর দুর্নীতির সয়লাব রোধ করা সম্ভব না হলে এর বিষবাষ্প আমাদের জাতীয় জীবনকে আরও কলুষিত করবে, কর্মকর্তা কর্মচারীরা হয়ে পড়বে অলস কর্মবিমুখ, মেধা আর যোগ্যতা বলে আর কিছু থাকবে না। কোন ধর্ম, কোন মূল্যবোধ, কোন আদর্শ এ জঘন্যতম পাপকার্য সমর্থন করতে পারে না। আর অথচ সুসভ্য সমাজে আজ এসব ঘটছে অহরহ। ইসলামের দৃষ্টিতে ঘুষ একটি মারাত্মক গোনাহের শামিল। কর্তব্য কাজ সম্পাদন করে অথবা কোন রায় দান করে অর্থ উপঢৌকন গ্রহণকে ঘুষ বলা হয়ে থাকে। আঁ-হযরত (স.) ঘুষদাতা, ঘুষগ্রহিতা ও তাদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি অভিশাপ দিয়েছেন। ইমাম জাফর সাদিক (রহ.) বলেছেন, আদালতের বিচারের দিক দিয়ে ঘুষ গ্রহণ খোদার প্রতি অকৃজ্ঞতারই সমতুল্য। তবে এসব নিন্দা- এমন ঘুষ সম্বন্ধে বলা হয়েছে যা ন্যায্য রায় দান কিংবা বৈধ কাজ সম্পাদনের জন্য যে ঘুষ নেয়া হয়ে থাকে। আর অন্যায় রায় প্রদান কিংবা অন্যায় কাজ সম্পাদনের জন্য যে ঘুষ নেয়া হয়, তা আরও বড় গুনাহ এবং এর জন্য অধিকতর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। ঘুষ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও লেনদেনের অন্তরায়। এর ফলে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। টাকার বিনিময়ে মানুষ অগ্রসর হয় যে কোন গর্হিত কাজে। অথচ মহানবী রাসুলে মাকবুল (স.) ইরশাদ করেছেন: কাসবুল হালা-লি ফারীদাতুন বা-দাল ফারীদাহ : হালাল পথে উপার্জন ফরজের উপরে আরেক ফরজ। আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালা তাঁর পবিত্র কালাম পাকে স্পষ্টভাষায় বলে দিয়েছেন : হে ঈমানদারগণ আমার দেয়া রিজিক থেকে পাক-পবিত্র বিষয় আহার গ্রহণ কর। ঘুষ, উৎকোচ ও অবৈধ পন্থায় আসা জীবিকা কখনও পবিত্র হতে পারে না। এটি শ্রমনির্ভর অর্জিত নয়, এখানে অন্যের কষ্ট, দুঃখ ও হয়রানি লেপ্টে আছে। ‘ ঘুষ’ এমন এক নেশাজাত ব্যাপার-যা এর গ্রহিতাকে অর্থ-বিত্তের প্রতি উন্মত্ত-বেপরোয়া করে তুলে। এতে স্বাভাবিক চিন্তা ও গতি লোপ পায়, নিয়মতান্ত্রিকতার কোন বালাই থাকে না। এ এক মহাদুর্নীতিও বটে। সমাজে নীতি-নৈতিকতার বিপরীত যা কিছু তা-ই হলো দুর্নীতি; যার অর্থ কু-অভ্যাস ও খারাপ নীতি। এটি এমন অবৈধ লেনদেন, যা অন্যায় ও গোপনীয়ভাবে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে সম্পাদিত হয়। সমাজের সব ক্ষেত্রে কমবেশি দুর্নীতির অস্তিত্ব বিরাজমান। প্রত্যেক মানুষকে আল্লাহতা’আলা ভাল-মন্দের পার্থক্যবোধ, ভালকে ভাল জানা ও মন্দকে মন্দ জানার অনুভূতি উপলব্ধি করতে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে মানুষের অনৈতিক কর্মকা-ের ফলে ভূপৃষ্ঠে যাবতীয় মন্দ, দুষ্কর্ম ও দুর্নীতির আবির্ভাব ঘটেছে। পবিত্র কোরানে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ মানুষের প্রতি কোন জুলুম করেন না, বরং মানুষই নিজের ওপর জুলুম করে ও নিজের ক্ষতি সাধন করে।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত-৪৪)
দুর্নীতি নামক ঘৃণ্য ব্যাধি শুধু দেশ ও জাতি নয়, দুর্নীতিবাজদেরও অনিবার্য ধ্বংস ডেকে আনে। ঘুষ-দুর্নীতি সমাজের নৈতিকতার ভিত্তি ও মানুষের মানবিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দেয়। দুর্নীতিবাজরা অবৈধভাবে অন্যের অর্থবিত্ত আত্মসাৎ, লুটপাট ও জবরদখল করলেও যথাযথভাবে সেই সম্পদ ভোগ করতে পারে না। বরং তারা অবৈধ সম্পদের ক্ষমতার দাপটে মানবতা বিধ্বংসী ও নৈতিকতা বিবর্জিত চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, সুদ, ঘুষসহ সামাজিক অপরাধমূলক কর্মকা-ে উৎসাহিত হয়। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরানে আল্লাহতা’আলা সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন, ‘জলে-স্থলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে, যার ফলে আল্লাহ তাদের কিছু কিছু কাজের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সূরা আর-রুম, আয়াত-৪১)