বিদ্যুৎ এখন দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদার সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিদ্যুৎ ছাড়া আমাদের চলে না, চলবে না। দেশের উন্নয়নের প্রথম শর্ত বিদ্যুতের সহজপ্রাপ্যতা। বিদ্যুৎপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে উন্নয়নের ধারায় আরো বহু মানুষকে যে সম্পৃক্ত করা যাবে, এটিও নিশ্চিত করে বলা যায়।
কলকারখানার পাশাপাশি সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রমে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। বিদ্যুতের অভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি স্তিমিত হয়। আর সে কারণে অতীতের সব সরকারের আমলের মতোই বর্তমান সরকারের আমলেও বিদ্যুৎ ছিল আলোচনার বিষয়। বিদ্যুতের ব্যাপারে সরকারের শীর্ষমহল থেকে সব সময় বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু কয়েক দিন ধরে আমরা দেখতে পাচ্ছি, রাজধানীসহ সারা দেশেই সকাল আর দুপুর তো বটেই, মধ্যরাতেও লোড শেডিংয়ের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। রাজধানীতে দিনরাত মিলিয়ে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না। ঢাকার বাইরের পরিস্থিতি আরো খারাপ। কোনো কোনো জেলা ও গ্রামাঞ্চলে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছে না মানুষ। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, জ্বালানিসংকটসহ নানা কারণে উৎপাদন বন্ধ ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের।
বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে, জ্বালানিসংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হওয়ায় তারা এখন বরাদ্দের চেয়ে কম সরবরাহ পাচ্ছে; যে কারণে লোড শেডিং বেশি দিতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীও জানিয়েছেন, লোডের কারণে দিনে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আবার দিনে যেগুলো চালানো হচ্ছে, সেগুলো রাতে বন্ধ রাখা হচ্ছে। এ জন্য লোড শেডিংয়ের জায়গাটা একটু বড় হয়ে গেছে।
এর আগে ২০১৩ সালেও এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। বিদ্যুতের ঘন ঘন লোড শেডিংয়ের কারণে মানুষকে তখন চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। সেই সময়ের মতো এখনো কয়েক দিন ধরে এক ঘণ্টা পর পর বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলা চলছে। সামনে স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা। ফলে মোমবাতির আলোতে দুঃসহ গরমে ঘেমে-নেয়ে একাকার হতে হচ্ছে শিশুদের। পাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাতে বারবার ঘুম থেকে জেগে উঠতে হয়। অথচ এ সময় বিদ্যুতের কারণে এই ভোগান্তি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।
বাংলাদেশের মানুষের জীবনে নানা ধরনের দুর্ভোগ আছে, থাকবে। বিদ্যুৎ নিয়েও অতীতে এর চেয়ে বড় দুর্ভোগ সহ্য করেছে তারা। আমরা আশা করব, বিদ্যুৎ নিয়ে নতুন করে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হবে না বর্তমান ও আগামী দিনের গ্রাহকদের। দ্রুত বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবে এমনটাই প্রত্যাশিত।