কমলগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ে দু’শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত, রেল ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ

18
কমলগঞ্জের কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত পতনঊষার ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের একটি বসতঘর।

পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কাল বৈশাখী ঝড়ে উপজেলার পতনউষার, শমশেরনগর, মুন্সিবাজার ও পৌরসভার এলাকায় দুইশতাধিক ঘর বিধস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে হাজারো গাছ পালা। ১১ কেভির প্রায় ১০০টি স্থানে গাছ ভেঙে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে। কমলগঞ্জ-কুলাউড়া সড়কে শমশেরনগর এয়ারপোর্ট রোডে ব্যাপক পালা গাছ পড়ায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়া লাউয়াছড়া পাহাড়ে রেল লাইনের উপর গাছ পড়ায় রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ঢাকাগামী পারাবত এক্সপ্রেস ও সিলেটগামী আন্ত:নগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া ষ্টেশনে আটকা পড়েছে। বিদ্যুৎ লাইন লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার করণে বিদ্যুৎহীন ছিল পুরো কমলগঞ্জ। এছাড়া বজ্রপাতে পতনঊষার ইউনিয়নে এক কৃষকের ৪০ হাজার টাকার মহিষ মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ের সাথে ছিল বিকট শব্দের বজ্রপাত। এতে উপজেলাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
জানা যায়, রবিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে কাল বৈশাখীর ঝড়ে পতনউষার ইউনিয়নে পতনউষার, শ্রীরামপুর, চন্দ্রপুর, ধোপাটিলা, রসুলপুর, বৃন্দাবনপুর, দক্ষিনপল্কীসহ ১০টি গ্রামের বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাস্তার গাছপালা উপড়ে পড়ে। পতনউষারের বিভিন্ন এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ এর ১১ কেভি লাইন ছিড়ে পড়েছে। এছাড়া পতনউষার গ্রামের আলাল মিয়া, দক্ষিণপল্কী গ্রামের বিধবা মহিলা আগুরী বিবিসহ প্রায় ২০টি ঘর সম্পূর্ণ বিধস্ত হয়। অপরদিকে একই সময় শমসেরনগর, মুন্সিবাজার ও কমলগঞ্জ পৌরসভায় ঝড়ে দু’শতাধিক ঘর সম্পূর্ণসহ শতাধিক বাড়িঘর বিধস্ত হয়। কমলগঞ্জ আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজে আধাপাকা একাডেমিক ভবনের টিন ছাউনিসহ পৌরসভার ৫, ১, ২ নং ওয়ার্ডের ঘরের টিন উড়িয়ে নিয়েছে। কয়েক শতাধিক গাছ পালা উপড়ে পড়েছে। গ্রামঞ্চলের বিদ্যুত এর তার ছিড়ে পড়েছে। ৩টি ইউনিয়নে শতাধিক ঘর আংশিক বিধস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রায় শতাধিক স্থানে বিদ্যুৎ লাইনের তার ছিড়ে পড়েছে। ঝড়ে বেশি গাছপালা বিধস্ত হয়েছে শমশেরনগর এলাকায়। বিমান ঘাঁটি এলাকার কুলাউড়া সড়কের উপর অধর্শতাধিক গাছ পালা ভেঙ্গে পড়ে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
পতনউষার ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নারায়ন মল্লিক সাগর জানান, তার ইউনিয়নে ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দুই শত বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত ও কোটি টাকার গাছপালার ক্ষতিসাধন হয়েছে। তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। বিধস্ত ঘর হওয়ায় খোলা আকাশে বসবাস করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রীমঙ্গল জোনের উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন ট্রেন আটকা পড়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
কমলগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম মোবারক হোসেন জানান, ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। প্রায় শতাধিক স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে ১ দিন লেগে যাবে।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমর্কতা মো. আছাদুজ্জামান বলেন, তিনি সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করছেন। ঘরের তালিকা দেয়ার জন্য চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সুমি আক্তার বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা আসলে পরে ব্যবস্থা করা হবে।