কাজিরবাজার ডেস্ক :
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নেয়ার সময় শেষ হচ্ছে আগামীকাল মঙ্গলবার। তাই ৫ জনের শপথ ঠেকাতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন দলের নেতারা। আগে শপথ নেয়া একজনকে বহিষ্কার করেও ঠেকানো যাচ্ছে না দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকি ৪ জনকে। গোপন বৈঠক করে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বহিষ্কার উপেক্ষা করে আজকালের মধ্যেই শপথ নিয়ে সংসদে যাবেন। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় ৫ সংসদ সদস্যেকেই কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
সূত্র মতে, দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংসদে যেতে চাচ্ছেন না। মহাসচিবের পদ হারানোসহ বিভিন্ন কারণে তিনি দলের বিরুদ্ধে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে চান না। ১৮ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাহিদুর রহমান জাহিদ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই জাতীয় সংসদের স্পীকারের কাছে শপথ নেন। ২৭ এপ্রিল তাঁকে বহিষ্কারের পাশাপাশি অন্য ৫ জনকেও শপথ নিলে বহিষ্কারের হুমকি দেয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত জানার পরও ওই ৫ জনের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া বাকি ৪ জন গোপন বৈঠক করেন। তারা যে কোন বাধা অতিক্রম করে শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
জানা যায়, বগুড়া-৪ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত মোশাররফ হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোঃ আমিনুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মোঃ হারুন উর রশিদ ও ব্রাহ্মণ বাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচিত আবদুস সাত্তার ভূইয়া শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। তাই আজ সোমবার অথবা আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যেই তারা শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেবেন। সংবিধান অনুসারে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শপথ না নিলে তাদের আসনগুলো শূন্য হয়ে যাবে। তাই বিএনপি হাইকমান্ড এখনও শপথ না নেয়ার পক্ষে থাকলেও তারা ৪ জন সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না। সংসদে যাওয়ার বিনিময়ে তারা দল থেকে বহিষ্কার হতেও প্রস্তুত রয়েছেন। তবে দলীয় হাইকমান্ড শেষ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নেবেন না বলে জানা গেছে। আর কোন কারণে শেষ মুহূর্তে যদি দল থেকে সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হয় সে ক্ষেত্রে অন্যদের মতো বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সংসদে যাবেন। তবে দলটির এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে।
২৭ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতামত নিয়ে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠক শেষে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয় কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলে তাকে বহিষ্কার করা হবে। সেই সঙ্গে এর আগে শপথ নেয়া জাহিদুর রহমানকে বহিষ্কারের কথাও জানিয়ে দেয়া হয়।
জানা যায়, শপথ নিলে বহিষ্কারের কথা জানার পরও ৪ জন গোপন বৈঠক করে আজকালের মধ্যে সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ কথা জানার পর লন্ডন থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদের কঠোর নজরদারিতে রাখার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে যাদের ভাল সম্পর্ক রয়েছে এমন নেতাকর্মীদের দিয়ে বোঝানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিজেও কারও কারও সঙ্গে কথা বলা অব্যাহত রেখেছেন। এ পরিস্থিতিতে তাদের শপথ ঠেকাতে যা কিছু করণীয় সবই বিএনপির পক্ষ থেকে করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মোঃ হারুন উর রশিদ শপথ নিয়ে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে পুরোপুরি প্রস্তুত। এ খবর শুনে তার স্ত্রী আশিফা আশরাফি পাপিয়াকে দিয়ে শপথ ঠেকানোর চেষ্টা করছে বিএনপি হাইকমান্ড। একইভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত অন্যদের সঙ্গেও দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যাদের ভাল সম্পর্ক রয়েছে তাদের দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া দলে তারেক রহমানের অনুসারী ক’জন তরুণ নেতা তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছেন। তবুও ৩০ এপ্রিল পার না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি হাইকমান্ড স্বস্তি পাচ্ছে না।