আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্ক ॥ যুক্তি তর্কের মাধ্যমে ঐতিহ্য সুরক্ষার আহবান

26

‘ঐতিহ্য সুরক্ষা : যুক্তি-তর্ক’ শিরোনামে আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন নিয়ে ছায়া সংসদ বিতর্কের আয়োজন করেছে সিলেটের বির্তাকিকরা।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) আবু সিনা ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে বিকাল সাড়ে ৪টায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিতার্কিক দল ‘ছায়া সংসদ’ বিতর্কে যুক্তি তর্কের মাধ্যমে ঐতিহ্য সুরক্ষার আহবান জানান।
‘এই সংসদ প্রতœতত্ত্ব নিদর্শন ভেঙে হাসপাতার নির্মাণ সমর্থন করে না ‘ এই বিষয়ের উপর ‘সরকারি দল’ হিসেবে অংশ নেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির বির্তাকিক এবং ‘বিরোধী দল’ হিসেবে অংশ নেন নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ডিবেটিং সোসাইটির বিতার্কিকরা।
সরকারি দলে বির্তাকিক ছিলেন মাসফিক আহসান, সৈয়দ নওরোজ হোসেন ও মো. বায়েজিদ হাসান। বিরোধী দলের বিতার্কিকরা ছিলেন মাজহার বিন আজহার, ফরহাদ হাসান ও রুবাইয়াৎ বিনতে ওয়াহিদ।
বিতর্কে ‘স্পিকার’ ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সহসভাপতি ইশতিয়াক হোসেন মুন্সি। বিতর্কে সময় নির্ধারকের দায়িত্ব পালন করেন সিলেট ডিবেট ফেডারেশনের সাবেক সহসভাপতি তানভীর রেজা খান।
ছায়া সংসদ বিতর্ক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজ’ প্রতিনিধি জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক জাকির আহমদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষেদের সভাপতি মন্ডলির সদস্য মোকাদ্দেস বাবুল, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রীনা কর্মকার, নাগরিক মৈত্রী সিলেটের আহবায়ক সমর বিজয় সী শেখর, সিলেট সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক হুমায়ূন কবীর জুয়েল, গণজাগরণ মঞ্চ সিলেটের মুখপাত্র দেবাশীষ দেবু ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম। বিতর্ক অনুষ্ঠানের সমন্বয়ক শাকিলা ববির স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় বিতর্ক।
বিতর্কে ‘সরকারি দল’ ঐতিহ্য সুরক্ষায় নাগরিক সমাজের বক্তব্যগুলো উপজীব্য করে তাদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করে। অন্যদিকে ‘বিরোধী দল’ হাসপাতালের পাশাপাশি কিছু ঐতিহ্য রক্ষার পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
দুই পক্ষের যুক্তি-তর্ক ও খন্ডন পর্ব শেষে বিতর্ক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিরা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘ছায়া সংসদ বিতর্কে ‘সরকারি দল’ ঐতিহ্যের ভূমিকায় থাকলেও বাস্তবে সরকার পক্ষ হাসপাতাল প্রকল্পের তহবিলের টাকা চলে যাওয়ার অজুহাত ঐতিহ্য ধ্বংসের পক্ষে তৎপর। অন্যদিকে ‘বিরোধী দল’ ঐতিহ্য সুরক্ষার পক্ষে বললেও বাস্তবে কোনো বিরোধী দল নেই বলে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করছেন।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের বিষয়ে আলোচনার বিকল্প কিছু হতে পারে না। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাদা ছোড়াছুড়ি না করে যুক্তি সংগত আলোচনা করা দরকার।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ বলেন, ‘যারা এমসি কলেজের এতিহ্যবাহী পুরোনো ছাত্রাবাস আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল তাদের যদি আমরা দুর্র্র্বৃত্ত বলি তাহলে এই আবু সিনা ছাত্রাবাস যারা ধ্বংশ করার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচের বিল পাশ করেছেন তাদের কি বলবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সিটি করপোরেশন এক সময় বিরাট বড় এলাকা মনে হলেও এখন ছোট মনে হচ্ছে। কারণ মানুষ বাড়ছে। যেখানে সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডকে বড় করে ১০০টি ওয়ার্ডে রূপান্তর করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেখানে নগরের কেন্দ্রস্থলে পুরনো স্থাপনা ভেঙে নতুন একটি হাসপাতাল করা কতটুকু যুক্তি সংগত হবে। একটি সুন্দর শহর চাইলে অবশ্যই পরিকল্পিত নগরায়ণের চিন্তা করতে হবে। যার যখন যেখানে ইচ্ছা তৈরী করলে হবে না।’
জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা জাকির আহমদ বলেন, ‘আমরা সিলেটবাসী ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ বলে অতীতে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজ ছাত্রাবাস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ঐতিহ্য সুরক্ষায় অবিকল আগের কাঠামোয় তৈরি করার দাবিতে অনড় ছিলেন সবাই। অথচ এখন শতবর্ষী এই ভবনটি ভাঙ্গার জন্য কত আয়োজন করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। এই ভবনটি যে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় কেন নেই-এটা সরকারের ব্যর্থতা। আজকে যে কাজটা সরকারের করার কথা সেটা আমরা করছি। আমাদেকে আন্দোলন করে সরকারকে জানান দিতে হচ্ছে আমাদের দেশের সম্পদ সম্পর্কে।’ বিজ্ঞপ্তি