বৈরী আবহাওয়ায় বছরে বছরে ফসল হানি, বোরো ধান চাষাবাদে বিপাকে কৃষক

31

তাহিরপুর থেকে সংবাদদাতা :
কৃষি কৃষকের ভাগ্যের চাকা সচল করলেও তাহিরপুরে বোরো ফসল উৎপাদনে কৃষকের ভাগ্যের চাকা আর সচল হচ্ছে না। শুধু মাত্র প্রকৃতিগত কারণে হাওরাঞ্চলে বোরো ফসল চাষাবাদ এখন কৃষকের কাছে বোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক কৃষক এ পেশা পরিবর্তন করে অন্য কোন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করছেন। তাছাড়া অধিকাংশ কৃষক কৃষিতে ভাগ্যের পরিবর্তন করতে বছরে বছরে আশানুরূপ ফলন না পেয়ে লোকাশান দিতে দিতে ঋণের জালে আরো বেশী করে জড়িয়ে গেছেন। ঋণ পরিশোধ করতে অনেক কৃষক হিমশিম খাচ্ছেন আবার অনেকে কৃষক ঋণের বোঝা মাথা নিয়ে কাজের আশায় চলে গেছেন রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরে।
এমনটাই জানা গেলো গত ৪-৫ বছর ধরে হাওরের চিত্র দেখে দেখে । ২০১৭ সালে আগাম বন্যায় হাওর তলিয়ে যাওয়ায় দক্ষিণ শ্রীপুর, উত্তর শ্রীপুর ও তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে থেকে হাজারো লোকজন কাজের সন্ধানে চলে গেছেন বড় শহরে। গত ৫/৬ বছরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বোরো ধান চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। কৃষক কোনভাবেই দাঁড়াতেই পারছেন না। দিন দিন এ পেশা তাদের মেরুদন্ড আরো ভেঙ্গে দিচ্ছে। তাছাড়া অকাল বন্যায় হাওর তলিয়ে কৃষক সর্বশান্ত হয়েছেন।
২০১৫ সালে হাওরগুলোতে জলাবদ্ধতার কারণে অনেক কৃষক তাদের জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করতে পরেন নি। তাছাড়া বৈশাখ মাসে অতি বৃষ্টির কারণে ধান শুকাতেও হিমশিম খেতে হয়েছে। ধান শুকাতে না পারায় ধানে চারা গজিয়েছে।
২০১৬ সালে শিলা বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সেই সাথে হাওরের বাধ ভেঙ্গে পানিতে ফসল তলিয়ে গেলে কৃষক ধান কাটতে পারেন নি।
২০১৭ সালে আগাম বন্যায় উপজেলার সবকটি হাওরে বোরো ফসল তলিয়ে গেলে কৃষক কোনরূপ ধান কাটতে পারেননি। সে বছর কাজের সন্ধানে এলাকা ছাড়েন হাজারো কৃষক।
২০১৮ সালে বোরো ধানো ব্লাস্ট রোগ দেখা দিলে হাওরে-হাওরে এ রোগ ছড়িযে পড়ে। এতে কৃষকের ধান নষ্ট হয়ে যায়, অধিকাংশ কৃষক ধান কাটতে পারেন নি। যারা সামান্য ধান কাটিয়েছেন বাজারে ধানের দর প্রতি মণ ৬৫০ টাকা বিক্রি করায় তাদেরও লোকসান দিতে হয়েছে। চলতি বছর ২০১৯ সালে দীর্ঘ খরার করাণে ধানে প্রচুর পরিমান চিটা হওয়ায় প্রতি কেদার জমি থেকে কৃষক ধান পাচ্ছেন ৪ থেকে ৫ মন।
বছরের পর বছর এ অবস্থার মধ্যে কৃষক বোরো ধান চাষাবাদ করে উৎপাদন ব্যয় মিটাতে পারেছেন না বরং আরো বেশী করে ঋণের জালে জড়িযে পড়েেছন।
শনির হাওরপার উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক নুর আলী তিনি জানান, খরার কারণে এ বছর জমিতে ধান খুব কম হয়েছে। ধান কাটা তার ইচ্ছে ছিলনা কিন্তু গো- খাদ্যের জন্য তাকে লোকসান দিয়েও ধান কাটতে হচ্ছে।
গোবিন্দ্র শ্রী গ্রামের কৃষক হারুনর রশিদ তিনি বলেন, বছরে বছরে কৃষিতে লোকসান দিতে দিতে তিনি এখন আর ঋণের বোঝা শেষ করতে পারছেন না। তবুও বছরে বছরে তিনি বোরো ধান চাষাবাদ করেন লাভের আশায়।
সর জমিনে শনির হাওর পারে একাধিক ধান মাড়াই খলাতে গিয়ে দেখা যায় কৃষক ধান কাটা মাড়াইড়ের কাজে ব্যস্ত রযেছেন। সে সময় কথা হয় কৃষক মোশারফ মিয়ার সাথে তিনি জানান, তিনি ৪ কেদার (১ কেদার সামন ৩০ শতক) জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করেছেন তা থেকে তিনি যে ধান পাবেন তা দিয়ে কোন রকম ধান কাটা শ্রমিক মজুরী পোষাতে পাবেন। তাই তিনি একটু কষ্ট হলেও নিজের জমির ধান কাটিয়েছন।
সে সময় কথা হয় অপর এক কৃষক নুর ঈমান মিয়ার সাথে তিনি জানান, কষ্ট করে জমি রোপণ করেছেন জমিতে সামান্য হলেও ধান হয়েছে কিন্তু চোখের সামনে পাকা ধান নষ্ট হবে তা তিনি মানতে পারেছন না। তাই লোকসান দিয়েও রোপণকৃত ধান কাটছেন তিনি।
চলতি বছর তাহিরপুর উপজেলার ২৫টি ছোট বড় হাওরে ১৮ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু উপজেলার কোন হাওরের কৃষক কৃষির ব্যয়বার মিটাতে পারছেন না উৎপাদিত বোরো ফসল থেকে। এ থকে কৃষিতে দিন দিন অনিহা দেখা দিচ্ছে কৃষকদের মধ্যে।
এ বিষয়ে তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে হাওরপারের কৃষকগণ কৃষি থেকে আশানুরূপ ফলন পচ্ছে না।