বোরকা পরা অবস্থায় সাহেদকে গ্রেফতার

16
র‌্যাবের হাতে আটক প্রতারক সাহেদ।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের প্রতারণার কাজের অন্যতম সহযোগী রিজেন্ট গ্রুপের এমডি মাসুদ পারভেজের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সাহেদকে করিমকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে র‌্যাব।
র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বুধবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান।
বুধবার ভোর ৫টা ২০ মিনিটে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।
কোমরপুর সীমান্ত দিয়ে নৌকায় করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি জিন্সের প্যান্ট ও নীল রঙের শার্টের ওপর কালো রঙের বোরকা পরে ছিলেন। সাহেদ গ্রেফতার এড়াতে গোফ কেটে ফেলেছিলেন, সাদা চুল কালো করেছিলেন।
গ্রেফতারের পর সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে সাহেদকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর উত্তরায় তাকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযান শেষে রিজেন্ট সাহেদের আটকের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব।
র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুর থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী সাহেদের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানা যায়। পরিকল্পনার তথ্যের ভিত্তিতে আমরা সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করি। গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করে একপর্যায়ে আমরা সাতক্ষীরার দেবহাটা থানার সাকড় বাজারের পাশে অবস্থিত লবঙ্গপতি খাল থেকে তাকে গ্রেফতার করি।
র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, সাহেদের নামে প্রায় ৫০টির অধিক মামলা রয়েছে। তিনি কতটা প্রতারক সেটি বুঝতে পারছেন। কোন জায়গায় স্থির ভাবে থাকেননি। রাজধানী থেকে বের হয়েছেন, আবার রাজধানীতে ঢুকেছেন আবার বের হয়েছেন। আমরাও তাকে প্রথম থেকেই অনুসরণ করে যাচ্ছি। এক পর্যায়ে তাকে ধরতে সক্ষম হই।
তিনি বলেন, ৬ জুলাইয়ের পর থেকে সাহেদ বিভিন্নভাবে চলাফেরা করতেন। কখনো গণপরিবহনে কখনও ব্যক্তিগত গাড়িতে কখনো ট্রাকে চড়ে আবার হেঁটে চলাফেরা করেছেন।
আজকে তাকে আটকের পর দুপুরে তার উত্তরার একটি বাসায় অভিযান পরিচালনা করি। সেখানে থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার জাল টাকা উদ্ধার করি। আরো বেশ কিছু তথ্য আছে যেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। বিকালেই সাহেদকে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করব।
এর আগে রিজেন্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। মঙ্গলবার বিকালে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সরকারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করা এবং ভুয়া সনদ দেয়ার অভিযোগ ৬ জুলাই র‌্যাব রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়।
অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরে রোগীদের সরিয়ে রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়।
পর দিন উত্তরা পশ্চিম থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে মো. সাহেদকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করে।
সে মামলায় ৯ দিন পলাতক থাকার পর গ্রেফতার হলেন মো. সাহেদ।
ওই মামলায় সাহেদকে থানার মাধ্যমে সেই সময় প্রধান আসামিসহ ৯ জন আসামিকে পলাতক দেখিয়ে এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আসামিরা হলেন রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজ, রিজেন্ট হাসপাতালের কর্মী তরিকুল ইসলাম, আবদুর রশিদ খান জুয়েল, মো. শিমুল পারভেজ, দীপায়ন বসু, আইটি কর্মকর্তা মাহবুব, সৈকত, পলাশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আহসান হাবীব ১. হেলথ টেকনিশিয়ান আহসান হাবীব, ২. হেলথ টেকনোলজিস্ট হাতিম আলী, অভ্যর্থনাকারী কামরুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের প্রকল্প প্রশাসক মো. রাকিবুল ইসলাম, রিজেন্ট গ্রুপের মানবসম্পদ কর্মকর্তা অমিত বণিক, রিজেন্ট গ্রুপের গাড়িচালক আবদুস সালাম ও নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুর রশিদ খান।
এসব আসামির মধ্যে সাতজনকে ইতোমধ্যে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।