কুলাউড়া থেকে সংবাদাতা :
কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের মতোছিন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ২ মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হলেও এক বছরে সেই কাজ সম্পন্ন হয়নি। নির্মাণকাজের পরিত্যক্ত মালামালে বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী তাতে পড়ে আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরীর বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত মহতোছিন আলী উচ্চ বিদ্যালয়টির উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের জন্য তিনি প্রাথমিকভাবে ১৮ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেন। ২ মাসের মধ্যে অর্থাৎ স্বল্প মেয়াদে সেই কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন। তাছাড়া প্রয়োজনে আরও বরাদ্ধের ঘোষণা দেন। সেই উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান বিদ্যালয় উন্নয়ন কমিটি সভাপতি নিয়ামুল ইসলাম কমর। কোন প্রকান স্বচ্ছ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় না গিয়ে তিনি নিজে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। ২ মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন করাতো দুরের কথা এক বছর অতিবিাহিত হলেও কাজ সম্পন্ন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। উন্নয়ন কমিটির বাকি সদস্যরা জানেন না বাস্তবায়নকৃত কাজ কিংবা কাজের ব্যয়কৃত অর্থের পরিমাণ।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সংস্কার কাজের পরিত্যক্ত মালামাল যত্রতত্র ফেলে রাখায় বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী নায়েফ আলম মারুফের পায়ে লোহা বিদ্ধ হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পায়ে সমস্যা দেখা দিলে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। বিদ্যালয়ের জেএসসি পরীক্ষার্থী নোহা ও ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা আক্তার আহত হয়। এনিয়ে বিদ্যালযের অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
অভিভাবক মোস্তাক মিয়া, আতই মিয়া জানান, আমরা সন্তানকে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শিখতে পাঠাই। সেখানে যদি উন্নয়ন কাজ হয়, তাহলে আগে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করতে হবে। শিক্ষার গ্রহণের বদলে সন্তানকে আহত করা জন্য বিদ্যালয়ে পাঠাই না।
মহতোছিন আলী উচ্চ বিদ্যালয় স্টুডেন্ট কেবিনেটের নেত্রী তাওহিদুল ফেরদৌস নাদিয়া জানান, নিয়ামুল ইসলাম কমর সংস্কার কাজ পরিচালনা করতে বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের মা বাবাকে নিয়ে গালাগালি করেন। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে মিছিলের উদ্যোগ নেয়। শেষতক প্রধান শিক্ষকের হস্তক্ষেপে কমর ছাত্রছাত্রীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় পরিস্থিতি শান্ত হয়। সংস্কার কাজ চলাকালে ধূলোবালির কারণে ক্লাস করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া পরিত্যক্ত মালামাল মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখার কারণে তাতে পড়ে অনেক শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছে।
উন্নয়ন কমিটি ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আব্দুল মজিদ বুলু এবং অপর সদস্য শাফাতুল ইসলাম ফুল জানান, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও শিল্পপতি আজ জে চৌধুরীর উপর আমরা খুশি। উনার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ চলছে। উনি খুব ব্যস্ত মানুষ। ব্যস্ততার কারণে আমরা অনেক কথা বা অভাব অভিযোগের কথাও বলতে পারি না। সংস্কার কাজে কি হচ্ছে?-তা কেউ জানেনা। তবে স্বচ্ছত্ ানা থাকায় অনিয়মের অভিযোগ করেন তারা। বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনের ছাদ ভেঙে পুনরায় ঢালাই করার কথা। মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের প্রকৌশলী পারভেজ ঈষাণ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। কিন্তু সেই পরিত্যক্ত ভবনের ছাঁদ না ভেঙে, আস্তরের প্রলেপ দিয়ে কাজ শেষ করা হয়েছে। ফলে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণই থেকে যাচ্ছে। যেকোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, বিদ্যালযের ডেস্ক বেঞ্চ বানানোর নামে নি¤œমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। উন্নয়ন কমিটির সভাপতি নিজের মনগড়া কাজ করছেন। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির মহিলা সদস্য রাশেদা আক্তার জানান, বিদ্যালয়ে কি কাজ হচ্ছে? -এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা।
সংস্কার কাজের মিস্ত্রি আব্দুল জব্বার জানান, কাজে কোন অনিয়ম বা সময় নষ্ট হয়নি। যেভাবে কাজ করার কথা সেইভাবেই হচ্ছে।
এব্যাপারে বিদ্যালয় উন্নয়ন কমিটির সভাপতি নিয়ামুল ইসলাম কমর জানান, মিস্ত্রির উদাসীনতায় ছোট খাটো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিদ্যালয়ের সভাপতি পুরাতন ভবন ভেঙে নতুন করে করার কথা বলেছেন। টাকার অপব্যয় হলে সভাপতির খারাপ লাগবে। তাই আমি ২ লাখ টাকার কাজ ২ হাজার টাকায় করছি। আমি ঠিকাদার নয়, কাজ দেখাশুনা করি। কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে উন্নয়ন কমিটিকে বললে তারা আসেনা। আর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও আমার নামে যৌথ একাউন্টে টাকা উত্তোলন করা হয়। একদিন ক্লাসে গেলে শিক্ষার্থীরা দাঁড়ায়নি। তাই আমি বলেছিলাম এটা বেয়াদবির লক্ষণ। আর কিছু না।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ফয়জুর রহমান ছুরুক জানান, আমার যৌথ স্বাক্ষরে টাকা উত্তোলন হলেও কাজের আয় ব্যয়ের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। অফিসের কাজ দ্রুত করার কথা থাকলেও তা হয়নি। ভবনের সামনে ড্রেন নির্মাণের কথা থাকলেও তাও হয়নি। বিদ্যালয়ের দরজা জানালা দীর্ঘদিন থেকে বদলানোর নামে খোলা। অরক্ষিত বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে অভিভাবকরা আমার কাছে নালিশ নিয়ে আসে। তাদের সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।