বায়ুদূষণের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। কখনো অবস্থান হয় এক নম্বরে, কখনো বা সামান্য নিচে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর যত মানুষের অকালমৃত্যু হয় তার প্রায় ২০ শতাংশই হয় বায়ুদূষণের কারণে। গত মঙ্গলবার ঢাকায় এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। ‘স্ট্রাইভিং ফর ক্লিন এয়ার : এয়ার পলিউশন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে বলা হয়, বিশ্বে বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ ১০টি শহরের মধ্যে ৯টিই দক্ষিণ এশিয়ার। এর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। এর আগেও দেশি-বিদেশি অনেক গবেষণা প্রতিবেদনে বায়ুদূষণের এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। জনস্বাস্থ্যে তার মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার কথা উঠে এসেছে। কিন্তু দূষণ কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
দূষিত বায়ু নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে ঢোকে। সেই বায়ুতে থাকা অতি সূ² কণা রক্তে মিশে যায়। এর ফলে নানা শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে আছে শ্বাসনালির সংক্রমণ, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্টসহ শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য রোগ। ক্যান্সার, হৃদরোগসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও হচ্ছে বায়ুদূষণের কারণে। বিশ্বব্যাংকের গবেষণাপত্র বলছে, অকালমৃত্যুর ২০ শতাংশের জন্য দায়ী অতিরিক্ত বায়ুদূষণ। কিন্তু আরো কত শতাংশ ধুঁকে ধুঁকে জীবন যাপন করছে, অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে, রোগ সারাতে অর্থ ব্যয় করতে করতে নিঃস্ব হচ্ছে তার হিসাব কি আমরা রাখি? প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকাসহ দক্ষিণ এশিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলোতে বাতাসে অতি সূ² কণার পরিমাণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় বায়ুদূষণজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার অনেক বেশি। প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবছর আনুমানিক ২০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। বায়ুদূষণ শুধু স্বাস্থ্যেরই ক্ষতি করে না। এটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতিরও কারণ।
বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রধানতম কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাচীন পদ্ধতির ইটভাটা, যেগুলোতে নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে মানা হয় না এবং যেগুলোর বেশির ভাগই অবৈধ। ব্যবহার করা হয় ক্ষতিকর ড্রাম চিমনি। অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে রয়েছে যথেচ্ছাচারÑখোঁড়াখুঁড়ি, মাটি ও বালু পরিবহনÑকোথাও সঠিক নিয়ম মানা হয় না। রয়েছে ফিটনেসহীন পুরনো যানবাহনের আধিক্য। জীবাশ্ম জ্বালানির অপরিমিত ব্যবহার। তার ওপর আছে অসহনীয় যানজট। বেশির ভাগ কলকারখানাই পরিবেশসম্মতভাবে পরিচালিত হয় না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও পরিবেশসম্মত নয়। প্রায়ই প্লাস্টিকসামগ্রীসহ আবর্জনা পোড়ানো হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বায়ুদূষণ রোধে সরকারকে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজে নামতে হবে। তা না হলে প্রতিনিয়ত জনস্বাস্থ্যে তার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। বায়ুদূষণ এক জায়গায় আটকে থাকে না। মেঘ ও বায়ুবাহিত হয়ে দূষণ এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে ছড়িয়ে যায়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা শহরের দূষিত বায়ুর ৩০ শতাংশই আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। তাই বায়ুদূষণ রোধে আঞ্চলিক উদ্যোগও জরুরি। বাংলাদেশের বায়ুদূষণ পরিস্থিতির প্রতিকার আমাদেরই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার, পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য সংস্থাকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে।