ভুটানের সাথে সম্পর্ক অক্ষুন্ন থাকুক

41

অভিন্ন সীমান্ত না থাকলেও ভুটান বাংলাদেশের অত্যন্ত নিকট প্রতিবেশী একটি বন্ধুপ্রতিম দেশ। দুই দেশের মধ্যে রয়েছে দীর্ঘ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানকারী প্রথম দেশ ভুটান। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভুটানের তৎকালীন রাজা জিগমে দরজি ওয়াংচুক বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো এক তারবার্তায় বাংলাদেশের মানুষের বিজয় প্রত্যাশার পাশাপাশি ‘মহান নেতা’ শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তা ও মুক্তি কামনা করেন। দুটি দেশই আঞ্চলিক সংস্থা সার্ক ও বিমসটেকের সদস্য। এ ছাড়া উপ-আঞ্চলিক জোট বিবিআইএনেরও (বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া, নেপাল) সদস্য উভয় দেশ। সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উষ্ণতা ও পরিধি বৃদ্ধির পাশাপাশি কৌশলগত উন্নয়ন অংশীদারির সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়েছে। বাংলাদেশ ভুটানের জলবিদ্যুৎ সুবিধাকে কাজে লাগাতে আগ্রহী এবং ভুটান বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ও নদীপথ ব্যবহারে আগ্রহী। দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যের পরিমাণও ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোতে শেরিংয়ের চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফর দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ছিল অত্যন্ত আন্তরিক এবং নানা দিক থেকেই অত্যন্ত ফলপ্রসূ। সফরকালে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। স্বাস্থ্য, কৃষি, জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ ও পর্যটন খাতে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে ঐকমত্য হয়েছে। ভুটানের জলবিদ্যুৎ সুবিধাকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে বাংলাদেশ। ভুটান ১৫টি পণ্যে এবং বাংলাদেশ ১০টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে। আশা করা যায়, শিগগিরই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। ভুটান বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক নেওয়ার ব্যাপারেও আগ্রহ দেখিয়েছে।
ভুটান সম্পূর্ণরূপে একটি পর্বতময় দেশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অফুরন্ত লীলাভূমি। বাংলাদেশের মানুষের প্রবল আগ্রহ রয়েছে পার্বত্য এই দেশের প্রতি। আবার বিস্তীর্ণ সমতল, দিগন্তবিস্তৃৎত ফসলের মাঠ, দীর্ঘ উপকূল, অসংখ্য নদী-নালায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিও ভুটানবাসীদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। তাই পর্যটনশিল্প বিকশিত হলে উভয় দেশের মানুষের ভ্রমণসুবিধা যেমন বাড়বে, তেমনি সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের মাধ্যমে মানুষে মানুষে যোগাযোগ আরো ঘনিষ্ঠ হবে। ভুটানের নিজস্ব সমুদ্রবন্দর না থাকায় তাদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। খরচও অনেক বেশি হয়। বাংলাদেশের মোংলা বন্দর তাদের সবচেয়ে নিকট-দূরত্বে। এই বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পেলে তারা যেমন উপকৃত হবে, একইভাবে ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে ভুটান যে আগ্রহ দেখিয়েছে তার প্রতি একই আগ্রহ নিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। আমরা চাই, পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে দুই দেশই সমান তালে এগিয়ে যাক। ভুটান-বাংলাদেশের মধ্যকার ঐতিহাসিক সম্পর্ক অক্ষুণœ থাক এবং গভীর থেকে গভীরতর হোক।