রমজান মাস শুরুর আগেই দেশের বাজারে রোজাদারদের জন্য আবশ্যক বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার লক্ষণ দেখা দেয়। অতঃপর পুরো মাসে বর্ধিত মূল্যে সেসব পণ্য কিনতে হয়। অথচ মধ্যপ্রাচ্যে এবং বিশ্বের অন্যত্র মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে রোজার সময় জরুরি পণ্যগুলোর দাম কমে; না কমলেও স্থির থাকে। রমজানে আবশ্যক পণ্যের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কথা বলে ব্যবসায়ীরা। তবে সার্বিক বিচারে তাদের এ যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।
আন্তর্জাতিক বাজারে গত ছয় মাসে তেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, ডালসহ বেশ কিছু পণ্যের দরে তেমন অস্থিরতা দেখা যায়নি। বরং কিছু পণ্যের দাম পড়েছে। দেশে এসবের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে; ফলে স্বাভাবিক আছে এসবের বাজারদর। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট রমজান মাসে দর বাড়িয়ে দিতে পারে। এর মধ্যে মজুদ ও সরবরাহ ভালো থাকা সত্ত্বেও দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে। এবার দেশে পেঁয়াজের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। আমদানীকৃত পেঁয়াজের দামও স্বাভাবিক। তাহলে দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ কী? অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে, এ মূল্যবৃদ্ধি তারই লক্ষণ। শুধু পেঁয়াজ নয়, মাছ, মাংস, ডিম ও সবজির দাম বেড়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ১৮ লাখ টন; গত ৯ মার্চ পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে ১৪.৬৯ লাখ টন। আরো ১৭.৬৬ লাখ টন আমদানি করা হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছে, এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লেও স্থানীয় বাজারে সয়াবিনের দাম বাড়ার কারণ নেই। রমজানের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের হিসাবে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ লাখ টন। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৬ হাজার টন উৎপাদিত হয়েছে; ৯ মার্চ পর্যন্ত আমদানি করা হয়েছে ১০.৭৩ লাখ টন; আরো ১২.৪৭ লাখ টন চিনি আমদানি করা হবে। চিনি ব্যবসায়ীরাও বলছে, মজুদ পর্যাপ্ত, দাম বাড়ার কারণ নেই। উল্লেখ্য, গত বছরের তুলনায় দুটি পণ্যের আমদানিমূল্য কমেছে। রমজানে বেগুন, মরিচসহ কিছু পণ্যের দাম স্থির থাকে না। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এসবের সরবরাহ ঠিক থাকে না; ফলে দাম বাড়ে। রমজানে মাছ, মাংস, আদা-রসুনের দাম স্থির থাকবে কি না তাও নিশ্চিত নয়।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, দরে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। তারা এ সুযোগ পায় বাজার তদারকি সংস্থা যথাসময়ে যথাকাজ করে না বলে; দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত থাকে বলে। ভোক্তা আচরণও একটি কারণ। সিন্ডিকেট অকেজো রাখতে পারলে দর নিয়ন্ত্রিত রাখা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী বাজার স্থির রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। আশা করি তদারককারীরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে আন্তরিক হবে।