মো: আব্দুল মালিক
প্রখ্যাত দরবেশ হযরত বায়েজিদ বুস্তামি (র:) ১৪৬৩ খ্রি: ইসলাম প্রচারের জন্য সুদূর ইরাক হতে চট্টগ্রাম এসেছিলেন। তাঁর সহযাত্রীদের মধ্যে দরবেশ শেখ আউয়াল ছিলেন অন্যতম। ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। বহু বছর পর তাঁরই ৩য় অধ:স্তন পুরুষ শেখ বোরহান উদ্দিন ব্যবসার উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জ যান এবং সেখানকার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে স্থায়ী ভাবে বসতি স্থাপন করেন। শেখ বোরহান উদ্দিনের ৪র্থ অধ:স্তন পুরুষ শেখ লুৎফুর রহমানের ঔরসে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। বংশ পরস্পরায় দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলামের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল উত্তরাধিকারী মহান দরবেশ ও ইসলাম প্রচারক শেখ আউয়াল এর ৭ম অধঃস্তন বংশধর ছিলেন।
স্কুল জীবন থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান মুসলমানদের প্রাণের সংগঠন মুসলিম লীগের রাজনীতির প্রতি আগ্রহী ছিলেন এবং সাধ্যানুযায়ী ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মুসলিম সেবা সংঘের সেক্রেটারী, ১৯৩৯ সালে গোপালগঞ্জে মুসলিম ছাত্রলীগ ও মুসলিম লীগ গঠন, ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদান ও ১৯৪১ সালে মাদারীপুরে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৪১ সালে প্রবেশিকা পাশ করে কলিকাতায় নামী-দামী কলেজে ভর্তির সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪২ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগ ও মুসলিম ছাত্রলীগের উদ্যোগে যেসব আন্দোলন হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তার অগ্রভাগে। তিনি ১৯৪৩ সালে জাতীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এ পদে বহাল ছিলেন। ১৯৪৭ সালে তিনি ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলে শেখ মুজিবুর রহমান বছরের শেষ দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি তাঁর নেতৃত্বে মুসলিম ছাত্রলীগ গঠিত হয়। মৌলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিমলীগ গঠিত হলে জেলে থাকা অবস্থায় তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এসব ঘটনা প্রবাহ থেকে দেখা যায় তিনি সব সময় মুসলমানদের স্বার্থে পাকিস্তান আন্দোলনে মনেপ্রাণে জড়িত ছিলেন। “তখন রাজনীতি শুরু করেছি ভীষন ভাবে, বক্তৃতা করি, খেলার দিকে আর নজর নেই। শুধু মুসলিম লীগ আর ছাত্রলীগ। পাকিস্তান আনতেই হবে নতুবা মুসলমানদের বাঁচার উপায় নেই”। -(তখন মানে ১৯৪১ সালে মেট্রিক পরীক্ষার পর) অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৃষ্ঠা-১৫। উল্লেখ্য ১৯০৬ সালে মুসলিম নেতৃবৃন্দ যখন মুসলিম লীগ প্রতিষ্টা করছেন তখন পাকি স্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ভারতীয় কংগ্রেসে যোগদান করছেন দাদাভাই নওরোজির ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে। তবে শেখ মুজিবুর রহমান গোঁড়া মুসলমান ছিলেন না। এর প্রমান পাওয়া যায় “১৯৭০ সালের নির্বাচনে দেওয়া তাঁর বেতার ভাষণে। তিনি সেই ভাষণে ইসলাম সম্পর্কে বলেছিলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, আমরা ইসলামে বিশ্বাসী নই। এ কথার জবাবে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য, লেবেল সর্বস্ব ইসলামে আমরা বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হযরত রাসূলে করিম (সা:) এর ইসলাম। যে ইসলাম জগৎবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের প্রবক্তা সেজে পাকিস্তানের মাটিতে বরাবর যারা অন্যায় অত্যাচার, শোষন, বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছে, আমাদের সংগ্রাম সেই মুনাফেকদের বিরুদ্ধে”। তিনি আল্লাহর উপর কতটা আস্থাশীল ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে। তিনি বলেছিলেন, “রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ”। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের রাতে মৃত্যুর ভয়ে তিনি কোথাও পালিয়ে যান নি বা পাকিস্তানের কারাগারে যখন তাঁর জন্য কবর খনন করা হয় তখন তিনি মৃত্যুর ভয়ে ভীত না হয়ে বীরের মত বলেছেন, “তোমরা আমার লাশ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও”। ১৯৭২ সালে সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, “আমার বিশ্বাস সর্বশক্তিমান আল্লাহই সে দিন আমাকে রক্ষা করেছিলেন”। তিনি কখনো লেবাস সর্বস্ব ইসলামী আন্দোলনকারীদের মতো মৃত্যুর ভয়ে তোরাবোরা পাহাড়ে আত্মগোপন বা কারো কাছে প্রাণ ভিক্ষা প্রার্থনা করেন নি বা প্রাণের ভয়ে পালান নি।
বঙ্গবন্ধু অসাধারণ মানবীয় গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন। তিনি মনে-প্রাণে যেমন খাঁটি বাঙালি ছিলেন, তেমনি ছিলেন একজন ঈমানদার মুসলমান। তাঁর অন্তর ছিল ইসলামের উদারনৈতিক, অসাম্প্রদায়িক, সাম্য ও মৈত্রীর চিরন্তন আদর্শে উদ্ভাসিত। তাঁর ধর্ম পালনের বর্ণনা পাওয়া যায় কেন্দ্রীয় জেলের কারারক্ষী ‘হরমুজ আলী ও খোরশেদ এর বর্ণনা থেকে। তারা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জেলখানায় নিয়মিত নামায ও কুরআন তেলাওয়াত করতেন। জেলখানায় তাঁকে কেউ কোনদিন নামায কাযা করতে দেখেনি। যতই বিপর্যস্ত থাকুন না কেন, যথাসময়ে নামায আদায় করতেন। কারাগারের লাইব্রেরী থেকে নিয়মিত বিভিন্ন গ্রন্থ এনে পাঠ করতে দেখেছি। কারাভ্যন্তরে মাঝে মাঝে তিনি অন্যান্য ওয়ার্ডে চলে যেতেন। বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে বক্তৃতা দিতেন। বক্তৃতার সময় তিনি কুরআন শরীফের বহু আয়াত অর্থসহ ব্যাখ্যা করতেন। বঙ্গবন্ধুর নামায পড়ার জলচৌকিটি এখনও কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধুর ইবাদত বন্দেগীর স্বাক্ষর বহন করে চলেছে। বঙ্গবন্ধু জেলখানায় আসলে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নামাজির সংখ্যা বেড়ে যেত। তাঁর ভালোবাসার ও সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য বে-নামাজিরাও নামাজ পড়তে শুরু করত’।- (ইসলামি মূল্যবোধ ও বঙ্গবন্ধু।)
বঙ্গবন্ধু তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ইসলামের প্রচার-প্রসারে যে যুগান্তকারী অবদান রেখে গেছেন তা সমকালীন ইতিহাসে বিরল। তার সরকার যেসব কাজ করেছিল তা নি¤œরূপ :
(১) ইসলামের প্রচার-প্রসারে তাঁর যুগান্তকারী কাজগুলোর মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা অন্যতম। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক ফাউডেশন সরকারি অর্থে পরিচালিত মুসলিম বিশ্বের একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসলামের সেবায় বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। জনগণের মাঝে ইসলামের সঠিক শিক্ষা ও আদর্শ তুলে ধরার লক্ষে এ প্রতিষ্ঠান থেকে ইসলামের নানা বিষয়ে এ যাবৎ হাজার হাজার বই প্রকাশিত হয়েছে। আর্ত-মানবতার সেবায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেকগুলি ইসলামিক মিশন কাজ করে যাচ্ছে।
(২) পাকিস্তান আমলে হজ্বযাত্রীদের জন্য কোনো সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা ছিল না। বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে প্রথম হজ্বযাত্রীদের জন্য সরকারী তহবিল থেকে অনুদানের ব্যবস্থা করেন যা ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ পরবর্তী সরকার বন্ধ করে দেয়।
(৩) ইসলামী আকিদাভিত্তিক জীবন গঠন ও ইসলামী শিক্ষা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড পুনর্গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম বেতার ও টিভিতে অত্যন্ত গুরুত্ব ও মর্যাদার সাথে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও তাফসীর প্রচার শুরু হয়।
(৪) পাকিস্তান আমলে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাম ছিল রেসকোর্স ময়দান। এখানে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার নামে চলতো জুয়া, হাউজি ও বাজি ধরা প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বাজিতে হেরে অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে যেতো। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা বন্ধ করেন এবং রেসকোর্স ময়দানের নাম পরিবর্তন করে রাখেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
(৫) স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সর্বপ্রথম আলেম-ওলামাদের সংগঠিত করে পবিত্র ইসলামের সঠিক স্বরুপ জনগণের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর দিকনির্দেশনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকায় ‘সীরাত মজলিশ’ নামে একটি সংগঠনও প্রতিষ্ঠা করা হয়।
(৬) ইসলাম ধর্মীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুই প্রথম বাংলাদেশে ঈদে মিলাদুন্নবী (স.), শব-ই-কদর, শব-ই-বরাত উপলক্ষে ছুটি ঘোষণা করেন। উল্লেখিত দিনসমূহের পবিত্রতা রক্ষার জন্য সিনেমা হলেও চলচ্চিত্র প্রদর্শন বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পাকিস্তান আমলেও এ ব্যবস্থা ছিল না।
(৭) ইসলামে মদ, জুয়া, হাউজি ও অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। ইসলামের নামে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও পাকিস্তানের ২৪ বছরের শাসনামলে মদ, জুয়া, হাউজিং ও অসামাজিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ হয়নি। বঙ্গবন্ধুর সরকার প্রথম তা নিষিদ্ধ করে শাস্তির বিধান জারি করেন।
(৮) বায়তুল মোকাররম মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধণ ও এর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। বায়তুল মোকাররম মসজিদ যে ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত সেই তিন একর ভূমি মসজিদের নামে বরাদ্দ সহ নিলামিতে রেজিস্ট্রি করে মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে নিদের্শ দেন। এছাড়া তিনি বায়তুল মোকাররম মসজিদের পরিকল্পনা অনুযায়ি এর নির্মাণের অসমাপ্ত কাজ সরকারি কাজের অন্তর্ভূক্ত করে সমাপ্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
(৯) তাবলীগ জামাত একটি অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন। ইসলামের পথে দাওয়াত দেয়াই হচ্ছে এ সংগঠনের একমাত্র কাজ। এই সংগঠনটি যাতে বাংলাদেশে অবাধে ইসলামের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে এ উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু তাবলীগ জামাতের বিশ্ব এজতেমার জন্য টঙ্গিতে সুবিশাল জায়গা বরাদ্দ দেন। বঙ্গবন্ধু কাকরাইলে তাবলীগ জামাতের মারকাজ মসজিদের জন্য স্থান বরাদ্দ করেন এবং মসজিদটি তাঁরই নির্দেশে সম্প্রসারিত করা হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্ট রাশিয়ায় প্রথম তাবলীগ জামাত প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
(১০) ১৯৭৩ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আরব বিশ্বের পক্ষ সমর্থন করেন এবং এই যুদ্ধে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ তার সীমিত সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ অবদান রাখার চেষ্টা করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আরব ইসরাইল যুদ্ধে মজলুম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সমর্থনে বাংলাদেশ থেকে এক লক্ষ পাউন্ড চা, ২৮ সদস্যের মেডিকেল টিমসহ একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী ফিলিস্তিনে প্রেরণ করা হয়। আমেরিকার রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে যখন অনেক মুসলিম রাষ্ট্রের ইসরাইলের বিপক্ষে ও নির্যাতিত নিপীড়িত ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রকাশ্য অবস্থান নেওয়া সম্ভব হয় নাই তখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ ফিলিস্তিনি মুসলমানদের পক্ষে জোর সমর্থন জানিয়েছিল।
(১১) বঙ্গবন্ধু মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলনে যোগদান করেন। ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করে ইসলাম ও বাংলাদেশ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু মুসলিম নেতৃবৃন্দের সামনে যে বক্তব্য তুলে ধরেন এতে আরবসহ মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং মুসলিম বিশ্বের নেতৃবৃন্দের সাথে ভ্রাতৃত্বের সুদৃঢ় বন্ধন গড়ে উঠে।
বঙ্গবন্ধু ধর্মকে কখনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চাননি। তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল মানুষের স্ব-স্ব ধর্মের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ১৯৭২ সালের ৪ অক্টোবর খসড়া সংবিধানের উপর যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, সে আলোচনায় তিনি বলেন, “ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়, বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্ম-কর্ম করার অধিকার অব্যাহত থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মচর্চা বন্ধ করতে চাই না এবং তা করবোও না। মুসলমানরা তাদের ধর্ম-কর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রের কারো নেই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম-কর্ম পালন করবে, কেউ তাদের বাধা দিতে পারবে না। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম, খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কেউ তাদের বাধা দিতে পারবে না। আমাদের আপত্তি হলো এই যে, ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। যদি কেউ বলে যে, ধর্মীয় অধিকার খর্ব করা হয়েছে, আমি বলব, ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতার উৎস ছিল মদিনার সনদের সেই শিক্ষা যেখানে উল্লেখযোগ্য শর্ত ছিলো “মদিনার ইহুদি-নাসারা, পৌত্তলিক এবং মুসলমান সকলেই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে।”
ইসলামের খেদমতে বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে।