বাজার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় জুনে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বেশ কিছু পণ্য রয়েছে, যেগুলোর দাম প্রতি মাসেই দফায় দফায় বেড়েছে। ভোজ্য তেলের দাম নিয়ে ভোক্তার অস্বস্তি অনেক দিনের।
পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। আমদানির পরও খুচরা বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। বাজারে সরবরাহ নেই, এই অজুহাতে আদার দাম বাড়ানো হয়েছে অনেক আগেই। গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, পবিত্র ঈদুল আজহা ঘিরে মসলার বাজারে উত্তাপ ছড়াচ্ছে জিরা ও এলাচ।
দাম বেড়েছে দেড় থেকে তিন গুণ। পাইকারি বাজারে এখন প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। বিভিন্ন হাত ঘুরে এই জিরা খুচরা পর্যায়ে এক হাজার টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। গত এপ্রিলে একই জিরা বিক্রি হয় ৪০০ টাকা কেজি দরে।
গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৩৫০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারে গুয়াতেমালার এলাচ মানভেদে এক হাজার ২৫০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতের এলাচ এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লবঙ্গের দামও বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। খাতুনগঞ্জে চলতি সপ্তাহে কেজিতে ৭০০ টাকা বেড়ে লবঙ্গ এক হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রতি কেজি চিনি ১৩৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, এখানে বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায়। এই সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, এমন কথাও চালু আছে। বাংলাদেশের বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই কোনো উপলক্ষ প্রয়োজন পড়ে না।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট, শুল্কহার বৃদ্ধির কারণে এলাচ ও জিরার আমদানি এবার কম হয়েছে। এ কারণে এসব মসলার দাম বাড়তি। কোরবানির ঈদে এমনিতেই মসলার চাহিদা বেশি থাকে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, কোরবানি ঘিরে চাহিদা বেশি থাকে; সে অনুযায়ী তো আমদানি হয়নি। ফলে দাম বাড়তি। কোরবানির পর দাম কমে যাবে। অনেকে মনে করছেন, মসলার বাজারে চোরাচালান বেড়েছে। মসলার প্রকৃত আমদানিকারকরা মসলা থেকে দূরে সরে গেছেন চোরাচালানের কারণে। ঋণপত্র খুলতে কড়াকড়ি, ডলার সংকট এবং শুল্কহার বাড়িয়ে দেওয়ায় মসলা পণ্যের দাম বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঈদে পণ্যমূল্য যাতে ভোক্তাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে তার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মনিটরিং বাড়াতে হবে। পণ্য যেন ভোক্তা সাধারণের কাছে সহজলভ্য হয়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। আমরা আশা করব, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাবিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।