কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রথম ধাপে ৭৮ উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে আজ রবিবার। ইসি জানায়, ৮৭ উপজেলায় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হলেও শেষ মুহূর্তে ছয়টি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হচ্ছে না। কমিশন জানায়, প্রতিটি ভোটার যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সকাল আটটা থেকে ভোট গ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কোন বিরতি ছাড়াই ভোট চলবে বেলা চারটা পর্যন্ত। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে প্রথম ধাপে নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৫ এবং ভাইস চেয়ারম্যান ৬, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। যেসব উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন সেখানে শুধু ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট নেয়া হবে। এ ছাড়া যেসব উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন সেখানে অন্য দুটি পদে ভোট নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম দফায় ৭৮ উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৫০। মোট ভোটকেন্দ্র ৫ হাজার ৮৪৭। প্রথম ধাপে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ৮৪২ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২০৭, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩৮৬, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪৯ প্রার্থী।
আইন অনুযায়ী উপজেলার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হলেও এবারে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল না আসায় শুধু চেয়ারম্যান পদেই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য কাউকে দলীয় প্রতীক দেয়া হয়নি। এই পদে নির্বাচন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে মূলত নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ অনুষ্ঠানের জন্য। মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের পাশাপাশি দলের বিদ্রোহীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। নির্বাচনে বিএনপি না আসায় কেন্দ্র থেকে এসব বিদ্রোহীর প্রতিও নমনীয় ভাব প্রদর্শন করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
গত বছর ৩০ ডিসেম্বর হয়েছে একাদশ জাতীয় নির্বাচন। ওই নির্বাচনে বিএনপির ব্যাপক ভরাডুবির পর থেকে দলটি উপজেলায় নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে দল থেকে কাউকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তবে তৃণমূলে দলের অনেক প্রার্থী কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন। দলের মনোনয়ন না থাকায় তারা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে রয়েছেন। যারা দলের আদেশ অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এমন ১শ’র বেশি প্রার্থীকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করে।
ইসি জানায়, সারাদেশে পাঁচ ধাপে ৪৮০ উপজেলায় নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে চার দফায় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দফায় আজ ৭৮ উপজেলায় ভোট নেয়া হচ্ছে। আগামী ১৮ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ১২৪, ২৪ মার্চ তৃতীয় দফায় ১২৯ এবং ৩১ মার্চ চতুর্থ দফায় ১২২ উপজেলায় ভোট নেয়া হবে। ইসি জানিয়েছে প্রথম দফায় ৮৭ উপজেলায় ভোট গ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হলেও শেষ মুহূর্তে এসে আদালত এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ছয়টি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে। বিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় তিনটি উপজেলায় কোন পদে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন পড়ছে না। ফলে ৭৮ উপজেলায় আজ রবিবার সকাল থেকেই ভোট গ্রহণ করা হচ্ছে।
ইসি জানিয়েছে, ভোট গ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ব্যালট পেপারসহ যাবতীয় নির্বাচনী মালামাল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছানো হয়েছে। সেখান থেকে শনিবার রাতে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রে পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় এবং ভোট কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসারের বিপুল পরিমাণ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের একজন অফিসারসহ আনসারের ১৫-১৬ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভোট গ্রহণের আগে পরে মোট ৫ দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া নির্বাচনী এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, র্যাব, কোস্টগার্ড ও বিজিবির মোবাইল ও স্টাইকিং ফোর্সও মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়াও আচরণবিধি সঠিকভাবে প্রতিপালনের জন্য প্রতি উপজেলায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ দমনে প্রতি ইউনিয়নের জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৫ দিন দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য ভোট গ্রহণের তিনদিন আগ থেকেই ভোট গ্রহণের পরদিন পর্যন্ত প্রতি উপজেলায় একজন করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ইসি জানিয়েছে, উপজেলা নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিংয়ের জন্য প্রতি উপজেলায় রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে ২ দিনের জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়েও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। উপজেলায় কোন ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেলে এই সেলের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কেউ যদি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করে, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন ভোট কেন্দ্রে অনিয়ম হলে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকেও দায়ী করা হবে। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে যারা থাকবেন তাদেরও দায়ী করা হবে। কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনী এলাকায় ভোটের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে ভোটের ৭ দিন আগে থেকে বৈধ অস্ত্র লাইসেন্সধারীদের বহন, প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনকে সব ধরনের প্রভাবমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচনী এলাকায় শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শনিবার রাত ১২টা থেকে রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত একদিনের জন্য ভোটের এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। জরুরী যান চলাচল করবে কেবল অনুমতি সাপেক্ষে। তবে সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, প্রার্থী, প্রার্থীদের এজেন্ট, নির্বাচন কর্মকর্তার গাড়ি নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
তিন উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত : এদিকে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে স্থানীয় এমপিদের নির্বাচনের প্রভাব খাটানোর অভিযোগে তিন উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এসব উপজেলায় আজ রবিবার নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। প্রভাব খাটানোর অভিযোগে স্থগিত করা উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে লালমনিরহাটের আদিতমারী, নেত্রকোনার পূর্বধলা ও সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলা। শুক্রবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠার পর নয়জন সাংসদকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশনা দিয়েছিল ইসি। তাতেও কাজ না হওয়ায় এবার তিন উপজেলার ভোট স্থগিত করে দিতে হলো নির্বাচন কমিশনকে। ওই আট সাংসদের মধ্যে সুনামগঞ্জ-২ আসনের জয়া সেনগুপ্ত, কুড়িগ্রাম-৩ আসনের এম এ মতিন, হবিগঞ্জ-৩ আসনের মোঃ আবু জাহির, কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগর, সুনামগঞ্জ-১ আসনের মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ও লালমনিরহাট-১ আসনের মোতাহার হোসেনকে শুক্রবারের মধ্যে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করতে চিঠি দেয়া হয়েছিল। তার আগে রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী, নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস ও নেত্রকোনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালকে অবিলম্বে নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বলেছিল ইসি।
ইসির যুগ্মসচিব ফরহাদ বলেন, প্রভাবমুক্ত নির্বাচন করতে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে ব্যর্থ হওয়ায় লালমনিরহাটের ওসিকে প্রত্যাহার করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রভাব খাটানোর অভিযোগে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের এপিএস মিজানুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি।
এছাড়া উচ্চ আদালতের আদেশ তিন উপজেলায় শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এসব উপজেলার মধ্যে রয়েছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও রাজশাহীর পবা। এছাড়াও জামালপুরের মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ এবং নাটোরের সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীরা বিনা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এই তিন উপজেলায় ভোট গ্রহণের প্রয়োজন পড়ছে না। ফলে এই তিন উপজেলায় আজ ভোট গ্রহণ হচ্ছে না।