সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ জান্নাত ফার্মেসিতে লুটপাটের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি

40

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় মেসার্স জান্নাত ফার্মেসিতে সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ওই ফার্মেসির স্বত্তাধিকারী মো. গোলাম আজম। একই সঙ্গে তিনি লুটকৃত মালামাল উদ্ধার এবং আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান তিনি। গোলাম আজম নগরীর দক্ষিণ কাজলশাহ’র ৪ নং রোডের ৫৩ নং বাসার মৃত ডা. কামরুল হুদার ছেলে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ২০ বছর আগে শাহপরাণ থানার উত্তর বালুচর এলাকার আব্দুল হামিদের নিকট থেকে তিনি যথাযথ নিয়মে দোকান কোঠা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। ভাড়ার চুক্তিপত্রের মেয়াদ ৩নং দোকানকোটার ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি এবং ৪নং দোকানকোটার ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ রয়েছে। কিন্তু আব্দুল হামিদের মৃত্যুর পর ভাড়ার টাকা কে পাবে এ নিয়ে তার ৪ পুত্রের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। একপর্যায়ে তারা ফার্মেসিতে রাতের অন্ধকারে তালা লাগিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানায় প্রথমে জিডি এবং পরে মামলা করলে আদালতের আদেশে পুলিশ এসে তালা খুলে দেয়। পরবর্তীতে ভাড়া প্রদানের বিষয়টি নিয়ে রেট কন্ট্রোল মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে ভাড়া প্রদান করে আসছেন।’
গত ১৭ মে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে কামরুল হাসান রুমেল গংরা অজ্ঞাতনামা আরও শ’ দেড়শ সন্ত্রাসী নিয়ে দোকান এবং পার্শ্ববর্তী বাসা ঘেরাও করে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ফার্মেসিতে হামলা চালায়। ফার্মেসিতে প্রবেশ করে আমার ম্যানেজার স্বপন গোস্বামীকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে ফার্মেসির উপরে দোতলায় অবস্থিত চৌধুরী আবাসিক হোটেলে একটি টয়লেটে বন্দি করে রাখে। আমরা যাতে বাসা থেকে বের হতে না পারি এজন্য বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দেয় সন্ত্রাসীরা।’
এ সময় তারা ফার্মেসির দক্ষিণ দিকের দেয়াল ভেঙ্গে এবং উত্তর দিকের সার্টার ভাঙচুর করে যাবতীয় ওষুধপত্র, আসবাবপত্র, জায়গার দলিল, ব্যবসায়িক লাইসেন্স, বকেয়া খাতাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লুট করে নিয়ে যায় এবং প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। হামলার সময় সন্ত্রাসীরা সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে এবং এনভিআর মেশিন ও হার্ডডিস্কসহ ক্যামেরাগুলো নিয়ে যায়। লুন্ঠিত মালামাল, নগদ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রিসহ প্রায় ২ কোটি ৭৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার ক্ষতিসাধিত হয়। তারা ফিল্মি স্টাইলে সমস্ত মালামাল মিনি ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও লাইটেসে তুলে নিয়ে যায়। এবং কিছু ওষুধ ফার্মেসীর দোতলার আবাসিক হোটেলের দুটি কক্ষে নিয়ে রাখে। প্রায় ১ ঘন্টা তান্ডবলীলা চালিয়ে তারা চলে গেলে আশপাশের লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে কামরুল হাসান রুমেল ও কামরুল নাকিব মাফরুজসহ আরও অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আটক করে।’
তিনি বলেন, পুলিশ আসার পর আমার ভাই মো. আনিসুল ইসলাম মুকুল এলাকার মানুষের সহযোগিতায় আমাদেরকে উদ্ধার করে। এ বিষয়ে আমি বাদী হয়ে গত ২৮ মে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করি। যার নম্বর ৪৬/২২৩। মামলায় মৃত আব্দুল হামিদের চার পুত্রের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০০/১৫০ জনকে আসামি করি। কোতোয়ালি থানা পুলিশ এখন পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করে যাচ্ছে। তবে আসামি পক্ষ অর্থবিত্তে প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাদের পক্ষেই সাফাই গাইছে। তার ধারণা কোতোয়ালি থানা পুলিশের তদন্তে মূল ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মামলাটি পিবিআই কিংবা ডিবি পুলিশের মাধ্যমে তদন্ত করলে সত্যতা বের হয়ে আসবে।’
তিনি বলেন, আসামিরা বিপুল টাকার বিনিময়ে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম মিয়া ও পদ্মা ব্যবসায়ী সমিতির কিছু সংখ্যক নেতৃবৃন্দের স্বেচ্ছাচারিতা বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে গত ২ জুলাই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে আইজিপি বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আইজিপি অভিযোগটি আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন তিনি।