শাহিদ হাতিমী
১৯তম রমজানের রোজার ফজিলত সর্ম্পকে হাদিসে এসেছে, ’পৃথিবীর সকল পাথর-কংকর টিলা- টংকর রোজাদারের জন্য দোয়া করতে থাকে।’ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সা. রমজান মাসে এই দোয়াগুলো পড়তেন। ‘আলবালাদুল আমিন’ ও ‘মিসবাহুল কাফআমি’ নামক গ্রন্থে রয়েছে এই দোয়াগুলো। রমজান আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মাস। ১৯ তম রোজার দোয়া: হে আল্লাহ! আমাকে এ মাসের বরকতের অধিকারী কর। এর কল্যাণ অজর্নের পথ আমার জন্য সহজ করে দাও। এ মাসের কল্যাণ লাভ থেকে আমাকে বঞ্চিত করো না। হে স্পষ্ট সত্যের দিকে পথ নির্দেশকারী, আল্লাহ।
আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল, যাতে তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)। এই আয়াতের ভিত্তিতে আল্লাহ তাআলা ৬২৪ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক দ্বিতীয় হিজরিতে রমজান মাসের রোজা পালনের বিধান জারি করেছেন। যার ফলশ্রæতিতে আমরা রমজানের ফরজ বিধান আদায় করছি।
আল্লাহ যখন তার প্রিয় বান্দাকে কোনো কিছু দান করার ইচ্ছাপোষন করেন; তখন তাকে পরীক্ষা করেন এবং আল্লাহর প্রতি বান্দার কতটুকু মহব্বত বা আনুগত্য রয়েছে তাও দেখেন।
যেমন পরীক্ষা করেছিলেন হযরত মুসা আলাইহিস সালামকে। আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেন- ‘মুসা (আলাইহিস সালাম) কে আমি ত্রিশ রাত-দিনের জন্য (সিনাই পর্বতের উপর) ডাকলাম এবং পরের দশ দিন আরও বাড়িয়ে দিলাম। এভাবে তার রবের নির্ধারিত সময় পূর্ণ চল্লিশ দিন হয়ে গেলো। (সুরা আরাফ : আয়াত ১৪২)।
প্রখ্যাত মুফাসসির সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম জিলক্বদ মাসের ত্রিশ দিন এবং জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিন রোজা পালন করে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হন এবং তাওরাত কিতাব লাভ করেন।
হযরত সালমান ফারসি রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার শা’বানের শেষদিনে আমাদেরকে উপদেশ দিয়ে বলেন, হে লোক সকল! একটি মহান মাস, একটি কল্যাণবহ মাস তোমাদের কাছে সমাগত, এটি এমন একটি মাস যাতে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। আল্লাহ তাআলা এই মাসের (দিনের বেলায়) রোজা ফরজ করেছেন এবং (রাতের বেলায়) নামাজ আদায়কে পুণ্যের কাজ বলে ঘোষণা নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করবে সে ওই ব্যক্তির সমমর্যাদার হবে যে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করে। এটি সবর তথা ধৈর্যের মাস, আর ধৈর্যের এমন এক গুণ রয়েছে যার প্রতিদান হলো জান্নাত। এটি পারস্পরিক সহানুভ‚তির মাস। এটি সেই মাস যাতে মুমিন বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। এটি এমন এক মাস যার প্রথম অংশ রহমতের, দ্বিতীয় অংশ মাগফিরাতের বা ক্ষমার এবং শেষাংশ জাহান্নাম থেকে মুক্তির। যে ব্যক্তি এই মাসে নিজের অধীনস্থদের কাজ-কর্মকে হালকা করে দেয়, আল্লাহ তায়ালা তাকে মাফ করে দেবেন এবং পরিশেষে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন (বায়হাকি)।
আগামীকাল সূর্যাস্তের আগে যারা রমজানের শেষ দশক এতেকাফের নিয়ত করেছেন তারা নির্ধারিত স্থানে এতেকাফে বসবেন। এতেকাফ আরবি ‘আকফ’ মূল ধাতু থেকে গঠিত একটি শব্দ। আকফ শব্দের অর্থ হলো অবস্থান করা। এতেকাফ শব্দের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে স্থির থাকা, আবদ্ধ থাকা, অবস্থান করা। শরিয়তের পরিভাষায় নির্ধারিত সময়ে সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে পার্থিব ও জাগতিক সব ধরনের সংস্পর্শ ত্যাগ করে মসজিদে অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে। সুতরাং উপরোক্ত কুরআন হাদিস মোতাবেক আমরা এই মাগফেরাতের দশকের শেষদিকে আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হই। নিজেদেরকে তার প্রিয় বান্দা হয়ে রমজানের কল্যাণ, বরকত, মাগফেরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করাতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদেরকে মাগফেরাতের দশকে ক্ষমা করুন এবং রামাজানে পরিপূর্ণ আমল করার তৌফিক দিন। আমীন।