‘আকাশে শান্তির নীড়’ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে যাত্রা শুরু করা বিমান এখন অনিয়মে ডুবতে বসেছে। পৃথিবীকে ছোট করে আনার চেষ্টা করতে গিয়ে ছোট হয়েছে বিমানের পৃথিবী। একের পর এক বিমান আনা হয়েছে। কিন্তু লোকসান থেকে বের করে আনা যায়নি সংস্থাটিকে। সাম্প্রতিক ‘বিমান ছিনতাইচেষ্টা’র ঘটনা ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে আনা প্রায় ৮১ কেজি সোনা উদ্ধারের পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তার প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠিত প্রাতিষ্ঠানিক টিম বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির ১৯টি উৎস চিহ্নিত করেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে বিমান ক্রয় ও লিজ নেওয়া, টিকিট বিক্রি, কার্গোতে আমদানি-রপ্তানি, ক্যাটারিং খাতসহ আটটি দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব দুর্নীতি বন্ধে আট দফা সুপারিশও করা হয়েছে। অন্যদিকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ক্রয় খাত, সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, নির্মাণ ও উন্নয়নমূলক কাজ, কনসালট্যান্ট নিয়োগ, বিমানবন্দরের স্পেস বা স্টল ও বিলবোর্ড ভাড়া, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজসহ ১১টি খাতে দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করে ১১টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করা হয়েছে।
বিমান ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন এমন সবাই জানেন বিমান লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কত বড় ধরনের দুর্নীতি করে থাকেন। এমনকি বিমান লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়, তার বেশির ভাগই রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানের বিপক্ষে যায়। এ কারণে আজ পর্যন্ত কোনো মামলায়ই জিততে পারেনি বিমান। আর এসব করা হয় জেনেশুনে। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমান, বিমানের স্পেয়ার পার্টস গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট, কেনা ও লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও বিমানের সঙ্গে লিয়াজোঁ করার নামে মধ্যস্বত্বভোগী ফার্ম ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কতিপয় বোর্ড ডিরেক্টরকে অনৈতিকভাবে ‘ম্যানেজ’ করে পরস্পর যোগসাজশে মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়। আবার দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বেবিচকের দুর্নীতির চিত্র। দুদক দেখতে পেয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রচুর সম্পত্তি অবৈধ দখলে রয়েছে, যেখান থেকে সুবিধা আদায় করছেন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজ যেনতেনভাবে শেষ করার প্রবণতাও রয়েছে। নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ারও প্রমাণ মিলেছে। আবার প্রয়োজন না থাকলেও মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হয়।
এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদক যে সুপারিশগুলো করেছে, তা বাস্তবায়নে দরকার উদ্যোগী মানুষ। তেমন মানুষ কি বিমান ও বেবিচকে খুঁজে পাওয়া যাবে? দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করার পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদেরও চিহ্নিত করা প্রয়োজন। দুর্নীতির পাশাপাশি দুর্নীতিবাজদের উত্খাত করতে পারলেই ঘুরে দাঁড়াবে বিমান ও বেবিচক।