জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০১৮ সালে দেশে ঋণখেলাপির সংখ্যা দুই লাখ ৬৬ হাজার ১১৮ জন। এর মধ্যে ২০ শীর্ষ ঋণখেলাপির নামও সংসদে জানিয়েছেন তিনি। আরো জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ২৮৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্যে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সে বিষয়েও সংসদকে অবহিত করেছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর দেওয়া তথ্য মতে, খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনগুলো পর্যালোচনা ও সংস্কারের নিমিত্তে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে। এ ছাড়া আইনি কাঠামোর আওতায় খেলাপি ঋণ আদায় প্রক্রিয়া গতিশীল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের নিমিত্তে আইন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংকগুলো এবং বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের মধ্যে সভাও হয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণ একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক লাভের আশায় বিনিয়োগ করবে, এটিই স্বাভাবিক। বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ হচ্ছে ঋণ। কিন্তু সেই ঋণ কোথায় দেওয়া হচ্ছে, সেটি ঋণ দেওয়ার আগে দেখে নেওয়াটাও সব ব্যাংকের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যেকোনো ঋণ প্রস্তাব আসার পর অনেক ধাপ পেরিয়ে তবেই ঋণ পাস হয়। ঋণ পাস হওয়ার আগে গ্রহীতার ঋণ গ্রহণের যোগ্যতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখার নিয়ম রয়েছে। যোগ্যতা ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ব্যাংকগুলো সন্তুষ্ট হলেই শুধু ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরও কেন ঋণখেলাপি হচ্ছে, সেই কারণগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হলে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকে খেলাপি ঋণ হবে না। আবার খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হলে ভবিষ্যতে ঋণখেলাপির সংখ্যা কমে আসবে। ব্যাংকের টাকা নিলে তা পরিশোধ করতে হয়—এই ধারণা সবার মধ্যে স্পষ্ট করতে হবে। অন্যথায় খেলাপি ঋণের অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তি মিলবে না। একটি ভুল বিনিয়োগ যে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংককে পথে বসিয়ে দিতে পারে তার উদাহরণ এ দেশে আছে। সুতরাং সময় থাকতে সাবধান হওয়া দরকার। খেলাপি ঋণের বিপুল অঙ্কের টাকা সঠিক বিনিয়োগ করা গেলে দেশের অর্থনীতিতেও তা ভূমিকা রাখতে পারবে। আমরা আশা করব, ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ আদায়ে বিশষভাবে তৎপর হবে।