চলছে বসন্ত। তবে গরম-ঠান্ডার মিশেলে আবহাওয়া এখনও রয়ে গেছে শীতল হাওয়ার আমেজ। সকালে ছিল মিষ্টি রোদ। সে রোদ গায়ে মেখে সকাল আটটা বাজার আগেই নগরের চৌহাট্টা এলাকার সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ মাঠে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। হুড়মুড় করে মাঠের এপাশ থেকে ওপাশে ছোটাছুটি করতে থাকে খুদে গণিতবিদেরা। সাড়ে আটটার মধ্যেই ৭শ’ শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে প্রাঙ্গণ। শিক্ষার্থীদের কোলাহল আর আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মুহূর্তেই মিলনমেলায় রূপ নেয় ‘ডাচ-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব’।
গতকাল শুক্রবার দিনভর সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় থেকে দ্বাদশ শ্রেণির সাত শ শিক্ষার্থীর আনন্দঘন উপস্থিতিতে সিলেট আঞ্চলিক গণিত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবে খুদে গণিতবিদদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দেশসেরা গণিতবিদেরাও উপস্থিত ছিলেন। উৎসবে শিক্ষার্থীরা গণিতের জন্য নিজেদের ভালোবাসার কথা জানিয়েছে।
সকাল নয়টার দিকে প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের সাংস্কৃতিক দলের সদস্যদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসব। এ সময় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি। জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাস এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের পতাকা উত্তোলন করেন বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য জুনায়েদ কামাল। পরে ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকা-ে হতাহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
হতাহতদের স্মরণে জাতীয় পতাকা ও অন্যান্য পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। পরে অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর শিক্ষার্থীরা ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিটের পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষা শেষে বেলা সাড়ে ১১টায় কলেজের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব। এতে শিক্ষার্থীরা গণিত বিষয়ে অজানা নানান প্রশ্ন করে। শিক্ষার্থীদের নানান প্রশ্নের উত্তর দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস, মো. রাশেদ তালুকদার, সহযোগী অধ্যাপক চন্দ্রানী নাগ, এমসি কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. গিয়াস উদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর রায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রভাষক অমিত চক্রবর্তী, এমসি কলেজের প্রভাষক সাগর বিশ্বাস ও দিলীপ চন্দ্র রায়।
শিক্ষার্থীদের মজার ও গঠনমূলক প্রশ্ন করার জন্য পুরস্কার হিসেবে শিক্ষার্থীদের ‘কিশোর আলো’ পত্রিকা উপহার দেওয়া হয়। প্রশ্নোত্তর পর্ব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও উপভোগ করেন। বেলা একটায় প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে এক ঘণ্টা বিরতির পর বেলা দুইটায় পুরস্কার বিতরণী ও বক্তৃতা পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। পুরস্কার বিতরণী ও বক্তৃতা পর্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের নিজস্ব প্রতিবেদক উজ্জ্বল মেহেদী। এ সময় প্রশ্নোত্তর পর্বে থাকা আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে যোগ দেন সিলেট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুহাম্মদ হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি ও উপাধ্যক্ষ ফাহিমা জীন্নুরায়েন। এ পর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন বন্ধুসভা সিলেটের সভাপতি শাহ সিকান্দর শাকির।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের শুরুতে শিক্ষার্থীরা সম্মিলিত কন্ঠে মাদক, মুখস্ত ও মিথ্যাকে হাত তোলে ‘না’ বলেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিজ্ঞানের ভাষা গণিত। গণিতকে মাদার অব সায়েন্স বলা হয়। আগে গণিতকে আতঙ্কের নাম মনে করা হলেও এখন গণিত নিয়ে উৎসব হয়। ‘গণিত শেখো, স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে প্রথম আলোর শুরু করা গণিত উৎসবের সঙ্গে এখন আরও নানা উৎসব হয়। বক্তারা মাদক, মুখস্ত ও মিথ্যা তিন ‘ম’কে না বলার পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তির খারাপ দিককেও ‘না’ বলার আহ্বান জানান।
অতিথিদের বক্তব্য শেষে আয়োজকদের পক্ষ হতে সিলেট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের হাতে ভ্যানু স্মারক তুলে দেন। সবশেষে চারটি ক্যাটাগরিতে বিজয়ী ৬২ জনের নাম ঘোষণার পাশাপাশি তাদের মেডেল ও উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি