স্টাফ রিপোর্টার :
কানাইঘাটের হাবিবুর রহমান উরফে হুরুহুনা হত্যা মামলায় সিআইডির দায়েরকৃত প্রতিবেদন পক্ষপাতমূলক ও অসত্য দাবি করে নিরপেক্ষ কোনো সংস্থা দিয়ে তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন নিহতের মা সায়বান বিবি। মঙ্গলবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন। এ সময় তিনি তার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপও কামনা করেন।
লিখিত বক্তব্যে কানাইঘাট উপজেলার সাতবাক ইউনিয়নের চড়িপাড়া গ্রামের মৃত আবু ছিদ্দেকের স্ত্রী সায়বান বিবি বলেন, ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর রাতে আমরা পরিবারের সবাই খাবার খাচ্ছিলাম। এমন সময় কয়েকজন অপরিচিত লোক বন্দুক নিয়ে আমাদের বসতঘরে প্রবেশ করে আমার ছেলে ফয়জুর রহমানকে খুঁজতে থাকে এবং মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এ সময় আমরা চিৎকার চেচামেচি শুরু করলে বন্দুকদারীরা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এতে আমার ছেলে ফয়জুর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে আমার আরেক ছেলে হাবিবুর রহমান উরফে হুরুহুনা এগিয়ে এসে ফয়জুর রহমানকে জড়িয়ে ধরে। এ সময় বন্দুকদারীরা আবারও গুলি ছুঁড়লে হুরুহুনার মাথা, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। আমাদের চিৎকার শুনে পাশের বাড়ির জালাল উদ্দিনের পুত্র কামরুল ইসলাম এগিয়ে আসলে তার উপরও গুলি চালানো হয়। একপর্যায়ে বন্দুকধারীরা নিজেদেরকে কানাইঘাট থানার এসআই আবু কাওছার, কনস্টেবল পারভেজ, বশির আহমদ, রাজ্জাক নূর বলে পরিচয় দেয়।
তিনি বলেন, তারা আমার ছেলে হুরুহুনার লাশ ও গুলিবিদ্ধ ফয়জুর রহমানকে একটি সিএনজি অটোরিক্সা করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় কয়েক রাউন্ড গুলি করে তারা এলাকায় আতংক সৃষ্টি করে। আমরা থানায় গেলে থানার ওসি আব্দুল আহাদ আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং রাত তিনটার দিকে আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালান পুলিশ সদস্যরা। পরদিন ২২ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে হুরুহুনার লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে পুলিশ এবং তাৎক্ষণিক দাফন সম্পন্ন করতে চাপ দেয়। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর আমার পুত্রবধূ ফারহানা আক্তার বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে। যার নং ৩৭১। মামলায় এসআই আবু কাউছার, কনস্টেবল পারভেজ মিয়া, এসআই বশির আহমদ, কনস্টেবল রাজ্জাক নূর ও ওসি আব্দুল আহাদসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। এদিকে আমার ছেলে হত্যায় সরাসরি জড়িত এসআই আবু কাউছার বাদী হয়ে উল্টো আমাকে ও আমার ছেলেদেরসহ মোট ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১২/১৩ জনকে আসামি করে পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করে। আমার অপর ছেলে আহত ফয়জুর রহমানকে আটকে রেখে এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। পুলিশের দায়ের করা মিথ্যা এ মামলায় আমার ছেলে আব্দুর রহমান ও প্রতিবেশি এমদাদকে আসামি করা হয়। অথচ তারা ঘটনার সময় নিজ নিজ কর্মস্থল সিলেটে অবস্থান করছিলেন। এই মামলার কারণে নিরীহ অনেকে আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে খুবই অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছেন। মামলার আসামি এমদাদ ভিসা থাকার পরও এ মামলার কারণে বিদেশ যেতে পারেনি। ফলে আর্থিকভাবে সে বিশাল অংকের ক্ষতির মুখে পড়ে।
সায়বান বিবি বলেন, গত ১৭ জানুয়ারি সিলেট জেলা সিআইডি পুলিশের এসআই আবু বকর সিদ্দিক সম্পূর্ণ প্রভাবিত হয়ে ও পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন। ন্যায় বিচার নিয়ে শুরু থেকেই আমাদের মধ্যে একটি আশংকা ছিল যা এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। প্রতিবেদনে সিআইডির এসআই আবু বকর সিদ্দিক নির্মম ও পৈশাচিক এ হত্যাকান্ডের হোতাদের মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের সুপারিশ করেছেন। যা নিন্দনীয় ও আমাদের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক। তিনি এ হত্যাকান্ডের দায় উল্টো আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। আমরা তার এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজী আবেদন দাখিল করবো। এ অবস্থায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে মামলাটি নিরপেক্ষ কোনো সংস্থা দিয়ে তদন্তের ব্যবস্থা করা এবং অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, আইজিপি ও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।