কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজনীতিতে টিকে থাকতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসছে জামায়াত। এ জন্য একাধিক বিকল্প পথে এগিয়ে যেতে চাচ্ছে তারা। প্রথমত একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চেয়ে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে জামায়াত নামে রাজনীতি করা যায় কি না। দ্বিতীয়ত দলের নীতি-আদর্শে আমূল সংস্কার করে নতুন নামে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন গ্রহণ। অন্যথায় কোন সামাজিক সংগঠনের প্লাটফর্মে গোপনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া।
সূত্র জানায়, বর্তমান ধারার রাজনৈতিক আদর্শ ধারণ করে জামায়াত দেশের মাটিতে আর রাজনীতি করতে পারবে না এমনটি আঁচ করেই কৌশল পরিবর্তন করে দলটি। এ জন্য প্রথমেই নানা মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে একাত্তরের ভূমিকার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে জামায়াত নামেই রাজনীতি করা যায় কিনা সে চেষ্টা করবে। কিন্তু এ চেষ্টায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর আদালতের রায়েও দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে। আবার কেউ বলছে বড় ধরনের সমাবেশ ডেকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে সে ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার এবং স্বাধীনতাকামী মানুষ ক্ষমা করেও দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতেরই রাজনৈতিক ও নীতিগত পরাজয় হবে।
দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে জামায়াত দলের নীতি-আদর্শে আমূল সংস্কার এনে নতুন নামে দলের নিবন্ধন নেয়ার চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আধুনিক ইসলামী দলগুলোর অনুসরণে দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবে। এছাড়া এখন আর তারা স্বাধীনতার বিপক্ষের রাজনৈতিক দল নয় তা প্রমাণ করতে বিভিন্ন সময়োপযোগী কর্মসূচী পালন করবে। দলের অধিকাংশ তরুণ নেতা এমনটিই চায় বলে জানা গেছে। তবে পর্যবেক্ষক মহলের মতে যা কিছুই করুক না কেন অতীত কর্মকান্ডের জন্য জামায়াত দেশের মানুষের কাছ থেকে কখনও সহানুভূতি পাবে না।
শেষ পর্যন্ত বর্তমান নামে কিংবা নতুন নামে নিবন্ধন নিয়ে রাজনীতি করতে না পারলে জামায়াত কোন সামাজিক সংগঠনের নিবন্ধন নিয়ে ওই প্ল্যাটফর্মে গোপনে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করবে। তবে এ ক্ষেত্রেও তারা আগের মতো আর সুসংগঠিত থেকে কাজ করতে পারবে না বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। কারণ, জামায়াত নেতাকর্মীদের কর্মকান্ডের প্রতি কঠোর নজরদারি থাকবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার।
শনিবার ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলটির সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে নিষিদ্ধের দ্বারপ্রান্তে থাকা জামায়াতে ইসলামী নতুন নামে আসার কৌশলও হতে পারে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি ৪৩ বছর পর ক্ষমা চাওয়ার পর্যায়ে কেন এলো? সেটাও কোন কৌশল কি না ভেবে দেখতে হবে। তবে জামায়াত একাত্তরের ভূমিকায় ক্ষমা চাইলেও যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার চলছে এটা কিন্তু বন্ধ হবে না। জামায়াত ক্ষমা চাইলে আওয়ামী লীগ সাধুবাদ জানাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনও তারা ক্ষমা চায়নি। এটা স্পেকুলেশন পর্যায়ে, আলোচনার পর্যায়ে, গুজব-গুঞ্জনের পর্যায়ের মধ্যে সীমিত আছে। এখনও তারা অফিসিয়ালি ক্ষমা (এ্যাপোলাজ) চায়নি। তাই তারা ক্ষমা চাওয়ার আগে আমাদের কোন মন্তব্য করা সমীচীন নয়।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে জোট করে রাজনীতি, এমনকি রাষ্ট্র ক্ষমতার অংশীদার হলেও আগে বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলেননি। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপির কোন কোন নেতা এখন জামায়াতের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছেন। জামায়াত বিলুপ্ত হওয়ার পূর্বাভাস পেয়ে বিএনপির পক্ষ থেকেও কোন কোন নেতা এ দলটিকে ’৭১ এর ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার কথা বলা শুরু করছেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। অতিসম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাতকার দিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ’৭১ এর ভূমিকার জন্য জামায়াতকে ক্ষমা চাওয়া উচিত। তিনি বলেন, জামায়াত নিজেদের লাভের জন্য বিএনপির সঙ্গে জোটে এসেছে, বিএনপির জামায়াতকে কোন প্রয়োজন নেই। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ’৭১ এ জামায়াত স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই এ দলটিকে ’৭১ এর ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।
সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াত এখন কোন পথে যেতে চাচ্ছে এ নিয়ে এখন সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে চলছে ব্যাপক জল্পনাকল্পনা। কেউ বলছে আইনী প্রক্রিয়ায় দলটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, কেউ বলছে এটি এখন সামাজিক সংগঠন হতে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ বলছেন বিভিন্ন কৌশলে নির্বাচন কমিশনে নতুন নামে নিবন্ধিত হয়ে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের পদত্যাগের একদিন পর দলটির মজলিসে শুরা সদস্য মজিবুর রহমান মনজুকে বহিষ্কারের ঘটনায় জামায়াতের রাজনীতিকে রহস্যজনক মনে হচ্ছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, স্বাধীনতাবিরোধী দলটি সময়োপযোগী কৌশল গ্রহণের মাধ্যমে বার বার নিজেদের নিরাপদ রাখার সুযোগ পেয়েছে। কখন কি কৌশল নিলে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে সেটি জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভালভাবেই রপ্ত করতে পেরেছে। আর এ কারণেই রাজনৈতিকভাবে নাজেহাল হওয়ার পরিবর্তে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে রেখেছে। তবে যুদ্ধাপরাধের বিচারে দলটির সিনিয়র নেতাদের ফাঁসি হওয়ার পর রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা ও নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধন হারানোর পর প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে না পারলেও গোপনে দলীয় কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, জামায়াত এখন বুঝতে পেরেছে আদালতের রায়েও তাদের দলটি নিষিদ্ধ করার নির্দেশনা আসছে। আর এ কারণেই তারা এখন নতুন কৌশলে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে কেউ পদত্যাগ ও কাউকে বহিষ্কার করে দলটি জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা করছে। তবে বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে আবার যখন অনুকূল পরিবেশ মনে করবে তখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে।