ভোগান্তি কমাতে অস্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হলেও স্মার্টকার্ড যাবে স্থায়ী ঠিকানায়

559

কাজিরবাজার ডেস্ক :
জনসাধারণের ভোগান্তি কমাতে আরেকটি জনবান্ধন উদ্যোগ নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ক্ষেত্রে অস্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হলেও উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড স্থায়ী ঠিকানায় পাঠানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
ফলে ঠিকানা পরিবর্তনের কারণে কার্ড পাওয়া নিয়ে ভোগান্তি কমে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নিলীমা ইয়াছমিন পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। হলে থাকা অবস্থায় ভোটার হয়েছিলেন। কোনো কাজ না থাকায় সাভার যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া বর্তমানে চাকরির সুবাদে বসবাস করছেন অন্য জেলায়। এ ক্ষেত্রে তার স্মার্টকার্ড উত্তোলন নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। তার বক্তব্য যেখানেই তথ্য দিই না কেন, যদি ভোটার হওয়া এবং এনআইডি উত্তোলনের জন্য স্থায়ী ঠিকানাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তবে খুব ভালো হতো।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন উসমান আলী। ভোটার হয়েছিলেন সিলেটে বসবাসের সময়। বর্তমানে চাকরির সুবাদে বসবাস করছেন দিনাজপুরে। তারও একই সমস্যা। সিলেট যাওয়াটাই এখন তার জন্য বিড়ম্বনা।
নিলীমা কিংবা উসমান আলীদের এই ধরনের সমস্যা আর থাকছে না। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চাকরির সুবাদে কর্মস্থলের ঠিকানায় অনেকেই ভোটার হয়েছেন। কিংবা পড়াশোনার জন্য বাইরে গিয়ে অন্য এলাকায় ভোটার হয়েছেন অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ঠিকানায় ভোটার হয়েছেন কেউ কেউ। হয়তো তারা বর্তমানে অন্য এলাকায় বসবাস করছেন। কিংবা যে বাসায়, যে মহল্লায় থেকে ভোটার হয়েছেন, সেখানে আর বসবাস করছেন না; তাদের স্মার্টকার্ড স্থায়ী ঠিকানায় পাঠিয়ে দিতে পারলে জটিলতা এড়াতে পারতেন সাধারণ ভোটাররা।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ুন কবীরের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমি নিজে অনেককে ভোটার হওয়ার ফরম থেকে ফোন নম্বর বের করে ফোন দিয়েছি। দেখা যাচ্ছে, সে সময় যারা ভোটার হয়েছিলেন, অনেকেই অন্যের ফোন বা মোবাইল নম্বর দিয়েছিলেন। ফলে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একজন আমায় বলেছেন, যে ব্যক্তি ফোন নম্বর দিয়েছিলেন, তিনি বর্তমানে আমেরিকায় থাকেন।
আমরা দেখেছি যে, অনেকেই কর্মস্থল পরিবর্তন হওয়ার কারণে অন্য জায়গায় বসবাস করছেন। কিংবা পড়াশোনা শেষে হয়তো দেশের অন্যপ্রান্তে বসবাস করছেন। তাদের এনআইডিগুলো অবিতরিত অবস্থায় রয়েছে। এগুলো সংশ্লিষ্ট উপজেলা কার্যালয়ে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। কাজেই বিতরণ যাতে শতভাগ করা যায়, সে উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভোটার কেউ যেখানেই হোক না কেন, তার স্মার্টকার্ড যদি স্থায়ী ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া যায়, তবে খুব সহজ হতো।
এনআইডি সার্ভার থেকে বিতরণ না হওয়া এনআইডির মালিকের স্থায়ী ঠিকানা বের করে, তার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এরপর সেই উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় যদি তালিকা টানিয়ে দেয় বা যথাযথ প্রচার করে, তবে সহজেই ওই ভোটাররা তাদের স্মার্টকার্ড উত্তোলন করতে পারবেন।
এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, বিষয়টি এখানো পরিকল্পনাধীন রয়েছে। এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ দেশে সব ভালো কাজ সম্ভব। যদি পদ্মা সেতু করা যায়, কাঁদা মাটির নিচ দিয়ে যদি টানেল করা যায়, যদি শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা যায়, তবে এটাও করা যাবে।
জানা গেছে, ৬ কোটি ৩৮ লাখ ২০ হাজার স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ কোটি ৩৩ লাখ কার্ড উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। আর বিতরণ হয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ স্মার্টকার্ড। বাকিদের কার্ড এখানো বিতরণ হয়নি। স্মার্টকার্ড উৎপাদন ও বিতরণ চলমান রয়েছে।