ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণ কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি

58

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দলীয় ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটপূর্ণ সময়ে এসে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণের কার্যক্রম শুরু করেছে বিএনপি। আসন্ন এই নতুন রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারিত হচ্ছে দুটো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বর্তমান প্রজন্মের জাতীয়তাবাদী চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী দিনে দল পরিচালনা ও রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চায় বিএনপি। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২০ বছরের রাজনৈতিক জোটসঙ্গী জামায়াতকে বাদ রেখে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে শক্তিশালী করবে দলটি। এ লক্ষ্যে জাতীয় স্বার্থ সমুন্নত রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আস্থায় আনতে চায় দলের হাইকমান্ড।
বিএনপির হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠ একাধিক দায়িত্বশীল ও জ্যেষ্ঠ নেতারা জানান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপিকে একইসঙ্গে কয়েকটি সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এই সমস্যাগুলোকে বাস্তবসম্মত উপায়ে সমাধান করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এ কারণে একদিকে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি বৈশ্বিক রাজনৈতিক কৌশলও রপ্ত করতে চায় বিএনপি। সাংগঠনিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি।
রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দুটো বিষয়কে সামনে রেখে কাজ করছেন দলের হাইকমান্ড। প্রথমত, মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে বর্তমান প্রজন্মের যে বিশ্বাস ও ধারণা গড়ে ওঠেছে, তার ভিত্তিতে রাজনৈতিক কৌশল নিরূপণ করা হবে। আর এ কারণেই বিএনপির হাইকমান্ড একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে মত দেন এবং ২০ দলীয় জোটকে ক্রমশ সংখ্যাতাত্ত্বিক জোটে পরিণত করেন। নির্বাচনের আগে জোটের কয়েকটি দলকে ঐক্যফ্রন্টে অন্তর্ভুক্ত করার কথা ছিল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আরও কার্যকরভাবে সামনে আনার পক্ষে বিএনপি।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমার সঙ্গে মাঝেমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা হয়। আমার জানা মতে, তিনি চাইছেন একটি নতুন রাজনৈতিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে। এ কারণে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার কাজটি শুরু হয়েছে। তারা নিজে থেকে সরে গেলে ভালো। না গেলেও পরিস্থিতির কারণেই তাদের যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট আমরা গঠন করেছি এবং ড. কামাল হোসেনকে লিডার করেছি। এটা-তো আমাদের সেই স্পিরিটের অংশ।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু মনে করেন, ‘বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক ইতিহাসের আলোকে আলোচনা হবে নিশ্চয়ই। কিন্তু সমস্যা এখন বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক নয়। সমস্যা হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র নেই, স্বাধীনতা নেই। সরকার অস্বস্তিতে আছে। ১৪ দলের শরিকদের নিয়ে সমস্যায় আছে তারা। আমি মনে করি, বিএনপিকে অপেক্ষা করতে হবে এবং স্বাভাবিক রাজনীতি চালিয়ে যেতে হবে।’
এরমধ্যে জামায়াতের ভেতরে একাত্তরের বিরোধিতার কারণে দল বিলুপ্ত করে নতুন সংগঠন করার প্রস্তাব ওঠেছে। দল থেকে পদত্যাগ করেছেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। তবে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগের বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতের রয়েছে দুই অবস্থান। বিএনপি ও জামায়াত— উভয়ের কেউই নিজে থেকে সম্পর্কের ইতি টানছে চাইছে না। দুই দলের নেতারাই বলছেন, আমরা ছাড়বো না, তাদের ছাড়তে হবে। ২০ বছরের সম্পর্কের সমাপ্তি খুব সহজেই ঘটবে, এমনটি মনে করছেন না নেতারা।
বিএনপির সঙ্গে জামায়াতকে রাখার পক্ষে জোরালো অবস্থান সব সময়ই ছিল ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের। তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেরা কেন ছাড়বো। তারা ছাড়ুক।’
বিএনপি জোট ছেড়ে দিচ্ছে জামায়াত, এমন প্রশ্নে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জামায়াতের চিন্তা এরকমই। চিন্তা-ভাবনা এরকম। বিএনপি জোটকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। তবে মজলিসে শুরা থেকে এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি।’
কয়েকদিন আগে জামায়াতের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘জোট তো গোপনে ভেঙে দেওয়ার কিছু নেই। জোট ছাড়লে আমরা প্রকাশ্যই জানাবো।’
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নতুন বার্তা : আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এরইমধ্যে দলের নতুন উপলব্ধি নিয়ে হাজির হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ৪ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসার উপলক্ষে সিঙ্গাপুর গেলেও মূল লক্ষ্য তার ভিন্ন। গত দুয়েকদিনে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, এমন সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন দলটির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির (এফএসি) একজন সদস্য। এই সফরে মির্জা ফখরুলের অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও লন্ডন সফরের কথা রয়েছে। লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা রয়েছে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন এফএসির একাধিক সদস্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার জানা মতে, মির্জা ফখরুল সিঙ্গাপুর গেছেন। সেখানে তিনি চিকিৎসা করাবেন।’ বিএনপির আন্তর্জাতিক উইং এরইমধ্যে পুনর্গঠন করা হয়েছে। শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।’
বিদেশ বিষয়ক কমিটির একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মির্জা ফখরুলের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। এই সফরে তিনি বিএনপির নতুন উপলব্ধি, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয় এবং বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় নির্বাচন, মানুষের ভোটাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে আলোচনা করছেন। যদিও এ বিষয়ে কোনও নেতাই উদ্ধৃত হতে চাননি।