খাদ্যপণ্য ভেজাল মুক্ত হোক

18

খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশে আমরা কী খাচ্ছি, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। জীবনধারণের জন্য খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই। সুস্বাস্থ্যের জন্যও প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। বিশুদ্ধ খাদ্য সুস্থ ও সমৃদ্ধিশালী জাতি গঠনে একান্ত অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে বিশুদ্ধ খাবার প্রাপ্তি যে কত কঠিন, তা সবারই কমবেশি জানা আছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও আড়তদার দেশের খাদ্য নিরাপত্তা একেবারে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। খাদ্যপণ্যে ভেজালের কারণেই দেশে বিভিন্ন রকমের ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেইলিওর, হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানি—এগুলো অনেক বেড়ে যাচ্ছে। একটি জরিপে দেখা গেছে, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের কারণে দেশে প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ ৫০ হাজার, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা দেশে প্রায় ১৫ লাখ।
কিসে নেই ভেজাল ও বিষ? বাজারের কলা, আম, পেঁপে, পেয়ারা থেকে শুরু করে আপেল, আঙুর, নাশপাতিসহ দেশি-বিদেশি প্রায় সব ফলেই মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যাল। অপরিপক্ব ফল পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড এবং তা উজ্জ্বল বর্ণে রূপান্তর করার জন্য অধিক ক্ষারজাতীয় টেক্সটাইল রং ব্যবহার করা হচ্ছে অবাধে। ফল গাছে থাকা পর্যায় থেকে বাজারে বিক্রি করা মুহূর্ত পর্যন্ত একেকটি ফলে ছয় দফা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। মূলত গ্যাসজাতীয় ইথাইলিন ও হরমোনজাতীয় ইথরিল অতিমাত্রায় স্প্রে এবং ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করার কারণেই ফলগুলো রীতিমতো বিষে পরিণত হয়। এমনকি নকল দুধ বাজারজাত করা হচ্ছে। ছানার পানির সঙ্গে কেমিক্যাল মিশিয়ে সহজেই যা তৈরি করা হচ্ছে, তা আসলে বিষ। আবার দীর্ঘ সময় সতেজ রাখতে এতে মেশানো হচ্ছে ফরমালিন। বাজারের ৮৫ শতাংশ মাছেই বরফের সঙ্গে বিষাক্ত ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। ফরমালিন ব্যবহারে পাকস্থলীর ক্যান্সার, দৈহিক বিকলাঙ্গতা, এমনকি প্রাণহানিও ঘটতে পারে। মাত্রা বেশি থাকলে শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে। বৃক্ক, যকৃৎ, পাকস্থলী ও লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
১৯৯৪ সালে আমেরিকার এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশন এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফরমালিন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। টেক্সটাইলে ব্যবহৃত রং খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্গে মিশে শরীরে প্রবেশের পর এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই, যার ক্ষতি করে না। খাবার হোটেলগুলোও নিরাপদ নয়। সেখানে খাবারের মান ভালো থাকে না, পচা-বাসি খাবার দেওয়া হয়। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভেজাল দূর করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ খাদ্য দিবসে তাই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, খাবারে ভেজাল দেওয়া এক রকমের দুর্নীতি। এই দুর্নীতি প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আমরা আশা করব, খাদ্যপণ্য ভেজালমুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্ভব সব ব্যবস্থা নেবে।