জাহাঙ্গীর আলম খায়ের বিশ্বনাথ থেকে :
নদী আছে, কিন্তু নদী পথ নেই, নেই পানিও। খাল আছে, বিলও আছে, আছে জলাশয় এবং হাওরও। তবে এগুলো কেবল কাগজে কলমে। সুরমা নদী থেকে নৌকা নিয়ে খাজাঞ্চী নদী, বাসিয়া নদী কিংবা মাকুন্দা নদী পথ দিয়ে সহজেই বের হওয়া যেত। হাওর, জলাশয় ও নদীতে উৎসবের আমেজে পলো বাওয়া হতো, ধরা পড়তো বড় বড় বোয়াল, শউল, ঘাগটও। কিন্তু এখন সে এক রুপ কথার গল্প। সুরমা নদীর বিশ্বনাথ অংশে বাঁধা হয়েছে ঘরবাড়ি আর মুফতির বাজারে দখল করে বানানো হয়েছে পাকা দালান কোঠার দোকানঘর। দখল, দূষণ আর ভরাটের কারণে, পলো বাওয়াতো দূরের কথা, না নদীতে নৌকা চলে, না বাজারে পাওয়া যায় দেশীয় মাছ। কিন্তু তারপরও থেমে নেই বিশ্বনাথবাসী। সেই আদিকাল থেকেই তারা লালন করে আসছেন চীরায়ত বাংলার সেই পলো বাওয়া উৎসব।
প্রতি বছরের মতো এবারও গতকাল রবিবার (২৭জানুয়ারি) হয়ে গেলো উপজেলার গোয়াগহরি গ্রামের বড়বিলে ঝপ ঝপা ঝপ ‘পলো বাওয়া’ উৎসব। দিনভর গ্রামের ছেলেবুড় সকলেই মেতেছিলেন পলো দিয়ে মাছ ধরায়। সেই আদিকাল থেকেই ‘বড় বিলে’ বছরের পহেলা মাঘ ‘পলো বাওয়া’ উৎসব পালন করেন গোয়াহরি গ্রামবাসী। কিন্তু এবছর বিলে পানি বেশি থাকায় ১৪ মাঘ পলো বাওয়া উৎসব পালন করলেন তারা। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ছেলে-বুড়ো সকলেই মাছ ধরায় মেতেছিলেন, আহা সে কী আনন্দ!
এদিকে ‘বড় বিলে’ গ্রামবাসীর সঙ্গে মাছ ধরায় অংশ নিতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আব্দুল মছব্বির, কানাডা প্রবাসী ফয়সল আহমদসহ যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী প্রবাসীরা দেশে ফিরেছেন। সকলের সঙ্গে তারাও (প্রবাসীরা) পলো দিয়ে মাছ ধরায় অংশ নিয়েছেন। যদিও ‘পলো বাইছ’ কিন্তু পলো ছাড়াও, ঠেলা জাল, হাতা জাল ইত্যাদি নিয়ে মাছ ধরায় মেতেছিলেন গ্রামবাসী। বোয়াল, ষৌল, গজার ও কার্ফু মাছ অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি পাওয়ায় হাঁসি মুখে বাড়ি ফিরেছেন সাদিক হোসাইন, আব্দুর রহমান, সালমান আহমদসহ অনেকেই।
গোয়াহরি গ্রামের ইউপি সদস্য গোলাম হোসেন, মুরব্বী আব্দুল মছব্বির, আব্দুল আউয়াল, সাদিক হোসাই এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রায় ২শ’ বছর ধরে পহেলা মাঘ তারিখে ‘পলো বাওয়া’ হয়ে থাকে। প্রতিবছর পৌষ মাস থেকেই পলো বাওয়া উৎসবের প্রস্তুতি নেওয়া হয় এবং গ্রামের প্রবাসীরাও পৌষ মাসে দেশে ফেরেনে। তাছাড়া গোয়াহরি গ্রামবাসীর এটি একটি রেওয়াজ বলেও জানান তারা।