কাজিরবাজার ডেস্ক :
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার পথ বন্ধই হয়ে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় সর্বশেষ যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। পরে দুই দেশের মধ্যে আর কোন বৈঠক হয়নি। কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন দেশটির কর্তৃপক্ষের কাছে বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকেও মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে বৈঠকের কথা জানানো হয়েছে। কিন্ত মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ বৈঠকের বিষয়ে ইতিবাচক কোন সাড়া দেয়নি। ফলে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ঢাকার বৈঠকের পর কুয়ালালামপুরে বৈঠক হয়। কুয়ালালামপুরের বৈঠকটি ফলপ্রসূ মনে হয়েছিল। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়টি আরও জটিল হচ্ছে। মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে বৈঠকের সময় চেয়ে চিঠি দিলেও তারা কোন সাড়া দিচ্ছে না। ইতোমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কয়েক দফা চিঠি দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, কুয়ালালামপুরে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে প্রবাসীদের সুরক্ষা ও নানাবিধ অসুবিধা দূরীকরণের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কোন প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগ করবে তা নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য মালয়েশিয়াকে অনুরোধ জানানো হয়। একই সঙ্গে দেশটিতে ৫ লাখের বেশি অবৈধ কর্মীকে বৈধ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। সেই সময় আলোচনায় কর্মী নিয়োগে কোন সিন্ডিকেট থাকবে না, বেশি টাকা নেয়া যাবে না এমন অনেক বিষয় স্থান পেয়েছিল। তবে এই বৈঠকই শেষ নয়। আরও বৈঠকের প্রয়োজন আছে বলে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল কর্মী নিয়োগে ও মালয়েশিয়ায় অবস্থিত ৫ লাখের বেশি কর্মীকে বৈধকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অবৈধ কর্মীদের বিষয়ে মালয়েশিয়ার কোন আশ্বাস না দিলেও এখনই তাদের দেশ থেকে বের করে দেয়া হবে না বলে আশ্বাস্ত করেছে।
এদিকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মীর ভাগ্য অনিশ্চিত। এই কর্মীদের মালয়েশিয়া সরকার গত ৩০ নভেম্বরের মধ্যে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট তাদের মালয়েশিয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠাতে পারেনি। এরমধ্যে মালয়েশিয়া সরকার হঠাৎ করে বিদেশী কর্মী নিয়োগে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরে অনীহা প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশ, নেপালসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে নতুন করে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছে। দেশটির সরকার অবৈধ কর্মীদের সমস্যা দূর করার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। দেশ থেকে অবৈধ কর্মী সমস্যা দূর না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কর্মী নিয়োগ দেবে না। এ কারণে প্রতিনিয়ত অবৈধ কর্মী আটকের জন্য পুলিশ অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানিযেছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মী পাঠাতে না পারলে চাহিদাপত্র বাতিল বলে গণ্য হবে। অপেক্ষায় থাকা ৩০ হাজারের বেশি কর্মীর চাহিদাপত্র মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ৩০ নবেম্বর বাতিল করে দিয়েছে। এখন তারা আর মালয়েশিয়া যেতে পারবেন না। তাদের এক এক জনের কাছ থেকে চার থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা করে সিন্ডিকেট অনেক আগেই নিয়েছে। এখন তারা দেশটিতে যেতে না পারলে সিন্ডিকেটের হাত থেকে টাকাও তুলে নিতে পারবেন না। বেঁধে দেয়া সময়ও শেষ হয়েছে ৩০ নবেম্বর মধ্যরাতে। মালয়েশিয়ার এজেন্ট, অপেক্ষমাণ কর্মী, ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সি ও মধ্যস্বত্বভোগীসহ অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। যদিও অপেক্ষমাণ কর্মীরা যাতে দ্রুত দেশটিতে যেতে পারবেন বলে ১০ সদস্যের সিন্ডিকেট দাবি করেছে।
দশ সদস্যের সিন্ডিকেটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৩০ হাজারেরও বেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। এসব কর্মীর নামে কলিং ও মেডিক্যালসহ সবকিছুই সম্পন্ন হয়েছে। তারপরও যেতে পারছেন না। ঢাকার মালয়েশিয়ান হাইকমিশন থেকে ঠিকমতো স্ট্যাম্পিং দেয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।