যত দিন যাচ্ছে, রোহিঙ্গা সমস্যা তত বেশি জটিল হয়ে উঠছে। দিন-তারিখ ঠিক হওয়ার পরও কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো যায়নি। শিগগিরই প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে এমন কোনো ইঙ্গিতও মিলছে না। এদিকে কঠিন প্রহরা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প বা শিবিরে রাখা যাচ্ছে না। ক্রমেই তারা বেশি করে দেশের ভেতর ছড়িয়ে পড়ছে। বাইরে গিয়ে এরা ছোট ছোট গার্মেন্ট কারখানা বা অন্যান্য কারখানায় কম বেতনে চাকরি করছে। নিজস্ব স্বার্থেই মালিকরা তাদের পরিচয় লুকাতে সহযোগিতা করছেন। এসব কারণে নিবন্ধিত ১১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে এখন পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৯ লাখ ১৫ হাজার রোহিঙ্গাকে। ধারণা করা হচ্ছে, বাকি দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিবির ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গেছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে যেসব রোহিঙ্গা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, তারাও এখন বাংলাদেশে চলে আসছে। এরই মধ্যে এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গা ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে বলে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে। এ অবস্থায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বাংলাদেশ কত দিন বয়ে যেতে পারবে? তাদের কি স্থায়ীভাবেই বাংলাদেশে রেখে দিতে হবে?
গত ১৫ নভেম্বর প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রথম দফায় দুই হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। ফিরে যাওয়ার সব আয়োজনও করা হয়েছিল। কিন্তু সেই তালিকার কোনো রোহিঙ্গাই সেদিন ফিরে যেতে রাজি হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দাবি, মিয়ানমারে এখনো ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। তাই তারা বাংলাদেশকে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করার কথাও বলছে। এরই মধ্যে মিয়ানমার প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকেই দায়ী করতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কণ্ঠেও শোনা গেছে সেই অনিশ্চয়তার সুর। গত সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট সহজে সমাধান হবে বলে মনে হচ্ছে না। তিনি বলেন, সংকট সমাধানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালে জাতিসংঘে যে পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, পরবর্তীকালের আলোচনায় সেসব প্রস্তাবের যথাযথ প্রতিফলন ঘটেনি।
প্রকাশিত খবরাখবরে জানা যায়, শিবিরগুলোর ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকতে থাকতে রোহিঙ্গারাও ক্রমে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। প্রায়ই নিজেদের মধ্যে হানাহানি, খুনাখুনির ঘটনা ঘটছে। অনেক রোহিঙ্গা স্থানীয় বিভিন্ন অপরাধচক্রের সঙ্গেও জড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও মারাত্মক অবনতি হচ্ছে। এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার উপস্থিতির কারণে স্থানীয় জনজীবনেও নেমে এসেছে সীমাহীন ভোগান্তি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরি। আরো জরুরি হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচর বা অন্যত্র স্থানান্তর করে কক্সবাজারের ওপর চাপ কমানো। আরো একটি উদ্বেগজনক খবর হচ্ছে, জীবন ধারণের ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতাশ রোহিঙ্গাদের অনেকেই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর খপ্পরে চলে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে শুধু মিয়ানমার বা বাংলাদেশ নয়, আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও এটি বড় ধরনের ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিতে পারে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশা করি, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে দ্রুত বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নেবে।