সংসদ সদস্যদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর হুঁশিয়ারী ॥ ক্ষমতাকে কেউ ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করবেন না

101
জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভা কক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সংসদীয় দলের সভায় বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাকে সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচিত করেছে একাদশ জাতীয় সংসদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ। এর ফলে দেশের ইতিহাসে রেকর্ডসংখ্যক মোট চতুর্থবার এবং টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ নেতা নির্বাচিত হলেন তিনি।
সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েই দলের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়, ক্ষমতাকে কেউ নিজেদের সম্পদ মনে করবেন না। আমরা আজকে আছি, কিন্তু ক্ষমতা কোনভাবেই চিরস্থায়ী নয়। ক্ষমতাকে কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করবেন না। সম্পদ অর্জনের হাতিয়ার বানাবেন না। জনগণের কাছে আমাদের যে ঋণ, সেই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। উন্নয়নের মাধ্যমেই সেই ঋণ পরিশোধ করা হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শপথ গ্রহণ শেষে সংসদ ভবনের নবম তলায় সরকারী দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের ডজন খানেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে। ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত স্বার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কে নৌকায় ভোট দিল, কে দিল না সেটা এখন বিবেচ্য নয়। আমরা সবার উন্নয়ন করব, আমরা সবার এমপি। আর জনগণের সবাইকে সমান চোখে দেখতে হবে, জনগণের মন জয় করেই সবাইকে চলতে হবে।
সংসদীয় দলের বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের শুভেচ্ছায় ¯œাত করেন আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। এরপর সংসদ নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংসদ নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন। দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু প্রস্তাবটি সমর্থন করেন। এরপর তুমুল করতালির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা হিসেবে নির্বাচিত করেন দলের এমপিরা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী হাস্যোজ্বল কণ্ঠে বলেন, অনেকবার সংসদ নেতা হয়েছি, এটাই শেষ। আর না। এ সময় প্রবীণ-নবীন সব এমপি দাঁড়িয়ে সমস্বরে ‘না, না’ বলে অভিন্নকণ্ঠে বলেন, ‘আপনি যতদিন বেঁচে আছেন, ততদিন আপনিই আমাদের দলের প্রধান, সংসদ নেতাসহ সবকিছু।’
বৈঠক সূত্র জানায়, সংসদ নেতা নির্বাচিত করায় দলের এমপিদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুখে-দুঃখে জনগণের কাছে সবাইকে থাকতে হবে। জনগণ যদি সঙ্গে থাকে তবে কেউ আমাদের রুখতে পারবে না। আপনাদের কাছেও সেটাই আমার অনুরোধ, আপনারা জনগণের মাঝে থাকবেন। জনগণের সুখ-দুঃখে আপনারা তাদের পাশে থাকবেন। জনগণের মন জয় করতে পারলেই আবারও আপনারা এমপি হবেন, কেউ ঠেকাতে পারবে না। তাই জনগণের জন্য কাজ করে নিজেদের ভবিষ্যত জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রাখতে হবে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশ্যে করে আরও বলেন, নির্বাচনের আগে যেভাবে জনগণের কাছে গিয়েছেন, এখন শপথ নেয়ার পর একইভাবে জনগণের কাছে যাবেন, সম্পর্ক ঠিক রাখবেন। জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকলে ভবিষ্যতে কেউ আপনারা হারবেন না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে সেটা অব্যাহত রাখব।
জনগণ ঐক্যফ্রন্টকে সমুচিত জবাব দিয়েছে : নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করেছে, যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দিয়েছে। তারা মনোনয়ন বাণিজ্য করেছে, নির্বাচন নয় যেন তাদের লক্ষ্যই ছিল মনোনয়ন বাণিজ্য করা। এ কারণেই তারা ডুবেছে, জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের সমুচিত জবাব দিয়েছে। ভবিষ্যতেও এরা যাতে আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য নির্বাচনী এলাকার জনগণের সঙ্গে সবার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।