সংসদ সদস্যদের শপথ আজ, চমক থাকছে নতুন মন্ত্রিসভায়

71

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অপেক্ষার পালা শেষ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মহাজোটের সকল সংসদ সদস্য শপথ নেবেন। শপথ নিয়েই আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভা করে দেশের ইতিহাসে রেকর্ড চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদ নেতা নির্বাচন করবেন। এরপরই আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের আহ্বানে দু’তিন দিনের মধ্যেই বঙ্গভবনে শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন এবং প্রবীণের অভিজ্ঞতা ও নবীনের প্রতিভার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে চমক সৃষ্টির মতো করা মন্ত্রিপরিষদ শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দেশবাসী নতুন বছরে মহাবিজয় অর্জনকারী মহাজোটের নতুন সরকার উপহার পাবে। ভূমিধস বিজয় নিয়ে আসা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করেছে সংসদ সচিবালয়। ২৯৮ জনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে তাদের শপথের আয়োজন করতে বুধবার সকালে সংসদ সচিবালয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের পাঠানো নির্বাচনের গেজেট হাতে পাওয়ার পরই শপথ গ্রহণের সময় বেলা ১১টায় নির্ধারণ করা হয়। এদিকে শপথ অনুষ্ঠান সামনে রেখে সংসদ ভবন জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে।
সংসদ ভবনের নিচতলায় পূর্ব ব্লকের ‘শপথ কক্ষে’ নবনির্বাচিত এমপিদের শপথ পড়ানো হবে। নতুন এমপিদের দুই ধাপে শপথবাক্য পাঠ করাবেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তার আগে স্পীকার নিজে নিজে আইনসভার সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। কারণ এবারও তিনি রংপুর-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। রেওয়াজ অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপিরাই প্রথমে শপথ নেবেন। এরপর ক্রমানুসারে শপথ নেবেন বিরোধী দলসহ অন্যান্য দল বা জোটের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। শপথ শেষে সংসদ সদস্যরা সংসদ সচিবের কার্যালয়ের স্বাক্ষর খাতায় সই করবেন এবং একসঙ্গে তাদের ছবি তোলা হবে।
তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতটি আসনে বিজয়ী বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ নির্বাচিত সংসদ সদস্য আজ বৃহস্পতিবার সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করবেন কি না, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এর আগে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, তারা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাই শপথ নেবেন না। একাদশ সংসদে বিএনপির ৫ জন এবং ঐক্যফ্রন্ট তথা গণফোরামের ২ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপি এখনও অনড় অবস্থানে থাকলেও গণফোরামের নির্বাচিত দুই এমপি আজ শপথ নেবেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে শপথের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হবে। প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে বা স্পীকারকে অবহিত না করলে সংসদ সদস্য পদ খারিজ হবে। সেক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের জন্য আরও কিছুদিন সময় হাতে থাকবে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের।
দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টি আসনে গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়, গোলযোগের কারণে একটি আসন স্থগিত রেখেই সেই রাতেই ২৯৮টি আসনের ফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত ফলাফলে সত্তরের মতোই ভূমিধস মহাবিজয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ২৯৮টি আসনের মধ্যে এককভাবেই ২৫৯টি আসনে জয় পেয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীরা। আর জোটগতভাবে তাদের আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮৮টি। এই নিরঙ্কুশ জয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর বিপরীতে বিএনপিকে নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভরাডুবি হয়েছে। তাদের ধানের শীষের প্রার্থীরা মাত্র সাতটি আসনে জয়ী হতে পেরেছেন।
এছাড়া ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ২০টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি ৫টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ২টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ২টি, গণফোরাম ২টি এবং জাতীয় পার্টি- জেপি ও তরিকত ফেডারেশন একটি করে আসনে বিজয়ী হয়েছে। এছাড়া নির্বাচনে ৩ জন স্বতন্ত্র সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একজন প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনের ভোট গ্রহণ স্থগিত এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের ৩টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করায় ফলাফলও স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে দুইবার দেশ শাসন করা বিএনপির এতটা দুর্বল অবস্থায় সংসদে যাওয়া ঠিক হবে কি না- সে বিষয়ে দলের ভেতরে বিভক্তি রয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি, তবে কারও কারও কথায় শপথ না নেয়ার সম্ভাবনার কথা এসেছে। সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বৃহস্পতিবার শপথের দিনই নির্বাচিতদের ঢাকায় ডেকেছে বিএনপি।
বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত নেতাদের শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ‘ভুল’ করেছিল, এবার আর ভুল করা তাদের উচিত হবে না।
আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী জাতীয় পার্টি দশম জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় ছিল। আবার তাদের নেতারা সরকারের মন্ত্রিসভাতেও দায়িত্ব পালন করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০টি আসন পাওয়া জাতীয় পার্টি দলগতভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকায় এবারও তাদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসার কথা। তবে জাতীয় পার্টি এখনও তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন, বিরোধী দলে যাবেন কি না। তিনি বলেন, আমরা এখনও মহাজোটের অংশ হিসেবে আছি। মহাজোটের স্বার্থে যেটা করতে হবে, সেটাই করব। বৃহস্পতিবার সাংসদরা শপথ গ্রহণের পর জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি কমিটির সদস্যরা আরেকটি সভায় বসবেন। তারপর জাপার বিরোধী দলে যাওয়া, মন্ত্রিত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
সংসদে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী : শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও শপথ নেবেন, ফলে বাড়তি নিরাপত্তা থাকছে। বুধবার সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো সংসদ এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে। দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। গণমাধ্যম কর্মীদের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। একটি গণমাধ্যম থেকে সর্বোচ্চ দুইজন শপথ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে অনুমোদিতদের অবশ্যই পিআইডির (এ্যাক্রেডিটেশন কার্ড) পাস থাকতে হবে।
বুধবার সংসদ ভবন ঘুরে সাজ সাজ রব দেখা গেছে। শপথ অনুষ্ঠান ঘিরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সংসদ ভবনের অভ্যন্তরসহ আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। বাহারি রঙের ফুলের টব সারি সারি বসিয়ে সংসদ ভবন নতুন রূপে সাজানো হয়েছে। সংসদ সদস্যদের পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য তিন তলায় নতুন বুথ খোলা হয়েছে। কিভাবে সংসদ সদস্যদের অভ্যর্থনা জানানো ও শপথ পড়ানো হবে, গত দু’দিনে তার মহড়াও চলেছে।
আসছে চমকের মন্ত্রিসভা : ভূমিধস বিজয়ের পর ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ গঠনের কাজে হাত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রবীণ নেতাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে নবীনদের মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে শেখ হাসিনা তৈরি করছেন মন্ত্রিসভা। এক্ষেত্রে অনেক সিনিয়র নেতা যেমন বাদ পড়ার আভাস পাওয়া গেছে, তেমনি চমক দেয়ার মতো বেশ কিছু নবীন সংসদ সদস্য প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে পারেন। তবে এবার মন্ত্রিপরিষদের কলেবরে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির কাউকে দেখা নাও যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ এবং নতুন সরকারের নেতৃত্ব নিয়েই মহাজোট তথা ঐকমত্যের সরকার গঠনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে আলোচনা করে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।