সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়। এরপর দীর্ঘ তিন বছর চুটিয়ে প্রেম। তবে এই প্রেমের মিলনে ছিল অনেক বাধা। সবকিছুর মূলে ছিল ভিন্ন দেশ, পরিবার, জাতীয়তা ও ভৌগোলিক সীমানা। তবে এসব বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশি প্রেমিক আশরাফুল আলমের (২২) বাড়িতে এসেছেন ভারতের আসামের তরুণী কারিশমা শেখ (১৯)। ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী বিয়ে করেছেন এ যুগল। কারিশমা শেখ আসামের শোনিতপুর বালিডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল কাশিম শেখের মেয়ে। আর আশরাফুল আলম সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের চরগাঁও গ্রামের আলফাজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দীগেন্দ্র বর্মণ সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
জানা যায়, তিন বছর আগে কারিশমার সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় আশরাফুলের। এরপর তাদের প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি হওয়ার পর অন্য দেশের ছেলে হওয়ায় বাধসাধেন কারিশমার বাবা। কিন্তু নাছোরবান্দা কারিশমা বাবাকে বুঝিয়ে রাজি করান। এরপর মেনে নেয় দুই পরিবার। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় সীমান্তের কাঁটাতার আর দুজনের জাতীয়তা। অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে পরিবারের সহযোগিতায় ১৬ জুলাই বেনাপোল সীমান্ত হয়ে বৈধপন্থায় আশরাফুলের বাড়িতে আসেন কারিশমা। বাংলাদেশে এসে ১৯ জুলাই সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এবং ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন কারিশমা শেখ। বাঙালি যুবককে বিয়ে করায় বৈবাহিক সূত্রে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চান কারিশমা শেখ।
ভারতীয় তরুণী কারিশমা শেখ বলেন, ‘তিন বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের পরিচয় হয়। তারপর আমাদের দুজনের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায়। প্রথমে আমার পরিবার বিষয়টি না মানলেও আশরাফুলের পরিবারের আশ্বাসে মেনে নেয়। বাবার সহযোগিতায় তিন মাসের ভিসা নিয়ে আমি বাংলাদেশে এসেছি। অনেক ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয়েছে। বাংলাদেশে আসার পর আশরাফুলের পরিবার আমাকে মেনে নিয়েছে এবং আমরা বিয়ে করেছি। আমি স্বামীর সঙ্গে বাংলাদেশে থাকতে চাই। আমি বাংলাদেশের সরকারের কাছে নাগরিকত্ব দাবি করছি।’
এদিকে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের মায়া ত্যাগ করে প্রেমের টানে বাংলাদেশে আসা ভারতীয় এই তরুণীকে নিজের সন্তানের মতো করে গ্রহণ করেছেন আশরাফুলের পরিবার। ভারতীয় তরুণীকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে আশরাফুল আলমও বেশ খুশি। আজীবন একসঙ্গে থাকতে স্ত্রী কারিশমা শেখকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ এই প্রেমিক তরুণের।
আশরাফুল আলমের বাবা আলফাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমারও তিন মেয়ে ছিল, তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। যেহেতু মেয়েটি তার দেশসহ সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে এসেছে তাই মেয়েটিকে আমরা মেয়ে হিসেবে মেনে নিয়েছি। আমরা চাই তারা সংসার জীবনে সুখী হোক। আমার ছেলেবউয়ের নাগরিকত্বের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করবো।’
বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার দুপুরে থানার এক অফিসার আমাকে জানিয়েছে ভারতের এক তরুণী নাকি চরগাঁও গ্রামে এসেছে এবং ওই গ্রামের এক ছেলেকে বিয়ে করেছে। ওই তরুণী বৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছে কি না এই বিষয়টির খোঁজ-খবর নেওয়া হবে।’