কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত। গত শনিবার প্রায় ৬০ ভাগ উন্নতি হলেও রবিবার সকাল থেকে তার অবস্থার অবনতি হয়। এরপর দলের পক্ষ থেকে এরশাদের ভাই জিএম কাদেরও সংবাদ সম্মেলন করে জানান, এরশাদের অবস্থার অবনতির দিকে। বিকেল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরশাদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পরে। জাপার পক্ষে সংবাদ সম্মেলনের পর রাতভর গুজবের ডালপালা ছড়ায়। রাত ৯টার দিকে সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের টিভি স্ক্রিনে এরশাদকে দেখায়। তাতে দেখা যায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি কিছুক্ষণ পর পর হাত-পা নাড়াচ্ছেন।
এই প্রেক্ষিতে সোমবার নব্বই বছর বয়সী সাবেক এই রাষ্ট্রপতিকে এখনও অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার ভাই জিএম কাদের। শারীরিক এই অবস্থায় আপাতত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার পরিস্থিতি নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তবে তাকে নিয়ে গুজব না ছড়াতে সকলের প্রতি অনুরোধ জানান ভাই জিএম কাদের।
সোমবার সকালে এরশাদকে দেখতে সিএমএইচে যান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও এরশাদকে দেখতে যান এরশাদের স্ত্রী রওশন সহ জাতীয় পার্টির নেতা কর্মীরা। কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে এরশাদের পরিস্থিতি নজরে রাখছেন।
সকালে সিএমএইচে এরশাদকে দেখে এসে দুপুরে বনানীতে পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জিএম কাদের বলেন, রবিবারের অবনতির পর তার ভাইয়ের শারীরিক অবস্থার আর কোন পরিবর্তন ঘটেনি। উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নে জিএম কাদের বলেন, এই মুহূর্তে উনাকে কোথাও নেয়াটা ডাক্তাররা সাজেস্ট করছেন না। অন্য কোথাও শিফট করাটা সঠিক কোন সিদ্ধান্ত হবে বলে ডাক্তাররা মনে করেন না। অথবা যে চিকিৎসা চলছে সেটা সন্তোষজনক হচ্ছে বলে উনারা মনে করেন।
সিএমএইচ কর্তৃপক্ষ বলছেন এই শারীরিক অবস্থায় উনাকে শিফট করাটা সঠিক হবে না। তবে এটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমরাও ডাক্তারদের পরামর্শ ছাড়া এমন সিদ্ধান্তে যাব না।
এর আগে সকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হাসপাতালে গিয়ে এরশাদকে দেখে আসেন। ওষুধের প্রভাবে সে সময় এরশাদ আধো ঘুম-আধো জাগরণে ছিলেন বলে জানান জিএম কাদের। ডাক্তাররা বলছেন উনি একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যে আছেন বিভিন্ন ওষুধের প্রভাবে। আধো ঘুম আধো সজাগ অবস্থা যেটাকে বলে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব আসার পর ডাক্তাররা উনাকে সেই কথাই বললেন। তখন উনি চোখ মেলে তাকিয়েছেন। উনার মুখে মাস্ক থাকায় কথা বলতে পারেননি।
এদিকে সোমবার বিকেলে সিএমএইচে এরশাদকে দেখে আসার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানান, এরশাদ বর্তমানে লাইফ সাপোর্টে আছেন।
বয়সজনিত নানা শারীরিক জটিলতা নিয়ে গত ২২ জুন থেকে সিএমএইচে চিকিৎসায় আছেন এরশাদ। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতির খবর মেলেনি। রবিবার তার অবস্থার অবনতির কথা জানিয়েছিলেন ভাই কাদের। এরই মধ্যে ফেসবুকে তার মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়ে পড়ে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের অনুরোধ করেন, কেউ যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোন খবরে বিশ্বাস না করেন। আমার ভাই এখনও জীবিত আছেন। সকালেও তিনি চোখ মেলে তাকিয়েছেন।
উনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সারাদেশের মানুষ উৎকণ্ঠায় আছে। তারা প্রতি মুহূর্তেই জানতে চাচ্ছেন, দোয়া করছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু মানুষ অযথা গুজব ছড়িয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণে আমরা মনে করি তার বিষয়ে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন।