কাজিরবাজার ডেস্ক :
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিতে ডিআইজি, র্যাবের ডিজি, এসপিসহ পুলিশের শীর্ষ ৭০ কর্মকর্তার বদলি চায় বিএনপি। একই সঙ্গে নির্বাচনকালীন সময়ে সব ধরনের কাজ থেকে তাদের যেন বিরত রাখা হয় সে দাবিও জানিয়েছে জানিয়েছে দলটি।
বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠিতে বিএনপি এ দাবি জানায়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে বিএনপির প্যাডে লেখা ওই চিঠি গতকাল ইসির সচিবের দপ্তরে পৌঁছে দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। চিঠির সঙ্গে ৭০ পুলিশ কর্মকর্তার একটি তালিকাও জমা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এ ছাড়া ইসি কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহমেদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনকে প্রত্যাহার করে নির্বাচন সশ্লিষ্ট সব দায়িত্ব থেকে তাদের বিরত রাখার দাবিও জানিয়েছে বিএনপি।
অন্যদিকে পৃথক আরেক চিঠিতে জনপ্রশান সচিব, ইসি সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, চট্টগ্রাম ও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার; চট্টগ্রাম, ভোলা, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, টাঙ্গাইল, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, নড়াইল, ময়মনসিংহ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, রাজশাহী ও সিলেটের জেলা প্রশাসকদের (রিটার্নিং অফিসার) প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
চিঠি দেওয়ার পর মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘তালিকায় পুলিশ সুপার আছেন, বিশেষ শাখার পুলিশ কর্মকর্তারা আছেন, ডিআইজিরা আছেন, এডিশনাল ডিআইজি কর্মকর্তারা আছেন এবং এআইজি সাহেবরাও আছেন।’
আলাল বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর সরকার কিংবা নির্বাচনী কোনো কর্মকর্তা যে কাজগুলো করতে পারেন না, সেই কাজগুলো অনবরত হচ্ছে। নির্বাচন আচরণবিধি লঙ্ঘনে সরকারের এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে কিছু দালিলিক প্রমাণ জমা দিয়েছি। কয়েকটি উদাহরণও আমরা উনাদের সামনে তুলে ধরেছি এবং এগুলোর প্রতিকার চেয়েছি। ভবিষ্যতে যাতে এসব আর না ঘটে, এ ছাড়া যারা এসব করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।’
‘রাষ্ট্রপতির ছেলে বঙ্গভবনে নির্বাচনী কাজ করছেন’
আলাল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ছেলে একজন এমপি প্রার্থী। তিনি বঙ্গভবনে তার এলাকার লোকজন নিয়ে নির্বাচনী কাজ করছেন। তাদের আদর আপ্যায়ন করা হয়েছে। যেটি প্রভাব বিস্তারের অন্যতম উদাহরণ। এ ছাড়া গত ১৬ সভেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব ও চট্টগ্রাম বিভাগের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সঙ্গে সব রির্টানিং কর্মকর্তারা পুলিশ সুপারদের নিয়ে রুদ্ধদার বৈঠক করেছেন।
‘পরবর্তীতে ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটনের বিভাগীয় কমিশনার ও রির্টানিং কর্মকর্তা তার এলাকার অন্য রিটার্নি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এটি নির্বাচন আচরণি বিধির ৭৩ এর ২বি, ৭৭ এর ১/ই এবং আরপিও-এর লঙ্ঘন।’
বিশেষ বৈঠকে সিইসি পুলিশ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের হয়রানি না করতে বলেছেন- এ বিষয়ে আলাল বলেন, ‘তিনি (সিইসি) আহ্বান জানিয়েছেন। এটি তো অনুরোধ বা অনুনয়। কিন্তু উনার তো নির্দেশ দেয়ার কথা। উনি নির্দেশনা দেবেন। সেই ক্ষমতা তার রয়েছে। সেই নির্দেশনার বাস্তবায়ন আমরা চাই।’
চিঠির সঙ্গে দেওয়া তালিকায় বলা হয়েছে, ‘জনগন উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে বিগত ১০ বছরে পুলিশের গুটি কয়েক দলবাজ কর্মকর্তা ঘুরে ফিরে গুরুত্বপূর্ন জেলার পুলিশ সুপার ও ঢাকা মেট্রোপরিটন পুলিশে সমপদে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ পুলিশ সুপার পদমর্যাদার অন্তত ৭০০ জন যোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা দীর্ঘকাল এ সব গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন বঞ্চিত রয়েছেন।’
তালিকায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তার নাম রয়েছে
১. পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে কর্মরত এ্যাডিশনাল আইজিপি ৯প্রশাসন) মুখলেছুর রহমান (৭ম ব্যাচ) ২. র্যাবের ডিজি ( অতিরিক্ত আইজিপি) বেনজীর আহম্মেদ , ৩. ডিএনপি কমিশনরা আসাদুজ্জামান মিয়া, ৪ এ্যাডিশনাল আইজিপি টেলিকম মো. ইকবাল বাহার (৮ম ব্যাচ), ৫. ডিআইডি নৌ-পুলিশ শেখ মো. মারুফ হাসান (৮ম ব্যাচ) ,৬. সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো কামরুল আহাসান (১২ তম ব্যাচ), ৭. চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইডি খন্দকার গোলাম ফারুক (১২তম ব্যাচ), ৮. খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহম্মেদ (১২ তম ব্যাচ),৯. বাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন (১২ তম ব্যাচ), ১০. কে এমপি কমিশনার (ডিআইজি) হুমায়ূন কবির (১২ তম ব্যাচ), ১১. এ্যাডিশনাল কমিশনার কাউন্টার টেরোরিজম ডিএমপি মো. মনিরুল ইসলাম (১৫ তম ব্যাচ) , ১২. চট্টগ্রাম মেট্রোপরিটন পুলিশ এর কমিশনার (ডিআইজি) মাহবুবুর রাহমান (রিপন) (১৫ তম ব্যাচ), ১৩. ডিএনপির অতিরিক্ত কমিশনরা (ডিআইজি) , মীর রেজাউল আলম (১৫ তম ব্যাচ) , ১৪. ডিআইজি মোহম্মদ আলী মিয়া, সিটিএসবি , ঢাকা (১৫ তম ব্যাচ) , ১৫. রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য ( ১৫ তম ব্যাচ), ১৬. ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি) কৃষ্ণপদ রায় ( ১৫ তম ব্যাচ), ১৭. পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি প্রশাসন হাবিবুর রহমান ( ১৭ তম ব্যাচ), ১৮. ডিআইজি আনোয়ার হোসেন -অপারেশন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ( ১৭ তম ব্যাচ),১৯. রাজশাহী মোট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার (ডিআইজি) হাফজ আক্তার ( ১৭ তম ব্যাচ), ২০. পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ডিআইজি ট্রেনিং ড: খ মহিদ উদ্দিন ( ১৭ তম ব্যাচ), ২১. অতিরিক্ত কমিশনার (ডিআইজি) , ডিএমপি আব্দুর বাতেন , (১৭ তম ব্যাচ), ২২. রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে এসেছে র্যাব ৪ এর অধিনায়ক (এ্যাডশনাল ডিআজি) চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির ( ১৭ তম ব্যাচ), ২৩. শেখ নজমুল আলম যুগ্ন কমিশনর ( এ্যাডিশনাল ডিআইজি ) ডিএমপি ( ১৭ তম ব্যাচ), ২৪. একেএম নাহিদুল ইসলাম এ্যাডিশনাল ডিআইজি , খুলনা রেঞ্জ ( ১৭ তম ব্যাচ), ২৫ . মো মনিরুজ্জামান এ্যাডিশনাল ডিআইজি , পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ( ১৭ তম ব্যাচ), ২৬. জয়দেব কুমার ভদ্র এ্যাডিশনাল ডিআইজি , সিলেট রেঞ্জ, ( ১৮ তম ব্যাচ), ২৭. মো : আসাদুজ্জামান এ্যাডিশনাল ডিআইজি , ঢাকা রেঞ্জ, ( ১৮ তম ব্যাচ), ২৮. মাহবুব আলম জয়েন্ট কমিশনার ডিবি, ডিএমপি, ( ১৮ তম ব্যাচ), ২৯ . মোল্যা নজরুল ইসলাম , এমএম (এসপি) সিআইডি , ঢাকা, ( ২০ তম ব্যাচ), ৩০ . আলতাফ হোসেন , এসপি , টুরিষ্ট পুলিশ, সিলেট, ( ২০ তম ব্যাচ), ৩১. বিপ্লব কুমার সরকার , ডিসি তেজগাঁও, ডিএমপি, ঢাকা ( ২০ তম ব্যাচ), ৩২. হারুন আর রশিদ , ডিসি, ডিএমপি ( ২০ তম ব্যাচ) , ৩৩. মো. মারুফ হোসেন সরদার , ডিসি রমনা, ডিএমপি, ঢাকা, ( ২১ তম ব্যাচ) , ৩৪. এসএম মেহেদী হাসান , ডিসি সিএমপি, ৩৫. খন্দকার নুরুন নবী , ডিসি, ডিবি উত্তর , ডিএমপি, ঢাকা ( ২২ তম ব্যাচ), ৩৬. মো: ফারুকুল হক ডিসি , সিএমপি, ( ২২ তম ব্যাচ), ৩৭. প্রলয় কুমার জোয়ার্দার , ডিসি, কাউন্টার টোরোরিজম , ডিএমপি, ঢাকা ( ২৪ তম ব্যাচ), ৩৮. এসএম মুরাদ আলী ডিসি , ডিএমপি, ( ২৪ তম ব্যাচ), ৩৯. শিবলী নোমান , এডিসি , ডিএমপি, ৪০. শাহ মিজান শফি , এফপি ঢাকা ( ২০ তম ব্যাচ), ৪১. নারায়নগঞ্জের এসপি মো: আনিসুর রহমান (২০ তম ব্যাচ), ৪২. মুন্সিগঞ্জের এসপি মো. যায়েদুল আলম ( ২২ তম ব্যাচ), ৪৩. নরসিংদীর এসপি মিরাজ ( ২০ তম ব্যাচ), ৪৪. টাঙ্গাইলের এসপি সঞ্জিত কুমার রায় ( ২২ তম ব্যাচ), ৪৫. মাদারীপুরের এসপি সুব্রত কুমার হাওলাদার ( ২১ তম ব্যাচ) , ৪৬. ময়মনসিংহর এসপি শাহ আবিদ হোসেন (২০ তম ব্যাচ), ৪৭. শেরপুরের এসপি আশরাফুল আজিদ ( ২৪ তম ব্যাচ), ৪৮. সিলেট বিভাগের এসপি মো. মনিরুজ্জামান (২০ তম ব্যাচ), ৪৯. বরিশাল বিভাগের এসপি সাইফুল ইসলাম ( ২০ তম ব্যাচ), ৫০. ভোলার এসপি মোক্তার হোসেন (২১ তম ব্যাচ), ৫১. খুলনার এসপি এসএম শফিউল্লহ ( ২৪ তম ব্যাচ), ৫২. সাতক্ষীরার এসপি মো. সাজ্জাদুর রহমান, ( ২১ তম ব্যাচ), ৫৩ . বাগেরহাটের এসপি পংকজ চন্দ্র রায়, ( ২১ তম ব্যাচ), ৫৪. যশোরের এসপি মঈনুল হক ( ২০ তম ব্যাচ) , ৫৫. ঝিনাইদহের এসপি হাসানুজ্জামান , ( ২২ তম ব্যাচ), ৫৬. কুষ্টিয়ার এসপি আরাফাত তানভীর, ( ২৪ তম ব্যাচ), ৫৭. চট্টগ্রামের এসপি নূরে আলম মিয়া ( ২০ তম ব্যাচ) , ৫৮. নোখালীর এসপি ইলিয়াস শরীফ, ( ২০ তম ব্যাচ), ৫৯. ফেনীর এসপি এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার ( ২২ তম ব্যাচ), ৬০. কুমিল্লর এসপি সৈয়দ নুরুল ইসলাম ( ২০ তম ব্যাচ), ৬১. রংপুরের এসপি মিজানুর রহমান ( ২১ তম ব্যাচ), ৬২. দিনাজপুরের এসপি সৈয়দ আবু সায়েম ( ২৪ তম ব্যাচ), ৬৩. ঠাকুরগাঁওয়ের এসপি মনিরুজ্জামন ( ২০ তম ব্যাচ), ৬৪.রাজশাহীর এসপি মো. শহিদুল্লাহ ( ২৪ তম ব্যাচ), ৬৫. চাপাই নবাবগঞ্জের এসপি মোজাহিদুল ইসলাম ( ২০ তম ব্যাচ), ৬৬. নওগাঁর এসপি ইকবাল হোসেন ( ১৮ তম ব্যাচ), ৬৭. নাটোরের এসপি সাইফুল্লাহ ( ২০ তম ব্যাচ), ৬৮. বগুড়ার এসপি আশরাফ আলী ( ২৪ তম ব্যাচ), ৬৯. সিরাজগঞ্জের এসপি টুটুল চক্রবর্তী ( ২০ তম ব্যাচ) ও ৭০. পাবনার এসপি রফিক ইসলাম ( ২০ তম ব্যাচ)।