কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজনীতিতে বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। নির্বাচনকেন্দ্রিক পারদ এখন ঊর্ধ্বমুখী। তবে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন তা নিয়ে আওয়ামী লীগে চলছে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা ইতোমধ্যে প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা। ১৪ দল, জাতীয় পার্টি ও যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনার পর আগামী সোম বা মঙ্গলবারের মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে মহাজোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্তের পর থেকে গণমাধ্যমে একের পর এক নানা প্রার্থীর প্রার্থিতা নিশ্চিতের খবর প্রকাশ হতে শুরু করেছে। দলের হাইকমান্ড থেকে এসব তালিকাকে মনগড়া এবং ভুয়া বলে আখ্যায়িত করা হলেও মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা শেষ সময়ে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দলীয় সংসদীয় বোর্ড কয়েক দফা বৈঠক করে দলীয় মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত করে। এরপর ১৪ দলের শরিকদের প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত করা হয়। এখন দর-কষাকষি হচ্ছে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে। সব মিলিয়ে মহাজোটে সত্যিকার অর্থে কারা মনোনয়ন পাচ্ছেন চূড়ান্তভাবে জানতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আরও চার-পাঁচদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। এ কারণে ভোটের মাঠে কিছুটা হলেও স্থবিরতা এসেছে।
চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় উদ্বিগ্ন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রতিদিনই ভিড় জমাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারী বাসভবন গণভবনে। মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন এমন প্রার্থীরাও ভিড় জমাচ্ছেন গণভবনে, ওবায়দুল কাদেরসহ বিভিন্ন সিনিয়র নেতাদের বাসভবনে। বৈঠক সূত্র জানায়, গণভবনে যেসব নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দেখা হচ্ছে, সবার সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলছেন তিনি। তবে কাউকেই সবুজ কিংবা লাল সঙ্কেত নয়; দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষেই ঐক্যবদ্ধভাবে এলাকায় গিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। দেখা করতে যাওয়া একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা ও বর্তমান এমপির সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, গত দু’দিন বুধবার ও বৃহস্পতিবার গণভবনে ভিড় করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও বর্তমান এমপিরা। বুধবার সাক্ষাতকার করতে আসা নেতাকর্মীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় হলরুমে বসিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি সবার কাছে মতামত জানতে চান। কোন এলাকায় কাকে মনোনয়ন দিলে ভাল হয় তাও জিজ্ঞেস করেন উপস্থিত নেতাকর্মীদের। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার পর প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্ট নির্দেশ দেন, আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই বিস্তারিত জরিপের ভিত্তিতেই মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই অর্থাৎ সবাইকে নৌকাকে বিজয়ী করতে একযোগে কাজ করতে হবে। এর অন্যথা কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না।
গণভবনে উপস্থিত একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, বুধবার গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন হবিগঞ্জ-৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. ফরাস উদ্দিন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘আমি নেত্রী (শেখ হাসিনার) সঙ্গে দেখা করেছি। আমার মনোনয়নের কথা বলেছি। তিনি আমাকে এলাকায় কাজ করতে বলেছেন। আশা করি আমি মনোনয়ন পাব।
মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার কথা শুনে গণভবনে গিয়ে দলীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। তিনি জানান, আমাকে মনোনয়ন বঞ্চিত করা হয়েছে এমন কোনও কথা নেত্রী আমাকে বলেননি। কারও মুখেও শুনেননি। তিনি আমাকে এলাকায় গিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবারের বৈঠকে মনোনয়ন প্রত্যাশী মহিলা নেত্রীদের ভিড় ছিল লক্ষ্য করার মতো। সে সময় গণভবনে উপস্থিত থেকে নেত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বিভিন্ন নারী মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী নৌকার বিজয়ের জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসতে পারলে অনেকেই মূল্যায়ন করা হবে।
তবে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন তালিকা প্রকাশ না করা হলেও দলটির হাইকমান্ড থেকে নিশ্চিত মনোনয়ন পাওয়া এমপি-মন্ত্রী-নেতাদের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রীনসিগন্যাল দিয়ে ঢাকায় পড়ে না থেকে নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে জনগণের ঘরে ঘরে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। সবুজ সঙ্কেত পেয়ে ইতোমধ্যেই প্রায় শতাধিক নেতা নির্বাচনী এলাকায় ভোট নির্বাচনীযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন।
এদিকে মহাজোটের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রায় প্রতিদিনই শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জরিপে শরিক দলগুলোর সম্ভাব্য প্রার্থীদের সবশেষ জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটারও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের। কোন প্রার্থীকে ছাড় দিলে পরাজিত নিশ্চিত, এটিও নানা তথ্যসম্বলিত প্রমাণ তুলে ধরে অযথা ঝুঁকি না নেয়ার অনুরোধ জানানো হচ্ছে জাতীয় পার্টি ও যুক্তফ্রন্টের নেতাদের। আর যেসব প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তাদের অবশ্যই ছাড় দেয়ার কথা জানিয়ে দেয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড থেকে।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, দলের পর মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে আর বেশি সময় লাগবে না। সব শরিক দলই তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিজ এলাকার সক্ষমতা জেনেই শুধুমাত্র আসন বাড়ানোর দাবি থেকে সরে আসছেন। এসব কারণে আসন নিয়ে সমঝোতা খুব শীঘ্রই নিষ্পত্তি হবে। সেক্ষেত্রে আগামী সোমবার কিংবা মঙ্গলবার মহাজোটগতভাবেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে পারে আওয়ামী লীগ। আর এবার যাতে কোন বিদ্রোহী প্রার্থী হতে না পারে সেজন্য প্রতীক বরাদ্দের চিঠির সঙ্গে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ফরমেও স্বাক্ষর করে রাখছে আওয়ামী লীগ।