ছাত্রলীগ-মহিলা আ’লীগ ও যুব মহিলা লীগের সম্মেলন জুন-জুলাইয়ে

6

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ, সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের সম্মেলন আগামী জুন-জুলাই মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে। চলতি সপ্তাহে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সিডিউল পাঠাবে এ তিন সংগঠন।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই তিন সংগঠনের সম্মেলনের পরেই আওয়ামী কৃষক লীগের সম্মেলন হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সম্মেলনের নির্দেশনা দেওয়ার পরই তিন সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা সম্মেলন আয়োজনের প্রস্ততি নিতে শুরু করেছেন।
গত ১০ মে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর বৈঠকে ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের সম্মেলন করার নির্দেশনা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো সম্মেলনে তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলে তিনি যে সিদ্ধান্ত দেববেন এবং যখন সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করে দেবেন সেই ডেট অনুযায়ী সম্মেলন করা হবে। তবে সম্মেলন করার জন্য অন্যান্য যে প্রস্তুতি সেগুলোর কাজ করে সম্মেলনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্মেলনে নিয়ে আলোচনা করছেন। জুন-জুলাই মাসের কথা মাথায় রেখেই সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
সম্মেলনের নির্দেশনা পাওয়া তিন সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, সম্মেলন করার জন্য দল থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোথায় সম্মেলন হবে তা এখনো জানানো হয়নি। গতবারের মতো এবারও একই মঞ্চে সম্মেলন হবে কি না, না-কি আলাদা আলাদা সম্মেলনের মঞ্চে হবে এসব বিষয় দলীয়ভাবে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এসব বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। তারা যেমন নির্দেশনা দিবেন তাই করা হবে।
২০১৮ সালের ১১মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রায় দুই মাস পর ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সভাপতি ও গোলাম রাব্বানী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পাওয়ার এক বছর পর ২০১৯ সালের ১৩মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর শোভন-রাব্বানীকে পদচ্যুত করে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে। এরপর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জয়-লেখককে ভারমুক্ত করে ছাত্রলীগের পূর্ণ দায়িত্ব দেন। সেই হিসেবে প্রায় চার বছর পার হতে চলছে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির।
এছাড়া ২০১৭ সালের ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এতে সাফিয়া খাতুন সভাপতি এবং মাহমুদা বেগম কৃক সাধারণ সম্পাদক হন। তিন বছর মেয়াদি এই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালে মার্চ মাসে।
মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম কৃক বলেন, মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সম্মেলনের সিডিউল চেয়ে আবেদন দেব। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলব। তবে আমরা চাই শীতকালের সময় অর্থাৎ নভেম্বরে সম্মেলনে করতে।
সারাদেশে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে এখনো পর্যন্ত কয়টি সাংগঠনিক জেলার কমিটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন জানতে চাইলে কৃক বলেন, ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪৫টির মতো করতে পেরেছি। বাকিগুলো তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। আমরা তো বেশি সময় পাইনি। মাত্র তিন বছর সময় পেয়েছি। করোনা কারণে তো সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।
যুব মহিলা লীগের কমিটিরও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আরও দুইবছর আগে। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে নাজমা আক্তার সভাপতি ও অপু উকিল সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনর্র্নিবাচিত হন। তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ১১মার্চ। এর কিছু দিন আগে ফেব্রুয়ারিতে যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ‘অপকর্ম’ নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। তাকে সংগঠন থেকে অজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হলেও প্রশ্ন উঠেছিল সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে। ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সভায় যুব মহিলা লীগের বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নতুন কমিটি গঠন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন দলের সিনিয়র নেতারা।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল বলেন, আমরা সম্মেলন করতে প্রস্তুত আছি। সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের যে তারিখ নিধারণ করে দেবেন সেই তারিখ অনুযায়ী আমরা সম্মেলন করব।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আওয়ামী মহিলা লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মৎস্যজীবী লীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। এছাড়া জাতীয় শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগ দলটির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। গত জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ ও মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই চার সহযোগী ও এক ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সবটিতেই শীর্ষ পদে এসেছে নতুন নেতৃত্ব। এই পাঁচটি সংগঠন ছাড়া বাকিগুলো করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। এবার মেয়াদোত্তীর্ণ আওয়ামী লীগের সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের কমিটি করতে চায় মাদার সংগঠন আওয়ামী লীগ।