মুমিনুলের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের স্বস্তি

27

স্পোর্টস ডেস্ক :
মুমিনুল হক সেঞ্চুরি করেছেন। তাতেই বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি যোগ হয়ে যাওয়ার কথা। মুমিনুল সেঞ্চুরি করলেই প্রতিপক্ষ যেই হোক টেস্ট ম্যাচটিতে ভাল ফল পায় বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত যে টেস্টেই সেঞ্চুরি করেছেন মুমিনুল, সেই টেস্টেই বাংলাদেশ হয় জিতেছে, নয়তো ড্র করেছে। তাহলে তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রথমদিনই ৩১৫ রান করে বাংলাদেশ নিরাপদেই আছে। মুমিনুলের ১২০ রানের ইনিংস ও শেষে অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা স্পিনার নাঈম হাসান (২৪*) ও তাইজুল ইসলামের (৩২*) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে নিরাপদে থাকার ভিতও গড়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথমদিনে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৫ রান করে ফেলেছে।
স্বস্তি শুধু মুমিনুলের সেঞ্চুরিতেই মিলেনি, সাকিব আল হাসান যে ইনজুরিমুক্ত হয়ে আবার মাঠে ফিরেছেন; তাতেও মিলেছে। মুমিনুলের সঙ্গে আবার সাকিবের বড় একটি জুটিও রয়েছে। শুরুতে দলের ১ রানেই সাজঘরে পথ ধরা টেস্টে একবছর পর ফেরা সৌম্য সরকারের ব্যর্থতার পর ইমরুল কায়েস (৪৪) ও মুমিনুল মিলে দ্বিতীয় উইকেটে ১০৪ রানের জুটি গড়েছেন। এরপর মোহাম্মদ মিঠুন ও মুমিনুল মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৪৮ রানের জুটি গড়ার পর মুমিনুলের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ৬৯ রানের জুটি গড়েছেন সাকিব। ফিরেই ৩৪ রানের ইনিংস খেলেছেন টেস্ট অধিনায়ক সাকিব। এতে স্বস্তি ভালভাবেই যোগ হয়েছে। টেস্টের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে পারেননি। সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ। এবার কঠিন প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ফিরেছেন। যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর আগে জুলাইয়েই নিজ দেশে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করেছে। সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এবার দেশের মাটিতে জবাব দিতেই সাকিব নেমেছেন।
প্রথমদিনে সেই জবাব দেয়াও গেছে। নবম উইকেটে যখন দুই স্পিনার নাঈম ও তাইজুল মিলে ৫৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে এখনও ব্যাটিংয়ে আছেন, তাতেই আসলে প্রথমদিনটি জয় করে নিয়েছে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহীম (৪) ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৩) যদি নিজেদের মেলে ধরতে পারতেন তাহলেতো প্রথমদিনেই আরও বড় স্কোর দেখার মিলত। ইমরুল (৪৪), মিঠুন (২০) ও মিরাজ (২২) যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বড় ইনিংস গড়তে পারেননি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেসারদের নিয়ে ভয় ছিল। বিশেষ করে কেমার রোচ ও শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে নিয়ে ধুকধুকানি ছিল। রোচকে ঠিকমতোই খেলেছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু গ্যাব্রিয়েল (৪/৬৯) ভুগিয়েছেন। মুমিনুল, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ; এই চার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যানকে শিকার করেছেন গ্যাব্রিয়েল। নিজের ১১তম ওভার পর্যন্ত কোন উইকেট নিতে পারেননি গ্যাব্রিয়েল। ১২তম ওভারে এসেই মুমিনুল, মুশফিককে সাজঘরে ফেরান। নিজের পরের দুই ওভারেই আবার মাহমুদুল্লাহ ও সাকিবকেও ফিরিয়ে দেন। ২২২ রান পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩ উইকেট ছিল। সেখান থেকে মুহূর্তেই ২৩৫ রানের মধ্যে সাত উইকেটের পতন ঘটে যায়। ১৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। গ্যাব্রিয়েলই চার উইকেট শিকার করে নেন। পুরনো বলে আলো ছড়ান গ্যাব্রিয়েল। বাংলাদেশের ইনিংসের ভিতও নাড়িয়ে দেন। তখন বাংলাদেশ দিনটির শেষে এমন ঝলক দেখাবে তা ভাবাই যায়নি। কিন্তু মিরাজ, নাঈম, তাইজুল মিলে তাই করে দেখালেন।
মিরাজ ও নাঈম মিলে অষ্টম উইকেটে ছোট্ট হলেও ২৪ রানের জুটি গড়েন। যা সাহস বাড়ায়। এরপর নাঈম ও তাইজুল মিলে অসাধারণ ব্যাটিং করে দিন অতিক্রম করে ফেলেন। দুইজন মিলে আজও ব্যাটিংয়ে নামবেন। যে স্কোর গড়েছে বাংলাদেশ, আজ আরও রান যোগ হলে স্কোর মজবুত হয়ে উঠবে। সেই স্কোর নিয়ে ভালভাবেই লড়াই করা যাবে। সেই লড়াই করার ভিততো আসলে গড়া হয়েই গেছে। মুমিনুল যে সেঞ্চুরি করেছেন, তাতে মনস্তাত্ত্বিক জয়তো হয়েই গেছে বলা চলে।
মুমিনুল ৬৯ বলে হাফসেঞ্চুরি করার পর ১৩৫ বলে সেঞ্চুরি করেন। ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি করে দেখান। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও সেঞ্চুরি করলেন। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে দেখালেন। সেই সঙ্গে দেশের হয়ে তামিম ইকবালের গড়া আট সেঞ্চুরির সঙ্গী হলেন। বছরের শুরুতে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল। আবার যখন চট্টগ্রামে খেলতে নামলেন প্রথমদিনই সেঞ্চুরি তুলে নিলেন। শেষ পর্যন্ত ১৬৭ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় ১২০ রান করে থামেন মুমিনুল। এই বছরই চার সেঞ্চুরি করে ফেললেন মুমিনুল। দেশের হয়ে এক বছরে তামিমকে (তিন সেঞ্চুরি) ছাপিয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি এখন মুমিনুলেরই। তামিম আটটি সেঞ্চুরি করেছিলেন ৫৬ টেস্টে। সেখানে মুমিনুল ৩২ টেস্টেই তা করে ফেললেন। ভারতের তারকা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলিও এ বছর চার সেঞ্চুরি করেছেন। তবে কোহলি ১০ টেস্টে তা করেছেন। মুমিনুল করলেন সাত টেস্টেই। সবদিক দিয়েই মুমিনুল ঝলক দেখিয়েছেন। চট্টগ্রামেই ৬ সেঞ্চুরি করে দেখালেন মুমিনুল।
মুমিনুলের এ সেঞ্চুরিতে স্বস্তিও যুক্ত হয়ে গেল। এর আগে ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি করেন মুমিনুল। বাংলাদেশ দুই টেস্টই ড্র করে। পরের বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করাতেও টেস্ট ড্র হয়। একই বছর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে টেস্ট জেতান। এ বছর জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করে ম্যাচ ড্র করান। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে সেঞ্চুরি করে জেতান। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করলেন। তাতে করে যে পরিসংখ্যানে মুমিনুলের সেঞ্চুরি এগিয়ে চলেছে, তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে চট্টগ্রাম টেস্টে খবর আছে তা বোঝাই যাচ্ছে। প্রথমদিনটি যেভাবে কেটেছে, তাতেই স্বস্তি যোগ হয়েছে। এখন সেই স্বস্তি ভাল ফল বয়ে আনলেই হলো।