বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী হলেও নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা খুব কম। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য। উল্লেখ্য, এটি করা হয়েছে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে। এতে দেখা গেছে, উন্নত বিশ্বে চাকরি বাকরিসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নারীর অবদান আশাব্যঞ্জক হলেও তুলনামূলকভাবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে এই হার যথেষ্ট কম। তবে চীন, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও কোরিয়ার ক্ষেত্রে অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভাল। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে তা আদৌ যথেষ্ট নয়। এই অঞ্চলে নারীরা অদ্যাবধি কমবেশি পুরুষের মুখাপেক্ষী অথবা পুরুষের ওপর নির্ভরশীল। গবেষণায় ৩০০ নারী উদ্যোক্তার সাক্ষাতকারে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, মাত্র একজন নারী নিজের উদ্যোগে ব্যবসা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ১৫ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে (এসএমই), যার ১০ ভাগেরও কম উদ্যোক্তা নারী। অথচ নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ করে রাজনীতিতে বাংলাদেশ এক ঈর্ষণীয় উচ্চতায় অবস্থান করছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার, বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ মন্ত্রী পর্যায়ে একাধিক নারী দক্ষতা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘদিন থেকে, যা প্রশংসিত হয়েছে সারা বিশ্বে। সে অবস্থায় উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারী হিসেবে নারীর পিছিয়ে থাকার বিষয়টি কিছুটা হলেও উদ্বেগজনক বৈকি।
দেশে নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা সম্পর্কে বিআইডিএসের এক জ্যেষ্ঠ নারী গবেষক বলেন, এসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা রয়েছে। তবে এর জন্য অন্তত তিন বছর একজন নারী উদ্যোক্তার স্বউদ্যোগে ব্যবসা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বাস্তবতা হলো, নারী উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরু করার জন্য মূলধন সমস্যা অন্যতম। এর জন্য তাদের প্রধানত পুরুষ অর্থাৎ স্বামী অথবা পিতার মুখাপেক্ষী হতে হয়। সেক্ষেত্রে পুরুষরাও স্বভাবতই মুখ ফিরিয়ে থাকেন। এ কারণে যে তারা কোন ঝুঁকি নিতে চান না। তবে এও দেখা গেছে, অনেক পুরুষ ঋণ প্রাপ্তি সহজ হবে বিবেচনায় স্ত্রী অথবা কন্যার নাম ব্যবহার করে থাকেন। তাতে ঋণ প্রাপ্তি সহজ হলেও ব্যবসা মূলত পরিচালনা করে থাকেন পুরুষই। গবেষকের মতে, এ সমস্যা সমাধানের জন্য তরুণ ও শিক্ষিত নারীদের উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। বিশেষ করে বিজনেস প্রপোজাল বা ব্যবসা পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। এর পাশাপাশি ব্যবসার প্রাথমিক পুঁজি সংগ্রহের ব্যাপারেও জানা প্রয়োজন। বিশ্বের অনেক দেশেই বিজনেস প্রপোজালের বিপরীতে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক। এর পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে জামানতবিহীন ঋণ সুবিধাও বাড়ানো যেতে পারে, যেটা হতে পারে বর্তমানের ২৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক কোটি ও তদুর্ধ। তাহলে নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবে বলে আশা করা যায়।
মোটিভেশন বা উৎসাহ প্রদান নারীদের উদ্যোক্তা হতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। উন্নত বিশ্বে নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু নি¤œ আয়ের দেশগুলোতে নারীর কর্মসংস্থানের হারই যেখানে কম, সেখানে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা আরও কঠিন। সে অবস্থায় বাংলাদেশে নারী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার জন্য পরিবারের পুরুষ সদস্যের উৎসাহ ও প্রণোদনা আরও বেশি করে অত্যাবশ্যক ও জরুরী।