কাজিরবাজার ডেস্ক :
১৪ বছর পর ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার রায় হলেও নিহত স্বজনদের চোখে পানি। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন অনেকে। অনেকেই ক্ষোভে ফুঁসেছেন। মামলার রায় পেয়েও তারা পাননি স্বজনহারানোর সান্ত¦না। আহতরা পাননি শরীরে বয়ে বেড়ানো গ্রেনেডের স্লিন্টারের যন্ত্রণা ভোলার সান্ত্বনা বরং বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের যন্ত্রণা। তারা পায়নি তাদের কাক্সিক্ষত রায়। মৃত্যুদন্ড হয়নি এ হামলার মাস্টারমাইন্ড তারেক রহমানের। বহুল আলোচিত বর্বরোচিত ভয়াবহ একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ-ের আদেশ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট ১১ আসামির বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয়েছে। বুধবার ঢাকার এক নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বেলা ১২টায় পিনপতন নীরবতার মধ্যে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে করা আলোচিত দুই মামলার রায় ঘোষণা করেন। কারাদন্ডের আসামিদের হাজতবাসকালীন সময় সাজা থেকে বাদ যাবে। এবং ৩০ দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে। ফাঁসির দন্ডের মধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক দুই প্রধানও রয়েছেন। এ ছাড়া সাবেক তিন আইজিপিসহ আট পুলিশ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, গ্রেনেড হামলা মামলার ঘটনার মূল হোতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানেরও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড হওয়া উচিত ছিল। কারণ তিনি ষড়যন্ত্রের মূল হোতা। রায়ের কাগজপত্র পাওয়ার পর আমরা চিন্তাভাবনা করব। আপীল করব কিনা। রায়ে রাষ্ট্রপক্ষের চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। এ রায় পর্যালোচনা করে পরে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। আমরা রায় ও আদেশ পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। প্রসিকিউশন টিম আছে সেখানে পর্যালোচনা এ করে আসামিদের সাজা বাাড়াতে আপীল করব কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়াতে আদালতের বাইরে অনেককেই হতাশা ব্যাক্ত করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লা মিয়া বলেছেন, এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। তারেক রহমান দেশে ফিরলে আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করব। এ রায়ে আমরা খুশি হতে পারিনি। এর আগে পৃথক পৃথক মামলায় তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরের দন্ড হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তারেক রহমানকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। অর্থপাচারের মামলায় নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদন্ড ও ২০ কোটি জরিমানা বহাল রাখে হাইকোর্ট। এ ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্র প্র্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় মৃত্যুদন্ড বিচারিক আদালত।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। দীর্ঘ ১৪ বছর ২ মাস ১৯ দিনের মাথায় গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হলো।
গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ২১ আগষ্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার যে ষড়যন্ত্র, তার মূল পরিকল্পনা হয়েছিল হাওয়া ভবনে। ইনডেমনিটি বিলের মাধ্যমে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র দেশে শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২৩ বছর ২ মাস পর জাতি, জাতির পিতা হত্যার দায় থেকে কলঙ্কমুক্ত হয় বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ জাতির পিতাকে হত্যা করার পর চার জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে না গিয়ে বহমান থাকে। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শনিবার আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়। শেখ হাসিনাকে ‘হালকা নাশ্তা’ করানো হবে : এই উদ্ধৃতি দিয়ে দেশীয় জঙ্গি সংগঠনের কতিপয় সদস্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের সহায়তায় হামলা করে। তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রীয় সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটনাস্থল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সম্মুখে যুদ্ধে ব্যাবহৃত স্পেশালাইজড মারণাস্ত্র, আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণের মাধ্যমে ঘটনা ঘটানো হয়। প্রশ্ন উঠে কেন এই মারণাস্ত্রের ব্যবহার? রাজনীতি মানেই কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ? শুধু আক্রমণই নয় দলকে নেতৃত্বশূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা। রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে শত বিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে। এটা কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যে দলই থাকবে, বিরোধী দলের প্রতি তাদের উদার নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিরোধীদলীয় নেতাদের হত্যা করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করা মোটে গণতান্ত্রিক চিন্তার বহির্প্রকাশ নয়।
মামলার রায়কে ঘিরে সকাল থেকেই আদালত অঙ্গনে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়। বেলা এগারোটা ২০ মিনিটে আসামিদের কড়া পাহারায় আদালতে নিয়ে আসা হয়। এরপর এগারোটা ৪০ মিনিটে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন এজলাসে আসেন। তিনি রায় পড়া শুরু সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ চলে যায়। এর মধ্যেই চার্জার লাইটের মাধ্যমে তিনি রায় পড়তে থাকেন। এর পর বিদ্যুৎ আসে। কিন্তু বিচারক যখন পর্যবেক্ষণ পড়া শুরু করেন তখন আবার বিদ্যুত চলে যায়। সাংবাদিক, আইনজীবী, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও গোয়েন্দা সংস্থার উপস্থিতিতে আদালত কক্ষ ছিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর উভয়পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে রায় ঘোষণার জন্য বুধবার তারিখ ধার্য করে দেয় আদালত। সে অনুযায়ী বুধবার জনাকীর্ণ রায় ঘোষণা করে আদালত। কার্যক্রম শুরুর আগেই কারাগারে থাকা ৩১ আসামিকে এজলাসে হাজির করা হয়। ১৮ আসামি পলাতক।
যাদের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে : আদালত ১৯ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। তারা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর (উপস্থিত), বিএনপি-জামায়াত জোটের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু (উপস্থিত), তার ভাই মাওলানা তাইজউদ্দীন (পলাতক), হুজির সাবেক আমির মাওলানা শেখ আবদুস সালাম (উপস্থিত), কাশ্মীরী জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট (উপস্থিত), আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম (উপস্থিত), মাওলানা শওকত ওসমান (উপস্থিত), মহিবুল্লাহ ওরফে অভি (উপস্থিত), মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাঃ জাফর (উপস্থিত), আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল (উপস্থিত), জাহাঙ্গীর আলম (উপস্থিত), হাফেজ মাওলানা আবু তাহের (উপস্থিত), হোসাইন আহম্মেদ তামিম (্উপস্থিত), মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল (উপস্থিত), মোঃ রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ (উপস্থিত), মোঃ উজ্জল (উপস্থিত), এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী (উপস্থিত), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (উপস্থিত) ও হানিফ পরিবহনের মালিক হানিফ (উপস্থিত)। এই আসামিদের দন্ডবিধি ৩০২, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দন্ডবিধির ৩০৭ ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের ৩ ও ৬ ধারায় হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিস্ফোরক আইনের ৪ ও ৬ ধারায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে গুরুতর জখম করার দায়ে ২০ বছরের কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এই ১৯ আসামির ক্ষেত্রে কেবল মৃত্যুদন্ডের শাস্তিই কার্যকর হবে। মৃত্যু পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের দন্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে রায়ে।
যাদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে : এ মামলায় ১৯ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছে। যাদের যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে তারা হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (পলাতক), খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী (পলাতক), বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল (উপস্থিত), মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু হোমাইরা ওরফে পীর সাহেব (উপস্থিত), মাওলানা সাব্বির আহমেদ আহম্মেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির (উপস্থিত), আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আব্দুর রাজ্জাক (উপস্থিত), আবুবকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার (উপস্থিত), আরিফুল ইসলাম আরিফ (উপস্থিত), হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া (উপস্থিত) মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মোঃ খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর (পলাতক), মোঃ ইকবাল, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই (পলাতক), রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)। তাদের দন্ডবিধি ৩০২, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। দন্ডবিধি ৩০৭, ১২০ খ, ৩৪ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জনিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ৩ ও ৬ ধারায় যাবজ্জীবন, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
বিস্ফোরক আইনের ৪ ও ৬ ধারায় ২০ বছরের কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। সব সাজা একযোগে কার্যকর হবে বলে এই ১৯ আসামির ক্ষেত্রে কেবল যাবজ্জীবন কারাদন্ড কার্যকর হবে।
১১ জনকে ভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড : এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আশরাফুল হুদা (উপস্থিত) ও শহুদুল হক (উপস্থিত), খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক (উপস্থিত), লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার (পলাতক), মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন (পলাতক), ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান (পলাতক), আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান (পলাতক), সাবেক আইজিপি খোদাবক্স চৌধুরী (উপস্থিত), সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার রুহুল আমিন (উপস্থিত), সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ (উপস্থিত), সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান (উপস্থিত) দুই বছর করে কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আরেক ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। চৌদ্দ বিবেচ্য বিষয় নির্ধারণ করে তা পর্যালোচনা, সাক্ষ্য-তথ্য প্রমাণের আলোকে এ মামলার রায় ও আদেশ দেয়া হয়েছে বলে আদালতের রায়ে বলা হয়।
১৪ বিবেচ্য বিষয় : ১৪ বিবেচ্য বিষয় নির্ধারণ করে তা পর্যালোচনা, সাক্ষ্য-তথ্য প্রমাণের আলোকে এ মামলার রায় ও আদেশ দেয়া হয়েছে বলে আদালতের রায়ে বলা হয়। এ বিবেচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে :১) অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রমূলক সভা করে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামি আহসান উল্লাহ কাজলের ভাড়া করা ফ্লাটে বাড়ি নং ম-৩০ পশ্চিম মেরুল বাড্ডায় মৃত জয়নাল আবেদিনের তিন তলা বাড়ির গ্যারেজ সংলগ্ন পূর্ব পার্শে¦র ৩ কক্ষবিশিষ্ট ফ্ল্যাটে থেকে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট ঘটনাস্থল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে হামলার জন্য আসামিরা একত্রিত হয়ে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে কিনা ও গ্রেনেড নিক্ষেপকারীরা এই ঘটনাস্থল থেকে গ্রেনেড সংগ্রহ করে কিনা, ২) অবসরপ্রাপ্ত খাদ্য পরিদর্শক রুহুল আমিনের বাড়ি হোল্ডিং নম্বর ২/৫ আনন্দনগর বাড্ডা, আসামি মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সি উক্ত বািড় ভাড়া নিয়ে অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করে জঙ্গি কর্মে নিযুক্ত ছিল কিনা, ৩) মেরুল বাড্ডার রাউজক প্লট নং ৫৩ লেঃ কর্নেল গোলাম রাব্বানী (অব) এর ৪ তলা বাড়ির তৃতীয় তলার উত্তর অংশের ফ্ল্যাট আসামিগণ ভাড়া নিয়ে গ্রেনেড সংরক্ষণ করতা কিনা। এবং বিভিন্ন গ্রেনেড হামলায় উক্ত বাড়ি থেকে গ্রেনেড সরবরাহ হয়েছে কিনা, ৪) রোড নং ৫/ এ বাড়ি নং ৬১ ধানম-ির আবাসিক এলাকার, বাড়িটি বিএনপি জামায়াত চার দলীয় জোট সরকারের উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর দ্বিতল সরকারী বাসভবন, উক্ত বাসভবনে ১৮-০৮-০৪ ইং তারিখে আব্দুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর, আসামি মুফতি হান্নান মুন্সি, আসামি আহসান উল্লা কাজল, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা তাইজ উদ্দিনগণ ২১-০৮-০৪ ইং তারিখে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করে কিনা। ১৮-০৮-০৪ তারিখে পরিকল্পনা গ্রহণ করে গ্রেনেড প্রাপ্তি, অর্থবল, প্রশাসনিক সহায়তা বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক ২০-৮-০৪ তারিখে আসামি আহসান উল্লাহ কাজল ও মুফতি মঈন ওরফে আবু জান্দাল তৎকালীন উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ধানম-ির বাসা থেকে আসামি মাওলানা তাইজ উদ্দিনের সরবরাহকৃত ১৫টি আর্জেস গ্রেনেড এবং নগদ ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন কিনা, ৫) প্লট নং ৩, সেকসন-১, ব্লক সি মিরপুর মসজিদ-ই-আকবর আসামি আবু তাহের শিক্ষকতা করতেন কিনা। ১৯-০৮-০৪ তারিখে আসামি আহসান উল্লা কাজল, মাওলানা আবু তাহের, আব্দুস সালাম পিন্টু, মুফতি মঈন পরিকল্পনা ও অপরাধ সংঘটনের জন্য প্রয়োজনীয় শলাপরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করেন কিনা, ৬)৩/১১ আলী এন্ড নুর রিয়াল এস্টেট সাত মসজিদ রোড মোহাম্মদপুর বাড়ির নিচ তলায় হরকত-উল-জিহাদ আল ইসলামী সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হতো কিনা, ৭) গুলশান থানাধীন লালাসরাই মৌজাস্থিত রোড নং ১৩, ব্লক নং ডি, বাড়ি নং ৫৩, বনানী মডেল টাউনস্থ জনৈক আশেক আহম্মেদ পিতা আব্দুল খালেকের বাসা, যে বাসাটি হাওয়া ভবন নামে পরিচিত, উক্ত হাওয়া ভবন বিএনপি জামায়াত ঐক্য জোট সরকারের কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু ছিল কিনা। উক্ত ঘটনাস্থলে পলাতক তারেক রহমান অপরাধ সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্রমূলক সভা করে কিনা। ও জঙ্গী নেতারা তারেক রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মিটিং করে কিনা, ৮) মোহাম্মদপুর থানাধীন আলী এন্ড নুর রিয়েল এস্টেট এলাকাধীন সাতগম্বুজ মসজিদে ঘটনার পূর্বে আসামি মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সি, মাওলানা আব্দুস সালাম, মাওলানা তাইজ উদ্দিন, মাওলানা আব্দুর রউফ, আব্দুল মাজেট ভাট, অভিন্ন অভিপ্রায়ে ও ষড়যন্ত্রমূলক সভা করে তৎকালীন বিরোধী দলীয় ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা করে কিনা, ৯) মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেটের কাছে জেহাদ আল ইসলামীর অফিসে ও খিলগাঁও থানা এলাকায় হরকত-উল-জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ে বিভিন্ন সময় আসামিগণ অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধ অপরাধমূলক সভা ও ষড়যন্ত্র করে কিনা, ১০) অভিন্ন অভিপ্রায়ে ও পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে পরস্পর যোগসাজশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ঘটনায় জাড়িত আসামিদের গ্রেনেড আক্রমণ পরিচালনার সুবিধার্থে ও অপরাধীদের রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা, ১১) অভিন্ন অভিপ্রায়ে ও পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করে মামলার ঘটনার ব্যবহৃত অবিস্ফোরিত সংরক্ষণযোগ্য তাজা গ্রেনেড আলামত হিসেবে জব্দ করার পর ও তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করে এবং আদালতের অনুমতি গ্রহণ না করে অপরাধীদের বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী কর্তৃক ধ্বংস করার ও আলামত নষ্ট করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা, ১২) অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত সভা ও পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে পরস্পর যোগসাজশে উদ্দেশ্যেমূলকভাবে আসামিদের সহায়তা করার লক্ষ্যে আসামিদের নির্বিঘেœ ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে ও পরবর্তীতে আসামিদের অপরাধের দায় থেকে বাঁচানোর সুযোগ করে দেয়ার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা, ১৩) প্রকৃত আসামিগণের বিরুদ্ধে কোনপ্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং তাদের রক্ষা করার জন্য প্রলোভন ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্য লোকের ওপর দায় বা দোষ চাপিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার লক্ষ্যে মিথ্যা ও বানোয়াট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী লিপিবদ্ধ করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা, ১৪) উল্লেখিত ঘটনাস্থলসমূহে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র ও পূর্ব পরিকল্পনা করে পরবর্তীতে মূল ঘটনাস্থল আওয়ামী লীগ কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সম্মুখে ঘটনার তারিখ ও সময় আর্জেস গ্রেনেড হামলার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় নেতাকর্মীসহ ২৪ জনকে হত্যা এবং তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করার অপরাধে আসামিগণকে দ-বিধির ১২০বি/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩০২/১০৯/২০১/২১২/২১৭/২১৮/২৩০ ও ৩৪ ধারায় শাস্তি প্রদান করা যায় কিনা।
আদালতের পর্যবেক্ষণ : রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে , ২১ আগষ্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার যে ষড়যন্ত্র, তার মূল পরিকল্পনা হয়েছিল হাওয়া ভবনে। ইনডেমনিটি বিলের মাধ্যমে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র দেশে শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার দীর্ঘ ২৩ বছর ২ মাস পর জাতি, জাতির পিতা হত্যার দায় থেকে কলঙ্ক মুক্ত হয় বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ১৫ আগষ্ট ১৯৭৫ জাতির পিতাকে হত্যা করার পর চার জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে না গিয়ে বহমান থাকে। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ২১ আগস্ট শনিবার আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার হীন প্রচেষ্টা চালানো হয়। শেখ হাসিনাকে হালকা নাশতা করানো হবে : এই উদ্ধৃতি দিয়ে দেশীয় জঙ্গি সংগঠনের কতিপয় সদস্য আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের সহায়তায় হামলা করে। তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রীয় সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটনাস্থল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সম্মুখে যুদ্ধে ব্যাবহৃত স্পেশালাইজড মারণাস্ত্র, আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণের মাধ্যমে ঘটনা ঘটানো হয় । প্রশ্ন উঠে কেন এই মারণাস্ত্রের ব্যবহার? রাজনীতি মানেই কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ? শুধু আক্রমণই নয় দলকে নেতৃত্ব শূন্য করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা। রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে শত বিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে। এটা কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ক্ষমতায় যে দলই থাকবে, বিরোধী দলের প্রতি তাদের উদার নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে ক্ষমতাসীদের রাজনৈতিক ফায়দা অর্জন করা মোটেই গণতান্ত্রিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ নয়।
সাধারণ জনগণ রাজনীতি চায় না। সাধারণ জনগণ চায় যে কোন রাজনৈতিক দলের সভা, সমাবেশে যোগ দিয়ে সেই দলের নীতি, আদর্শ ও পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ধারণ করা। আর সেই সভা সমাবেশে আর্জেস গ্রেনেড বিস্ফোরণ করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ জনগণকে হত্যার এ ধারা চালু থাকলে পরবর্তীতে দেশের সাধারণ জনগণ রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়বে। অত্রাদালত চায় না সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর দরগা শরীফের ঘটনার সাবেক অর্থমন্ত্রী এসএম কিবরিয়ার ওপর নৃশংস হামলার, রমনা বটমূলে সংঘটিত বোমা হামলার এবং অত্র মোকদ্দমার ঘটনার তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নৃশংস বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার পুনরাবৃত্তি।
অত্রাদালত সাক্ষীর কাঠগড়ায় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত মাকে দুর্বিষহ কষ্ট পেয়ে মৃত্যুবরণ প্রত্যক্ষ করা পি ডাব্লিউ ১৯৭ নাজমুল হাসান পাপনের ও তৎ স্ত্রী পি ডাব্লিউ ১৯৮ রোকসানা হাসানের কষ্ট প্রত্যক্ষ করেছেন, আরও প্রত্যক্ষ করেছেন পিডব্লিউ ১৭৫ মোসাম্মাৎ উম্মে কুলসুম রেনুকা, নুজহাত এ্যানী, রাশেদা আক্তার রুমা, নীলা চৌধুরী ঘটনার সময় ঘটনাস্থল থেকে যারা গ্রেনেড হামলার মারাত্মকভাবে জখম হয়ে দেশে বিদেশে চিকিৎসার পরও এখনো দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন তাদের চোখে ঘুম নেই গ্রীষ্ম বা শীত সব সময়ই শরীরের বিভিন্ন অংশে স্পিøন্টারের তীব্র যন্ত্রণার কুঁকড়ে যাচ্ছেন। যাদের পারিবারের সুস্থ সদস্যগণ প্রাণহীনভাবে বেঁচে রয়েছেন তাদের আদালত গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছেন। পিডব্লিউ এডভোটেক সাহারা খাতুন এমপি, কাজী জাফরুল্লাহ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আফম বাহাউদ্দিন নাসিম এমপির আদালতে সাক্ষ্য, ঘটনার তারিখে সময়ে ঘটনাস্থলেই যে মারাত্মক ও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল সে মর্মে বক্তব্য। আদালত গভীরভাবে পি ডব্লিউ ১২৭ অধ্যাপক ডাঃ প্রাণ গোপাল দত্ত, নাক কান, গলা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যিনি তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর কানের চিকিৎসা করেন। তার জবানবন্দী পর্যালোচনা করা হয়। ঘটনার সময় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ফলে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর ডান কানে গুরুতর জখম হয়। আসামিগণকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে উল্লেখিত নৃশংস ও ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ সম্ভব বলে আদালত মনে করেন।
সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, মূল ঘটনার পূর্বে বিভিন্ন ঘটনাস্থলে অত্র মোকদ্দমার আসামিগণ অভিন্ন অভিপ্রায়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র সভা করে পরিকল্পিতভাবে অত্র মোকদ্দমার ঘটনাস্থল ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউর সামনে ঘটনার তারিখ ও সময় মারাত্মক সমরাস্ত্র আর্জেস গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ ২৪ জনকে হত্যা করে ও শতাধিক নেতাকর্মীকে মারাত্মকভাবে জখম করে মর্মে আসামিগণের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রসিকিউশন পক্ষ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। সে প্রেক্ষিতে আসামিগণকে শাস্তি প্রদান করা যুক্তিসঙ্গত বলে অত্রাদালত মনে করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ রায়ে সন্তুষ্ট : একুশ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলার চীফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেছেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। ১৬ কোটি মানুষ যে রায়ের অপেক্ষায় ছিলেন, বুধবার সে রায় হয়েছে। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার লক্ষ্যে এ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রথমসারির নেতাদের হত্যা করাই ছিল এ হামলার প্রধান টার্গেট। তিনি আরও বলেন, এ রায় পর্যালোচনা করে পরে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। আমরা রায় ও আদেশ পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। প্রসিকিউশন টিম আছে সেখানে পর্যালোচনা এ করে আসামিদের সাজা বাাড়াতে আপীল করব কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিচারপ্রাথী মানুষ দীর্ঘদিন অপেক্ষায় ছিল। যাতে এ মামলার রায় ও আদেশ হয়। সে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের অপর আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, তারেকের নেতৃত্বে আবদুস সালাম পিন্টু, বাবরসহ হাওয়া ভবনে একাধিক মিটিং করে ষড়যন্ত্র করেছে। তারেকের নেতৃত্বেই এ হামলা চালানো হয়েছিল।
তারেক রহমান ফিরলে আপীল : আসামিপক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা আশা করেছিলাম তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতারা খালাস পাবেন। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। তারেক রহমান দেশে ফিরলে আমরা রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করব। তিনি আরও বলেন, অন্যায় ও বেআইনীভাবে তারেক রহমানকে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি অবশ্যই দেশে ফিরবেন। আমরা এ রায়ে ক্ষুব্ধ।