জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা :
জগন্নাথপুর পৌর এলাকার কেশবপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট পালন করেছেন। অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে দিন ব্যাপী দোকানপাট বন্ধ রেখে তারা প্রতিবাদ জানান। ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদের সাথে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় বড় ধরণের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় জনতা।
জানা গেছে, গত প্রায় এক মাস আগে জগন্নাথপুর পৌর এলাকার কেশবপুর গ্রামের কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামের একটি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এতে গ্রামবাসী পক্ষে অবস্থান নেন পৌর কাউন্সিলর তাজিবুর রহমান ও আরেক পক্ষে অবস্থান নেন কালা আছকির নামের এক ব্যক্তি। এ সময় কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কালা আছকির পক্ষের সালাহ উদ্দিন মিঠু লিখিত অভিযোগ করেন। এ অভিযোগ দায়েরের পর এবং অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান এর সুপারিশ মানা না মানা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ আরো বেড়ে যায়। এছাড়া বিভক্ত গ্রামবাসীর দুই পক্ষে কলখাটি নাড়ছেন গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের মধ্যে অনেকে। প্রকৃত পক্ষে তাদের ইশারায় এলাকায় একের পর আন্দোলন চলছে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে কালা আছকির পক্ষকে অপরাধী চক্র আখ্যায়িত করে আন্দোলন গড়ে তুলেছেন পৌর কাউন্সিলর তাজিবুর রহমান পক্ষসহ গ্রামবাসী। শুরু হয় একের পর এক আন্দোলন। বিভিন্ন দপ্তরে প্রদান করা হয় লিখিত আবেদন-নিবেদন। তাতেও কাজ হয়নি। বরং দিনদিন উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ ও উত্তেজনার মাত্রা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে পৌর কাউন্সিলর তাজিবুর রহমানসহ গ্রামবাসী কালা আছকির পক্ষের লোকজনকে সামজচ্যুত করে রেখেছেন। কালা আছকির পক্ষের ২ ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কেশবপুর বাজারে রয়েছে। তাদেরকে সমাজচ্যুত করায় দীর্ঘদিন ধরে তাদের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
এরই জের ধরে বুধবার সকালে কালা আছকির পক্ষের জাহাঙ্গীর মিয়া ও তোতা মিয়া নামের দুই ব্যবসায়ী কেশবপুর বাজারে বন্ধ থাকা তাদের দোকানপাট খুলেন। তা দেখে বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে বাজারের সকল ব্যবসায়ীরা দিন ব্যাপী তাদের দোকানপাট বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন শেষে বিকেলে প্রতিবাদসভা করেন। দিন ব্যাপী পরিস্থিতি মোকাবেলায় থানা পুলিশ মোতায়েন ছিল। সাবেক বাজার সেক্রেটারি চান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, সাবেক চেয়ারম্যান আছকির আলী, ডা. মতিউর রহমান বাদশা, পৌর কাউন্সিলর তাজিবুর রহমান, আহাদ উল্লাহ, ছুরত মিয়া, সাজুর মিয়া, মোশারফ আলী, আলিফ উদ্দিন, সমুজ মিয়া, বাজার সেক্রেটারি আরজদ খা, লিটন মিয়া, আলাল হোসেন, লেবু মিয়া, আনোয়ার হোসেন আনু, ছানু মিয়া, আবু হেনা রনি, আলী আফরোজ, রেদোয়ান আহমদ, আবদুল হেকিম, আবু লেইছ প্রমুখ। এ সময় শতশত প্রতিবাদী উত্তেজিত জনতা উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা বলেন, এলাকার চিহিৃত অপরাধী চক্রের অপকর্ম বন্ধ করে গ্রামবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে তাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
এ ব্যাপারে গ্রামবাসীর পক্ষে পৌর কাউন্সিলর তাজিবুর রহমান জানান, প্রকাশ্যে মদ, গাঁজা সেবন-বিক্রিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করার কারণে গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে কালা আছকির পক্ষের কালা আছকির, সালাহ উদ্দিন মিঠু, তোতা মিয়া, নছর আলী, শিশু, আনকার মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া ও টুনু মিয়াসহ ৮ জনকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হয়েছে। এর মধ্যে টুনু মিয়া গ্রামবাসীর কাছে ভুল স্বীকার করেছেন। তাদের অপকর্ম বন্ধ না করা পর্যন্ত গ্রামবাসীর আন্দোলন চলবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কালা আছকির পক্ষের আছকির মিয়া জানান, প্রকৃত পক্ষে তাদের সাথে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। এখন তারা অপরাধী আখ্যায়িত করে আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানী ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে সুনামগঞ্জ জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ সিদ্দিক আহমদের অনুমতিতে আমাদের বন্ধ থাকা দোকানপাট খোলা হয়ে ছিল।