সোনালি আঁশ যে স্বর্ণমুদ্রা বহন করে নিয়ে আসতে পারে, তা আগে কারও ভাবনায় ধরা পড়েনি। স্বর্ণতন্তুর যে কত শত রকমের ব্যবহার হতে পারে, সে নিয়ে এক যুগ আগেও কোন ধারণাই তৈরি হয়নি। বাঙালীর গৌরব ও অহংকারের স্থান ছিল এই পাট স্বাধীনতার আগে। পাকিস্তান পর্বে বাংলাদেশের পাট বিশ্ববাজারে একচেটিয়া অবস্থানে ছিল। সারা বাংলায় ছিল পাটের কল কারখানা। এশিয়ার বৃহত্তম পাটকলটিও ছিল এ দেশেই। পূর্ব বাংলার পাট বিক্রির টাকায় পাকিস্তানের শহর বন্দর গড়ে উঠেছিল। বৈষম্যের শিকার হয়েছিল বাংলা। পাট বিক্রির সামান্য অর্থও পূর্ব বাংলার জন্য ব্যয় করা হয়নি। পূর্ব বাংলার মানুষ এতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। পাকিস্তানের প্রধান রফতানি পণ্য ছিল পাট। স্বাধীন বাংলাদেশেও। কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে দেশের পাট শিল্পকে ধ্বংস করে দেয়া শুরু হয়। ক্রমান্বয়ে পাটকলগুলো বন্ধ হতে থাকে। সোনালি আঁশ হয়ে যায় কৃষকের গলায় ফাঁস। রফতানি তালিকা থেকে পাটের অস্তিত্ব ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। পাটের ব্যাগের স্থান দখল করে নেয় পলিথিন ব্যাগ। যা পরিবেশ দূষণে মারাত্মক সহায়ক। অথচ পাটের তৈরি সামগ্রী হচ্ছে পরিবেশবান্ধব। এক সময় পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ হলে পাটের ব্যাগ আলোর মুখ দেকতে থাকে।
বর্তমান সরকার আমলে পাটের বহুমুখী ব্যবহারে পদক্ষেপ নেয়। আবিষ্কার হয় পাটের জেনোম রহস্য। কৃষকরা আবার পাট চাষ শুরু করে। পাটের ন্যায্য দাম পেতে আর আহাজারি করতে হয় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী হিসেবে পাটের তৈরি নানাবিধ পণ্য উৎপাদন এই খাতকে আবারও লাভজনক শিল্পে পরিণত করছে। রফতানির ক্ষেত্রে পাটের ব্যাগসহ অন্যান্য সামগ্রীর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশে-বিদেশে পাটের বহুমুখী ব্যবহার চালু হচ্ছে ক্রমশ। উল্লেখ্য যে, পাট থেকে পলিথিন বা জুটপলি উৎপাদন হচ্ছে এদেশে। শুধু তাই নয়, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তা উৎপাদনের পাশাপাশি রফতানিও শুরু হচ্ছে। পলিথিনের বিকল্প এই ব্যাগের নামকরণ করা হয়েছে সোনালি ব্যাগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজের পছন্দ করা এই নাম। সারাবিশ্বে এই নামেই পরিচিত হবে। আগামী ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হবে উৎপাদন। এই ব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হাল্কা, পাতলা ও টেকসই। পাটের সূক্ষ্ম সেল্যুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে। মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। প্রথমদিকে স্বাভাবিক পলিথিনের তুলনায় এর দাম কিছুটা বেশি হবে। তবে উৎপাদন বাড়লে দামের সমন্বয় হয়ে যাবে। তখন তা সাশ্রয়ী হবে দামের ক্ষেত্রে। এভাবে পাটের ব্যবহার বাড়লে ন্যায্য দাম পাবেন কৃষক। অতীতের মতোই বাংলাদেশ পাট দিয়েই বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত হবে। আবিষ্কৃত এই ব্যাগের ভার বহন ক্ষমতা পলিথিনের প্রায় দেড়গুণ এবং এটি পলিথিনের মতোই স্বচ্ছ হওয়ায় খাদ্য দ্রব্যাদি ও গার্মেন্টস শিল্পের প্যাকেজিং হিসেবে ব্যবহারের খুবই উপযোগী। লতিফ বাওয়ানী জুটমিলে গত দুই বছর ধরে প্রতিদিন সর্বোচ্চহারে চার হাজার পিস এ ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব পাটের ব্যবহার বহুমুখীকরণ ও উচ্চমূল্য সংযোজিত পাট পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি এই ব্যাগ বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তুলবে বলে আশা করা যায়।