ক্রিকেটে উজ্জীবিত হোক

60

শুক্রবার বিকেলে অনেক আশা নিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখেছিল বাংলাদেশের কোটি কোটি দর্শক। শেষ পর্যন্ত আশাভঙ্গের বেদনায় পুড়তে হয়েছে তাদের। আক্ষেপটা থেকেই গেল বাংলাদেশের। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত বড় কোনো শিরোপা জেতা হলো না। এশিয়া কাপে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল। বিশেষ করে আগের ম্যাচে পাকিস্তানকে পরাজিত করার পর উজ্জীবিত বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখার অবকাশ ছিল বৈকি। শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করেছে বাংলাদেশ। প্রমাণ করেছে, জয়ের লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারে তারা।
দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে নতুন এক বাংলাদেশকে দেখেছে ক্রিকেটবিশ্ব। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো বিশ্বকাপজয়ী দল এখন বাংলাদেশের কাছে পাত্তা পায় না। ভারতও বুঝে গেছে, তার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে যে দলটি, তার নাম বাংলাদেশ। সমানে সমানে টক্কর দেওয়া এখন দলটির অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এর আগে নিদাহাস ট্রফিতেও শেষ বলে হেরেছিল বাংলাদেশ। হয়তো অভিজ্ঞতার অভাবেই বারবার এমনটি ঘটছে। কিন্তু দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত বাংলাদেশ দল যে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে বেশিদিন সময় নেবে না, প্রতিটি খেলোয়াড়ের শরীরী ভাষায় তা স্পষ্ট। বড় আশায় বুক বেঁধে স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ঘরে ফেরার চেয়ে কষ্টের আর কিছু নেই। দলের খেলোয়াড়দের চোট, টানা খেলার ধকল, কন্ডিশন—অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। তার পরও খেলাটা উপভোগ করেই খেলেছে তারা। আর সে কারণেই মাশরাফি বলতে পারেন, ‘খেলাটা আমরা হৃদয় দিয়ে খেলেছি।’ ভারতের মতো একটা দলকে শেষ বল পর্যন্ত এভাবে চেপে ধরে রাখার শক্তিও তো কম কিছু নয়। অনেকের মনে হতে পারে, কোহলিবিহীন ভারতকে চেপে তো ধরা যেতেই পারে। তাদের ভাবতে হবে, বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানও ছিলেন না দলে।
বাংলাদেশের ব্যাটিং কিন্তু শুরু হয়েছিল বীরদর্পেই। লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজ ভালো একটা ওপেনিং জুটি গড়ে দিয়েছিলেন। দাঁড়াতে পারেননি মিডল অর্ডার ও টেলএন্ডাররা। সেটা কি তাঁদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং, নাকি আর কিছু—তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হতে পারে। কৌশল ঠিক নাকি ভুল ছিল, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে পারেন। কিন্তু দলটি যে লড়াই করার মানসিকতা নিয়ে মাঠে নামে, তা অস্বীকার করা যাবে না। মাঠের খেলায় হেরে গেছে বাংলাদেশ। তাতে আক্ষেপ থাকতে পারে; কিন্তু প্রাপ্তি অনেক। ভারতের সঙ্গে এশিয়া কাপে প্রথমবারের মতো ৫০ ওভারের ফাইনালে শেষ ওভারের শেষ বলে স্বপ্নভঙ্গের তেতো স্বাদ। মিরপুর থেকে বেঙ্গালুরু, কলম্বো থেকে দুবাই—ফাইনাল হয়ে রইল হৃদয়ভাঙার দুঃখগাথা। তবু অভিনন্দন জানাতে হবে এই দলটিকে। এখন ভুলগুলো শুধরে তাকাতে হবে বিশ্বকাপের দিকে।