ডা: হাফেজ মাওলানা মোঃ সাইফুল্লাহ মানসুর
পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা উত্তম স্থান হলো মসজিদ। শুধু তাই নয়, মুসলমানদের কাছে মসজিদ আল্লাহর ঘর হিসেবেও বিবেচিত। মসজিদে মুসলিমগণ দ্বীনের মূলভিত্তি সালাত দৈনিক পাঁচ বার আদায় করে থাকে। মসজিদ দ্বীনের মূল ভিত্তি আদায়ের স্থান বিধায় দ্বীনের অন্যান্য কার্যাবলী সম্পাদনেও মসজিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অতএব মানুষের মধ্যে ইসলামি সচেতনতা বৃদ্ধি, মসজিদকে শুধুমাত্র ধর্মীয় উপসানালয় না বানিয়ে সামাজিকভাবে কাজে লাগাতে, মসজিদভিত্তিক দক্ষ ও আদর্শিক নাগরিক তৈরি এবং মসজিদে মুসল্লি সংখ্যা অধিকহারে বাড়াতে কিছু কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করা অতিব জরুরি।
এক্ষেত্রে আমি ১৫টি প্রস্তাবনা তুলে ধরলাম। যা একটি ইসলামিক মডেল মসজিদে রূপ দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
০১. মসজিদের ইমাম সাহেবকে শুধুমাত্র বেতনভুক্ত হয়ে ইমামতি করার মানসিকতা পরিহার করে তাকে সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় উন্নতিতে ভূমিকা রাখার মানসিকতা রাখতে হবে।
০২. ইমাম ও মসজিদ কমিটি মিলে এলাকার একটি সার্বিক চিত্র বা পরিসংখ্যাণ রিপোর্ট তৈরী করতে হবে। যেমন, এলাকার জনসংখ্যা কতজন, নামাজি কতজন, বে-নামাজি কতজন, আলেম কতজন, বেকার কতজন, শিক্ষিত কতজন, অ-শিক্ষিত কতজন ইত্যাদি (এ সম্পর্কে লেখকের একটি ফরম আছে) যা মসজিদের দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখতে হবে। এটি সকলে মিলে পরিবর্তন করার চেষ্টা অব্যহত রাখতে হবে।
০৩. মসজিদ কমিটির সকল সদস্যদের ৫ ওয়াক্ত নামাজী হতে হবে, না হলে নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। (কারণ তারাই ঐ সমাজের আইডল)
০৪. এলাকার মুসল্লিদের শতকরা ৮০% মুসল্লিকে কুরআন পড়ার আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে মসজিদ ভিত্তিক একটি মডেল মক্তব মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন ইসলামিক স্কলার অথবা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহায়তা নিতে হবে।
০৫. এলাকার শিক্ষিত মুসল্লিদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে কমপক্ষে একবার কুরআনের তাফসীর অর্থসহ পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে সাথে সহীহ তেলাওয়াত।
০৬. প্রতিটি মসজিদ কেন্দ্রীক ৫ থেকে ১০ জন আলেম তৈরীর জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। যারা প্রত্যেকেই হবে জনকল্যাণ এবং সমাজমুখি।
০৭. সমাজের অর্ধেক জনশক্তি হলো মহিলা তাই তাদের ইসলাম থেকে দুরে রেখে কোন ভাবেই নৈতিক আদর্শ সমাজ গড়া সম্ভব না। এক্ষেত্রে তাদের মাঝে কুরআনের দাওয়াত পৌছতে প্রতি শুক্রবার জুম্মার খৎবা শুনার ব্যবস্থা করতে হবে। এটি সম্ভব না হলে কম পক্ষে প্রতি মাসে ১ বার তাদের নিয়ে বিষয়ভিত্তিক একটি ইসলামী প্রোগ্রামের আয়োজন করতে হবে।
০৮. মসজিদে দল-মত নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ ভুলে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মুসলিম-মুসলিম ভাই-ভাই এ নীতিতে মসজিদের কার্যক্রম চালাতে হবে।
০৯. মসজিদের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে অন্যন্য ধর্মের লোকদের সঠিক পরিসংখ্যাণ তৈরী করতে হবে এবং তাদের সর্বাত্মক নিরাপত্তারার ব্যবস্থা এবং শুখে-দুঃখে তাদের পাশে এসে দাড়াতে হবে।
১০. মসজিদের ইমাম সাহেবের সম্মানের সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য তার পর্যাপ্ত সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা রাখতে হবে। (এক্ষেত্রে সরকারী সহযোগিতার দাবি করা যেতে পারে) এবং ঠুনকো অজুহাতে ইমামকে চাকরিচ্যুত করার মানসিকতা পরিহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
১১. মসজিদ কেন্দ্রীক একটি উন্নতমানের ইসলামীক পাঠাগার গড়ে তুলতে হবে। সেখানে সকল প্রকার ইসলামিক বইসহ কুরআনের তাফসীর ও হাদীসের গ্রন্থগুলি সংরক্ষণ থাকবে। মুসল্লিদের পড়ার প্রতি উৎসাহ তৈরী করতে নানামুখি কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বয়ের উপর বিভিন্ন প্রকার কুইজ বা প্রতিযোগীতার আয়োজন করা যেতে পারে)
১২. বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে মসজিদ ভিত্তিক যাকাতের অর্থ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, এর মাধ্যমে অসহায় দারিদ্র্য বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। (এর উপর লেখকের একটি নীতিমালা আছে, সেটিও ফলো করা যেতে পারে)
১৩. মসজিদ কেন্দ্রীক একটি অনুদান ফান্ড গঠন করতে হবে। যা দিয়ে ঐ এলাকার অসহায়, গরিব ও মিসকিনদের তাৎক্ষণিক সহযোগিতা করা যায়। এটি যাকাত, ওশর ও বিভিন্ন প্রকার অনুদান দিয়ে গঠন করা যেতে পারে।
১৪. মুসল্লিদের সু-স্বাস্থের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে অথবা সরকারের সহযোগীতা নিয়ে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যা দিয়ে মসজিদের মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাবে।
১৫. মুসল্লিদের মধ্যে উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময় ও উপলক্ষ্য সামনে রেখে উপহার সামগ্রী বা হাদিয়া আদান-প্রদানের সাংস্কৃতি চালু করতে হবে। এক কথায় মসজিদকে ভাবগাম্ভীর্য না রেখে মুসলিম উম্মাহকে সম্পৃতির বন্ধনে আবদ্ধ করতে মসজিদকে উৎসব মূখর মসজিদে রূপ দিতে হবে। তাহলে আশাকরি মসজিদ মুসলিম উম্মাহর মূল কেন্দ্র বিন্দুতে রূপ নিবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন।