সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের স্থানান্তরিত জায়গায় উদ্যান-উদ্যোগ বিষয়ে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখার পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় নগরীর একটি হোটেলে আয়োজন করা হয় গোলটেবিল বৈঠক। এতে উদ্যান উদ্যোগ বিষয়ে বিশিষ্ট নাগরিকদের মতামত গ্রহণ করা হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট শাখার সহ-সভাপতি ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার জামিল আহমদ চৌধুরী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকের মুখ্য আলোচক ছিলেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগ-এর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন (বাপা), সিলেট শাখার সহ-সভাপতি ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ নাজিয়া চৌধুরী। শুরুতেই আলোচ্য বিষয়ে বাপার পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন (বাপা), সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম।
বাপা’র পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন শহর সিলেট। ইতিহাসবিদদের মতে কমপক্ষে হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে এ শহরের। ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে ২০০১ সালে যাত্রা শুরু করা সিলেট সিটি কর্পোরেশন-এর আয়তন নিঃসন্দেহে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখানকার নগরায়ন দ্রুত বেড়ে চলেছে। ১৯৭৪ সালে জনসংখ্যার দিক দিয়ে সিলেট সারা দেশের শহরগুলোর মধ্যে ১৩তম স্থানে থাকলেও বর্তমানে আছে পঞ্চম স্থানে। কিন্তু নগরী সম্প্রসারিত হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। প্রবাসী অধ্যুষিত এই সিলেটে দেশের ধনাঢ্য নাগরিকদের আধিক্য থাকলেও বিনোদনের জন্য পার্ক-উদ্যান ও খেলার মাঠের রয়েছে অপর্যাপ্ততা। নানান নাগরিক সমস্যার মধ্যেও চলমান সময়ে পার্ক-উদ্যান ও খেলার মাঠের চাহিদা সর্বমহল গুরুত্বের সাথে অনুভব করছেন। যার ফলশ্র“তিতে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে আবুল মাল আব্দুল মুহিত নির্বাচনী ইশতেহারে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার শরতলীতে স্থানান্তর করে উক্ত স্থানে একটি উন্মুক্ত উদ্যান উপহার দেয়ার ঘোষণা প্রদান করেন।
গোলটেবিল বৈঠকের মুখ্য আলোচক সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগ-এর সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বাপা’র পর্যবেক্ষণ ও উৎকন্ঠার বিষয় নিয়ে আলোচনাকালে বলেন, সিলেট কেন্দ্রিয় কারাগার স্থানান্তর প্রক্রিয়া অত্যন্ত দ্রুত শুরু হবে । এ নিয়ে আশংকার কিছু নেই। কিন্তু স্থানান্তরিত কারাগারের জায়গায় মাননীয় অর্থমন্ত্রীর প্রতিশ্র“ত উদ্যান স্থাপনের বিষয়ে এখনো প্রকল্প প্রণয়ন হয়নি। এ অবস্থায় উদ্যান উদ্যোগ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সাথে বাপা’র নেতৃত্বে দেখা করতে পারি। বদর উদ্দিন আহমদ কামরান আরো বলেন, সিলেট জেলা কারাগারের সাথে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িত আছে। ১৯৬৬ সালের প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করার পর জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি দেশের বিভিন্নস্থানে সফর শুরু করেন। ওই সময়ে তিনি সিলেট সফরে এলে তৎকালীন সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রাখে। কারাগারের যে কক্ষটিতে বঙ্গবন্ধুকে রাখা হয়েছিল সেই কক্ষটির নামকরণ করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম’। এই কক্ষটি বর্তমানে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানেই বসে বইপত্র পড়েন কারাবন্দিরা। তবে কক্ষটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম’ হলেও এখানে বঙ্গবন্ধুর কোনও স্মতিচিহ্ন বা ইতিহাস কিছুই রাখা নেই।
তিনি আরো বলেন, দুঃখের সাথে বলতে হয় সিলেটে বঙ্গবন্ধুর নামে কোন কিছুই আমরা নির্মাণ করতে পারিনি। তাই বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জড়িত এই কারাগার কক্ষটিকে মিউজিয়াম রেখে প্রস্তাবিত স্বপ্নের সেই উদ্যানকে বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা যেতে পারে ।
গোলটেবিলে বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে আরো মতামত ব্যক্ত করেন ব্ল¬াস্ট সিলেটের কো-অর্ডিনেটর ইরফনুজ্জামান চৌধুরী, সুজনের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ভবতোষ রায় বর্মণ, সাম্যবাদী দল সিলেট শাখার সম্পাদক ধীরেন সিংহ, সিলেট জেলা বারের সাধারন সম্পাদক মো. আব্দুল কুদ্দুস, সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মুকির হোসেন চৌধুরী, সিলেট জেলা পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ শাহনুর, নাগরিক মৈত্রী আহবায়ক সমর বিজয় সী শেখর, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ মিশু, ইমজা সিলেটের সভাপতি আশরাফুল কবীর, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. ফয়জুল আনোয়ার, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সুজাত আলী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট বন ও পরিবেশ কমিটির সদস্য মো. নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য গোলাম সোবহান চৌধুরী দিপন, দৈনিক সিলেট মিররের বার্তা সম্পাদক মুক্তাদির আহমদ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির সহকারি প্রক্টর আব্বাস উদ্দিন, লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাহের সহযোগী অধ্যাপক রাজন দাশ, জাগো নিউজের সিলেট প্রতিনিধি ও বাপার যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি সিলেট শাখার চেয়ারম্যান এনামুল কুদ্দুছ চৌধুরী প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি