কমলগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে এক প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার অভিযোগে কলেজ ছাত্রলীগ নেতাকে পুলিশ আটক করে। আটকের প্রতিবাদে কমলগঞ্জ উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল করে রাস্তা অবরোধ করে। এতে ক্লাস বর্জন করে সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যোগদান করে। পরে প্রশাসনসহ আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের বৈঠকের পর আটক ছাত্রনেতা মুক্তি পান। বুধবার সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীরা শমসেরনগর-শ্রীমঙ্গল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
জানা যায়, গত ৪ আগষ্ট নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের নামে কমলগঞ্জ কলেজে ছাত্রদলের কর্মীরা একত্রিত হবার চেষ্টা করে। তখন ছাত্রলীগ ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দিয়ে কলেজে শো ডাউন করে। শো ডাউনে কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী মিসকাত মাহদীকে যোগ দিতে কলেজ ছাত্রলীগের সিনিয়র নেতারা আহবান করেন। মাহদী নিজের গার্ল ফ্রেন্ডকে সময় দিচ্ছে বিধায় শো ডাউনে আসতে পারবে না বলে নেতাদের উত্তর দেয়। এতে উত্তেজিত ছাত্রলীগ কর্মীরা মাহদীকে চড় মারার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় মাহদীর বাবা আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও কলেজ গভর্নিং বডির সদস্য ফজলুল হক বাদশা বাদী হয়ে গত ৭ আগষ্ট মঙ্গলবার কমলগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই দিন দিবাগত রাত ২ টার দিকে কমলগঞ্জ থানার এস আই চম্পক দাম এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ হোসেনকে তার জালালীয়াস্থ বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে আটক করে থানায় নিয়ে যান। সকালে কমলগঞ্জ কলেজের শিক্ষার্থীরা সাজ্জাদ হোসেন এর আটকের খবর জেনে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বুধবার সকাল ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা কমলগঞ্জ কলেজের সামনে শমসেরনগর-শ্রীমঙ্গল সড়ক অবরোধ করে সাজ্জাদের মুক্তির দাবিতে উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে আন্দোলনকারীরা উপজেলা চৌমুহনায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভ চলাকালীন সময় কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগ যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দেক আলী, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র উপজেলা যুবলীগ আহবায়ক জুয়েল আহমেদ, কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম বিক্ষোভস্থলে এসে আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলে সাজ্জাদের মুক্তি দেয়া হবে বলে আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে। দুপুরে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নতুন হল রুমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হক, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মোকতাদির হোসেন পিপিএম, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এম, মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক, উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান সিদ্দেক আলী, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমেদ, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রাহাত ইমতিয়াজ রিপুল, সাধারণ সম্পাদক সাকের আলী সজিব, অভিযোগকারী ফজলুল হক বাদশা, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ মো: হেলাল উদ্দিন, সাবেক সভাপতি মো: সানোয়ার হোসেনসহ আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাদের উপস্থিতিতে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক চলাকালীন আটক সাজ্জাদ হোসেনকে বৈঠক স্থলে নিয়ে আসে পুলিশ। বৈঠকে ৪ আগস্ট সংগঠিত বিষয়টি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা হলে সাজ্জাদ হোসেন মুক্তি পান।
কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সম্পাদক সাকের আলী সজিব বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ সাজ্জাদকে আটক করায় সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগ প্রতিবাদ করেছে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দ বসে বিষয়টি আপোসে নিষ্পত্তি করায় সাজ্জাদকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এম, মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক বলেন, বিক্ষোভের বিষয়টি দুঃখজনক। আমি ঘটনার খবর পাওয়ার সাখে সাথে প্রশাসন ও দলীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেছি। পরে নেতাকর্মীসহ প্রশাসনের উপস্থিতিতে বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধান করা হয়েছে।