কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা প্রতিরোধী টিকার দু’ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান কমানো যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া ‘বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের বিচারক (বেতন ও সুবিধাদি) আইন, ২০২১’ এবং ‘বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের বিচারক (ভ্রমণ ও ভাতা) আইন, ২০২১’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা। সোমবার মন্ত্রী সভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, শিল্প কলকারখানায় যে শ্রমিকরা কাজ করে তাদের বিষয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে। শুরু থেকেই আমরা শিল্প কলকারখানায় উৎপাদন, পণ্যের সরবরাহ কখনওই বন্ধ করিনি। এই কয়েকটি (ঈদের পর বিধিনিষেধ) দিন ছাড়া। সেজন্য এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন আমাদের মন্ত্রণালয় একটা চুক্তির মতো করেও ফেলেছে, ৬ কোটি ভ্যাকসিন পাবে সিনোফার্ম থেকে। টিকা পাওয়া গেলেই দ্রুত কিভাবে শ্রমিকদের আলাদা কর্মসূচীর আওতায় এনে দিয়ে দেয়া যায় সেই বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং তিনি এটি দেখবেন বলে জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন শুধু শ্রমিকরা নয়, তাদের পরিবারসহ টিকা দিতে হবে।
খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শুধু তাই নয়, আমরা যে এক মাসের ব্যবধানে দুটি ডোজ দিচ্ছি। অনেক দেশে দেখা যাচ্ছে আরও কম সময়ে দ্বিতীয় ডোজ দিচ্ছে, সেই বিষয়টিও বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিশেষ নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন। এটা করা যায় কিনা তা দেখতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এটা ‘টেকনিক্যাল’ বিষয়, আপনি-আমি তো জোর করে কিছু বলতে পারব না। অনেক দেশে সময়ের ব্যবধানটা কমিয়ে নিয়ে এসেছে। বলা হচ্ছে সেক্ষেত্রে একটা মানুষের নিরাপত্তাটা বেশি হয়ে যাবে। ‘টেকনিক্যাল’ বিষয়টি দেখে কম সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া যায় কিনা তা দেখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাদের এখন দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দ্বিতীয় ডোজের সময়টা একটু কমিয়ে দেয়া যায় কিনা। মন্ত্রী বলেন, এখন আমরা একমাসে দিচ্ছি। একমাসের পরিবর্তে আমরা ১৫ বা ২০ দিন করে দিতে পারি কিনা, এ বিষয়টি আমাদের দেখতে বলেছেন। যদি সম্ভব হয়, আমরা সেটা করব।
সুপ্রীমকোর্টের বিচারক (বেতন এবং সুবিধাদি) আইন : ‘বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের বিচারক (বেতন এবং সুবিধাদি) আইন, ২০২১’-এর খসড়াও নীতিগত এবং চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালে কোর্টের রায় ছিল, সামরিক শাসনের যে অধ্যাদেশগুলো, সেগুলো আইনে পরিণত করা, এটা বাস্তবে সেটাই। এটাকে ইংরেজী থেকে বাংলায় নিয়ে আসা হয়েছে। সেজন্য এটা মন্ত্রীসভা একেবারে অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে। এরপর সংসদে যাবে।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, আগের অধ্যাদেশকে বাংলায় রূপান্তর করে নতুন আইন করা হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয়ের সার্কুলারের আলোকে সুপ্রীমকোর্টের বিচারকদের ‘কুক ও সিকিউরিটি’ ভাতা হিসেবে মাসে ১৬ হাজার টাকা করে দেয়া হতো। এটিকে প্রস্তাবিত আইনে যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া আইন মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সার্কুলারের আলোকে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের নিয়ামক ভাতা হিসেবে ১২ হাজার টাকা করে দেয়া হতো। এখন এটিকে প্রস্তাবিত আইনে যুক্ত করে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের জন্য ৫ হাজার টাকা, আপীল বিভাগের বিচারপতিদের জন্য ৮ হাজার টাকা এবং প্রধান বিচারপতির জন্য ২৫ হাজার টাকা নিয়ামত ভাতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আগে এগুলো সার্কুলার দিয়ে পেতেন, এখন আইনে যুক্ত করা হয়েছে।
বিচারপতিদের ভ্রমণভাতা বাড়ছে : বিচারপতিদের ভ্রমণ ভাতা বাড়ছে। এজন্য ‘বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের বিচারক (ভ্রমণভাতা) আইন, ২০২১’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রীসভা। সোমবার (২৩ আগষ্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রীপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রেস ব্রিফিংয়ে এই অনুমোদনের কথা জানান। তিনি বলেন, এটাও ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশ ছিল। এটাতেও নতুন কোন বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, আগে যেটা ছিল সে অনুযায়ীই ১০টি ধারা আছে। এটাকেও পুরো অনুমোদন দেয়া হয়েছে। শুধু ছোটখাটো সংশোধন হয়েছে। যেমন আগে দৈনিক ভাতা ৫০০ বা সাড়ে ৫০০ টাকা ছিল, সেখানে এক হাজার ৪০০ টাকা করা হয়েছে। গাড়ি ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে এক টাকার কিছু বেশি ছিল সেটাকে ৩ টাকা করা হয়েছে।
আইনে পরিণত হচ্ছে বার কাউন্সিল অধ্যাদেশ : এছাড়া বার কাউন্সিল অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করতে একটি আইনের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা। ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স এ্যান্ড বার কাউন্সিল (সংশোধন) আইন, ২০২১’-এর খসড়া আইনের অনুমোদনের বিষয়ে মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, কিছুদিন আগে বার কাউন্সিলের অধ্যাদেশ করা হয়েছিল, কারণ যদি কোন কারণে (বার কাউন্সিলের মেয়াদ) সময় পার হয়ে যায় তখন কি করবে, সেটার কোন বিধিবিধান ছিল না। সেজন্য বার কাউন্সিল অধ্যাদেশ হিসেবে এটি নিয়ে আসা হয়েছিল।
খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, সংসদ শুরু হলে অধ্যাদেশ এক মাসের মধ্যে আইনে পরিণত করতে হয়, নইলে সেটা বাদ হয়ে যায়। সেজন্য তারা এটা নিয়ে এসেছে। সেটা মন্ত্রীসভা অনুমোদন করেছে। আসন্ন সংসদ অধিবেশন চলাকালীন এটাকে অনুমোদন করে ফেলতে হবে, নইলে বাতিল হয়ে যাবে। সেজন্য এটার ফাইনাল অনুমোদন দিয়ে দেয়া হয়েছে।