আধুনিক মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা

29

বাংলাদেশ ছোট্ট একটি ভূখণ্ড, অথচ রয়েছে বিপুল জনসংখ্যা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, জনসংখ্যার ভারে দেশ আজ ন্যুব্জপ্রায়। বিপুল বেকারত্ব। ভাগ্যের অন্বেষণে কিংবা কাজের খোঁজে বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে তরুণরা ক্রমাগতভাবে দেশ ছাড়ছে। বিপজ্জনক যাত্রায় অনেকেই মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। তবু থামছে না দেশ ছাড়ার কাফেলা। বিদেশে গিয়েও অনেকের ঠাঁই হচ্ছে জেলখানায় কিংবা রাস্তার ধারে, বনবাদাড়ে। অথচ চিত্রটা ঠিক তার উল্টোও হতে পারত। যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে এই জনসংখ্যাকে যদি জনশক্তিতে রূপান্তর করা যেত, তাহলে এই জনসংখ্যাই হতে পারত বাংলাদেশের প্রধান সম্পদ, দেশের জন্য সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। দেশে যেমন তাদের কর্মসংস্থান হতো, বিদেশেও তারা সমাদরে গৃহীত হতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অত্যন্ত আন্তরিকভাবে সেই প্রত্যাশাই করেছেন। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের নতুন প্রজন্মকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ‘সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ ২০১৮’-এর আওতায় জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত সেরা মেধাবীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আবারও তিনি সেই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
বেকারত্বের এত উচ্চ হার সত্ত্বেও এখনো লাখ লাখ বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করছে। নিয়োগদাতা সংস্থাগুলো বাধ্য হচ্ছে বিদেশিদের নিয়োগ দিতে। সমপর্যায়ের দক্ষতা তৈরি করা গেলে অবশ্যই তারা বাংলাদেশি তরুণদেরই নিয়োগ দিত। বর্তমান বিশ্ব আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর। সেখানে শুধু কায়িক শ্রমের সুযোগ নেই বললেই চলে। অনেক দেশেই প্রযুক্তির নানা দিকে দক্ষ জনবলের সংকট রয়েছে। কিন্তু আমরা সেসব স্থানে প্রতিযোগিতা করতে পারছি না। কারণ আমাদের তরুণরা এখনো ব্যাপক হারে সেসব প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত বা দক্ষ নয়। চেষ্টা চলছে। দক্ষ জনশক্তির পরিমাণও বাড়ছে। কিন্তু যে হারে বাড়ার প্রয়োজন ছিল, তা হচ্ছে না। পাশাপাশি প্রদত্ত শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। উন্নত দেশের শিক্ষার মান বিচারে আমাদের শিক্ষা এখনো অনেক পিছিয়ে আছে বলেই মনে করেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। ফলে উচ্চতর শিক্ষার সনদ নিয়েও আমাদের শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন, জ্ঞান-বিজ্ঞানভিত্তিক একটি জাতি আমরা গড়ে তুলতে চাই। সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি।’ প্রধানমন্ত্রীর উক্তির আন্তরিকতায় কারো কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তা বাস্তবায়নপ্রক্রিয়ার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শিক্ষার আমলানির্ভর উন্নয়ন প্রচেষ্টা ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যে চিত্র অতীতে দেখা গেছে, তারও অনেক সমালোচনা আছে। শিক্ষানীতির আলোকে শিক্ষাবিদদের তত্ত্বাবধানে ধারাবাহিক ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে বলেই মনে করেন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হোক। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নতুন প্রজন্ম সঠিক পথে এগিয়ে যাক। যেকোনো উন্নত দেশের শিক্ষার সঙ্গে আমাদের শিক্ষা সমতুল্য হোক।