রপ্তানি প্রবৃদ্ধি জরুরী

50

 

রপ্তানি খাতের আয়ের প্রবৃদ্ধিতে ধারাবাহিকতা রয়েছে। চলতি অর্থবছরেও (২০১৭-১৮) দেশের রপ্তানি আয়ের ধারা আশাব্যঞ্জক। এগারো মাসের (জুলাই ২০১৭-মে ২০১৮) পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা (চার হাজার ১৪৮ কোটি ডলার) অর্জন সম্ভব হবে। এর ভিত্তিতেই রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আগামী অর্থবছরের (২০১৮-১৯) জন্য চার হাজার ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সংশ্লিষ্ট প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। গত বছর এ খাত বড় ধাক্কা খেলেও এ বছর সামলে উঠেছে বলে বিজিএমইএর দাবি। গত ১১ মাসে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। তারা আশা করছে, আগামী অর্থবছরেও ইপিবি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আয় করা সম্ভব হবে। এ জন্য দরকার সরকারের নীতি-সহায়তা। তাদের পরামর্শ, পোশাক খাতের করপোরেট কর কয়েক বছরের জন্য স্থগিত করা হোক।
জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য চার হাজার ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে ইপিবি। পণ্যদ্রব্য রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার ৪০ কোটি ডলার এবং সেবা রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৬০ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রা চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫২ কোটি ডলার বেশি। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ইপিবি। পোশাক খাতের প্রতিনিধিরা লক্ষ্যমাত্রাকে অর্জনযোগ্য মনে করছেন, তাঁরা বরং তাঁদের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আয় করার কথা বলছেন। তবে সার্বিকভাবে আশাবাদী হলেও ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা একটি শঙ্কার কথা বলেছেন। আগামী অর্থবছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে। এ নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে তাঁদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে।
তৈরি পোশাকের বাইরে বেশ কিছু পণ্যের রপ্তানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এগুলো হলো চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, কৃষিজাত পণ্য ও চামড়ার জুতা, প্রকৌশল, ওষুধ, ফার্নিচার ইত্যাদি। তবে বিভিন্ন কারণে হিমায়িত ও জ্যান্ত মাছ রপ্তানিতে ভাটার শঙ্কা রয়েছে। ইপিবির প্রস্তাবে কৃষিতে ৮.৭৩ শতাংশ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ৬.৭০ শতাংশ, চামড়ার জুতায় ১১.২৫ শতাংশ, পাটজাত পণ্যে ৮.৩৮ শতাংশ ও তৈরি পোশাকে ৮.৬৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে। সরকারের প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর কার্যক্রম শুরু হলে রপ্তানি আয় পাঁচ হাজার কোটি (৫০ বিলিয়ন) ডলারে উন্নীত করা সম্ভব হবে বলে ইপিবি মনে করে।
রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা জাতীয় অর্থনীতির জন্য জরুরি। এ খাতে আয় বাড়ানোর আরো সুযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা সেই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য সরকারের কাছে নীতিগত ও কৌশলগত সহায়তা চায়। সেসব নিশ্চিত করা দরকার। আবার ‘রেয়াত দাবির বিষয়ে’ সতর্ক থাকাও আবশ্যক। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি রপ্তানির প্রবৃদ্ধিতে বাধা না হোক এটাই কাম্য।