কাজিরবাজার ডেস্ক :
শেষ হয়ে এসেছে মাস ব্যাপী সিয়াম সাধনা। আজ চাঁদ দেখা গেলেই কাল উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ইতোমধ্যে ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা সারাদেশ। প্রাণের টানে প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে ঘরের পানে ছুটছে সবাই। ঈদ উদযাপনের সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে দেশবাসী। ঘরে ঘরে বইছে ঈদের খুশির বন্যা। এখন অপেক্ষা শুধু ঈদের। এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাণী প্রদান করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ। বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এদিকে ঢাকাসহ সারা দেশে ঈদ জামাতের পুরো প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। এবার দেশের প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর হাইকোর্ট সংলগ্ন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিচারপতি, কূটনীতিক, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এই জামাতে শরিক হবেন। সকাল সাড়ে ৮টায় দেশের প্রধান ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে এবারে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে।
এদিকে ঈদুল ফিতর বা শাওয়ালের চাঁদ দেখতে আজ সন্ধ্যায় বৈঠকে বসছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। আজকে চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে ঈদুল ফিতর উদ্যাপনের চূড়ান্ত ঘোষণা দিবেন কমিটি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭.১৫ মিনিটে (বাদ মাগরিব) ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন ধর্মমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। বাংলাদেশ এ্যাস্ট্রোন-মিক্যাল সোসাইটি জানিয়েছে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। তাদের এই হিসাব অনুযায়ী আগামীকাল শনিবারই অনুষ্ঠিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। তারা বলছেন, গত ১৩ জুন বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৪৩ মিনিটে বর্তমান চাঁদের অমাবস্যা কলা পূর্ণ করে নতুন চাঁদের জন্ম হয়েছে। চাঁদটি পরদিন ১৪ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৬ মিনিটে সূর্যাস্তের সময় দিগন্ত রেখা হতে ৬ ডিগ্রী উচ্চতায় ২৮৯ ডিগ্রী দিগন্তে অবস্থান করে, ৩৪ মিনিট দেশের আকাশে অবস্থান শেষে সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে অস্ত যায়। এদিন চাঁদের শতকরা ১ ভাগ অংশ আলোকিত থাকায় দেশের আকাশে চাঁদ দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না।
নতুন জন্ম নেয়া চাঁদটি আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে সূর্যাস্তের সময় দিগন্ত রেখা থেকে ১৯ ডিগ্রী উপরে ২৮৪ ডিগ্রী দিগন্তে অবস্থান করবে। প্রায় ১ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট দেশের আকাশে অবস্থান শেষে রাত ৮টা ২৩ মিনিটে ২৯২ ডিগ্রী দিগন্তে অস্ত যাবে। এই সময় চাঁদের ৪% অংশ আলোকিত থাকবে। দেশের আকাশ মেঘমুক্ত এবং পরিষ্কার থাকলে একে বেশ স্পষ্টভাবেই দেখা যাবে। এই সন্ধ্যায় উদিত চাঁদের বয়স হবে ৪১ ঘণ্টা ৪ মিনিট এবং সবচেয়ে ভালভাবে দেখা যাবে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে। সুতরাং ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী আজ সন্ধ্যায় নতুন চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামীকাল ১৬ জুন শনিবার থেকে আরবি ১৪৩৯ হিজরির ‘শাওয়াল’ মাসের গণনা শুরু হবে। এদিনই পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হবে।
ঈদুল ফিতর (আরবি ঈদ-উল-ফিতর অর্থ রোজা ভাঙার দিবস) ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দুু’টি সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি। ধর্মীয় পরিভাষায় ঈদু ফিতরকে পুরস্কার দিবস হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর বিশ্বের মুসলমানেরা এই দিনটি ধর্মীয় কর্তব্যপালনসহ খুব আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করে থাকে। ধনী গরিব, ছোট বড়, আশরাফ-আতরাফ সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করায় ঈদ। সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে বন্ধনেও আবদ্ধ করে। হিজরি বর্ষপঞ্জী অনুসারে রমজান মাসের শেষে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপন পালন করা হয়। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রমজানের সমাপ্তিতে শাওয়ালের মাসের গণনা শুরু হয়। ঈদের আগের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় জায়জা (বা পুরস্কার রজনী) এবং চলতি ভাষায় চাঁদ রাত (বা চান রাইত) বলে অভিহিত করা হয়। ঈদের চাঁদ স্বচক্ষে দেখে তবেই ঈদের ঘোষণা দেয়া ইসলামী বিধান। তবে বর্তমানে অনেক দেশে গাণিতিক হিসেবে ঈদের দিন নির্ধারিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ঈদের দিন নির্ধারিত হয় দেশের কোথাও না-কোথাও চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে। ইসলামী নিয়ম অনুসারে ঈদের পূর্বে পুরো রমজান মাস রোজা রাখা হলেও ঈদের দিনে রোজা রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম।
এক বছর পরে মুসলমানদের ঘরে আসে ঈদ। ঈদের আনন্দ থেকে কেউ বঞ্চিত হতে চায় না। তাই কষ্ট করে হলেও প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রাজধানী ছেড়ে চলে গেছে লাখ লাখ মানুষ। বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশে ঈদ-উল-ফিতরই হলো বৃহত্তম বার্ষিক উৎসব। তাই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারা রমজান মাস ধরেই চলেছে কেনাকাটা। অধিকাংশ পরিবারে ঈদের সময়েই নতুন পোশাক কেনা হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এখন সবাই রয়েছে বাড়ির পথে। ঈদে প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে গত ১০ জুন থেকে শুরু হয়েছে ঘরে ফেরার পালা।