কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাহে রমজানের আজ ২৮তম দিবস। ক্রমেই শেষ হয়ে আসছে মাসটির আয়ুষ্কাল। আর ২/১ দিনের পরই রোজা ভাঙা বা রোজা সমাপনী উৎসব ঈদ-উল ফিতর। ঈদের আনন্দ অত্যাসন্ন হলেও মুমিন মন বিষাদে ভরা, করুন সানাই বাজছে তাদের হৃদয়তন্ত্রীতে রহমত মাগফেরাত ও নাজাতের মৌসুমটি হারাতে হচ্ছে বলে। এ সময় সাওয়াব ক্ষমা ও নাজাত প্রাপ্তির জন্য তারা যে সব কাজ করে তার মধ্যে আছে পবিত্র শবে কদর, জুমাতুল বিদা উদযাপন, পবিত্র ঈদের হুকুম আহকাম পালন এবং সাদাকা ফিতরা প্রদান ইত্যাদি। সাদকাতুল ফিতর বা ফিতরা দান রমজান মাসের একটি অত্যাবশ্যকীয় ইবাদত ও দায়িত্ব। রোজা ও নামাজ মুসলমানদের দৈহিক ইবাদতের অন্তর্গত, হজ হলো দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত। আর যাকাত, ফিৎরা দান হলো আর্থিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। রমজানের পূর্ণতা ও সিয়াম সাধনায় তাওফীক দানের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আল্লাহর নামে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়। এ মাসের ইবাদত বন্দেগিতে আমাদের অনিচ্ছাকৃত যেসব ভুলত্রুটি হয়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্য কাফ্ফারাস্বরূপ শরিয়তে ফিৎরা ওয়াজিব হয়েছে। এটি অবহেলার কোন সুযোগ নেই।
পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন সকালে যাদের কাছে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমপরিমাণ টাকা অথবা সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সমপরিমাণ টাকা কিম্বা অনাবশ্যক আসবাবপত্র থাকে এবং উক্ত ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত না হয়, তার ওপর ফিৎরা দান ওয়াজিব হয়ে পড়ে। নিজের এবং নাবালক সন্তানদের ফিৎরা আদায় করতে হয়। মিসকিন, ঋণী ব্যক্তি কিম্বা মুসাফিরকে ফিৎরা দেয়া যায়। গরিব আত্মীয়দের মাঝে বণ্টন করা উত্তম। একজন প্রার্থীকে কয়েকটি ফিৎরা কিম্বা একজনের ফিৎরা কয়েকজন মিসকিনকে দেয়া দুরস্ত আছে। তবে এ ক্ষেত্রে কোন অভাবী প্রার্থীর বিশেষ উপকার ও কল্যাণের দিকটি বিবেচনায় আনা উচিত। সদকায়ে ফিতর ঈদের নামাজের পূর্বেই আদায় করতে হয়। অবশ্য কেউ যদি এটি ঈদের দিন আদায় করতে অপরাগ হয় পরে দিলেও আদায় হবে। আবার কেউ যদি ঈদের দিনের পূর্বেই এটি আদায় করে ঝামেলামুক্ত হতে চায় তাও দুরস্ত আছে। আসলে রমজানের শুরুতে এবং শেষ পর্যায়ে সামর্থবানদের উচিত দান-সদকা, যাকাত ফিৎরা প্রদানে অত্যধিক উদার ও রহমদিল হওয়া। এ সময় ধনীদের হাতে বিভিন্ন খাত হতে পয়সা আসে, পক্ষান্তরে অভাবীদের অভাবের মাত্রা বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতেই ধনিক শ্রেণীর উদ্দেশ্যে নজরুল বলেছিলেন :
বুক খালি করে আপনারে আজ দাও যাকাত /
করো না হিসাবী আজ হিসাবের কর্ণপাত /
একদিন করো ভুল হিসাব..।’
সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) মদিনার সেই বরকতময় সমাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে খুবই সংক্ষিপ্ত অথচ অর্থবহ একটি কথা বলেছেন; তিনি বলেন এমন একটি জামানা দেখেছি, যখন কোন ব্যক্তি নিজেকে আপন সম্পদের ওপর অন্য মুসলমান ভাইয়ের চেয়ে বেশি হকদার মনে করতো না।’ -(বুখারী শরিফ)।
তাই আসুন, আমরা যাকাত ফিতরাকে নিজের সম্পদ মনে করে আগলে না রাখি, তা অন্যের সম্পদ, গরিব দুঃখীদের হক। আমরা আমানতদার মাত্র। আমরা যেন যথাসময়ে যথোপযুক্ত পাত্রকে আমাদের পাপ মোচনের নিয়তে তা হস্তান্তর করি। আল্লাহ আমাদের সম্মতি দান করুন, সুস্থতা দান করুন।